আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবসের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা
সারা বিশ্বে ৩ জুলাই আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবস। প্লাস্টিকের ভয়াবহতা চরম ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত হয়ে আমরা যেন প্লাস্টিকের ব্যাগ ও অন্যান্য প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকি সেজন্যই এই দিবস পালন। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না দিনকে দিন আমরা যেন প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিসপত্র ব্যবহারে এক প্রকার আসক্ত হয়ে গেছি। প্লাস্টিক আমাদের জীবনকে গ্রাস করে নিয়েছে। প্লাস্টিকের বোতলে জল খাওয়া থেকে শুরু করে হাটে বাজারে দোকানে চা খাওয়া হোটেল রেস্টুরেন্ট থেকে প্লাস্টিকের কৌটোতে খাবার এনে খাওয়া পাশাপাশি জিনিসপত্র কিনতে গেলেও প্লাস্টিকের ব্যাগ ভর্তি করে বাড়ি নিয়ে আসছি। প্লাস্টিক যেন প্রতিমুহূর্তে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি আমাদের জীবনটাকেও বিপন্ন করে তুলছে। সেই চরম ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার্য জিনিসপত্র থেকে আমাদের জীবনকে সুরক্ষিত ও পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতেই সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবসের সূচনা। এবারে আসা যাক এই দিবস পালনের নেপথ্যের ইতিহাসে। ২০০৯ সালে পশ্চিম ইউরোপে পালন করা শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবস। এটি একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ, যার উদ্দেশ্য হল প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করা। প্লাস্টিক এবং ডিসপোজেবল বহনযোগ্য সরঞ্জাম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পালন করা হয় এই দিনটি। আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবসের লক্ষ্য হল প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে কাগজ বা কাপড়ের ব্যাগ সহ পরিবেশ বান্ধব জিনিস ব্যবহার করা প্রচার করা, যাতে প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হয়।পরিবেশ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে সব মানুষের। সকলের প্রিয় এই পরিবেশের পক্ষ বিষ হচ্ছে প্লাস্টিক। প্লাস্টিক ব্যাগ থেকে হওয়া দূষণ নিয়ে চিন্তিত বিশ্বের সমস্ত পরিবেশ বিজ্ঞানীও । প্লাস্টিকের মূল সমস্যা হল, প্লাস্টিক-কে সহজে ধ্বংস করা যায় না। প্লাস্টিক-কে যখন পোড়ানো হয় তখন সেটি বিষাক্ত ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। এই ধোঁয়া মানুষের শরীরের পক্ষে খুব ক্ষতিকত। প্লাস্টিকের বর্জ্য পদার্থ অনেক সময় জলে ফেলে দেওয়া হয়। জলজ সমস্ত প্রাণীর প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেই প্লাস্টিক । ক্ষতি হয় জলের গাছপালারও।সামগ্রিক ভাবে প্লাস্টিকে দম আটকে আসে পৃথিবীর। সবদিকথেকেই প্লাস্টিক একটি সাংঘাতিক ক্ষতিকর বস্তু। প্লাস্টিক রসায়নিকভাবে বেশ কিছু যৌগের পলিমার রূপ। এগুলির ফলে মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়।পশুপাখি বা মাছ অনেক সময়েই সময়েই খাবার ভেবে প্লাস্টিক প্যাকেট খেয়ে ফেলে। প্রতিবছর প্লাস্টিকের কারণে মৃত্যু হয় লক্ষ লক্ষ প্রাণীর। আবার বিভিন্ন প্রাণী থেকে তাদের থেকে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে প্লাস্টিকের বিষ।
প্লাস্টিক দূষণের কবলে শুধু আমাদের দেশ ভারতবর্ষ নয়, সমুদ্র এমনকি বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ এভারেস্টেও পৌঁছে গেছে প্লাস্টিক বর্জ্য। একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ গড়ে সর্বোচ্চ ১২ মিনিট ব্যবহৃত হয়। অথচ এটা পচতে সময় লাগে প্রায় ৯৪০ বছর। গত ৫০ বছরে পৃথিবীতে মাথাপিছু এক টনের বেশি প্লাস্টিকের দ্রব্য উৎপাদন করা হয়েছে। এসব পচনরোধী প্লাস্টিক বর্জ্যের শতকরা ১০ ভাগ পুড়িয়ে ধ্বংস করা হলেও বাকি ৯০ শতাংশের বেশি বিশ্ব পরিবেশকে নানাভাবে বিপন্ন করে তুলেছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিক পচনশীল নয়। তাই মাটিতেই থেকে যায়। এমনকি, প্লাস্টিকের ব্যাগ, পাত্র-সহ নানা উপকরণ হাজার বছর ধরেও মাটিতে জমে থাকতে পারে। যা মাটি ও জলদূষণের অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, শুধু মাটি ও জলের দূষণই নয়, গাছের পক্ষেও ক্ষতিকারক প্লাস্টিক বর্জ্য।সারা দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ প্লাস্টিক-বর্জ্য উৎপন্ন হয়! তার ৪০ শতাংশ প্লাস্টিক অসংগৃহীত অবস্থায় থাকে।প্লাস্টিককে সহজে ধ্বংস করা যায় না। যদি প্লাস্টিককে পোড়ানো হয়, তবে তা বিষাক্ত ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। আর এই ধোঁয়া মানবশরীরের পক্ষে অত্যন্ত অস্বস্থিকর ও বিপজ্জনক। প্লাস্টিকের বর্জ্য পদার্থ যদি জলে ফেলা হয় তাহলে তা জলক প্রানীর প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সবদিক থেকেই প্লাস্টিক একটি সাংঘাতিক বিপদজ্জনক বস্তু বলে গণ্য করা হয়।এসব ক্ষতিকর পচনরোধী বর্জ্য পরিবেশে ৪০০ থেকে ১ হাজার বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং নানা রকম মাইক্রো বা ন্যানো কণা বা ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে পরিবেশে ও মানবস্বাস্থ্যে ভয়ংকর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পৃথিবীতে প্রতি বছর ৪৫ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ হচ্ছে। এ বর্জ্যের ৫১ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে এশিয়া মহাদেশে। মূলত এই প্লাস্টিক দূষণ কমাতে এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতেই এমন একটি দিন পালন করা হয়। প্রতি বছর ৩ জুলাই 'আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগমুক্ত দিবস' পালন হয়। পরিবেশ ও জীবের উপর প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলায় এই দিবস পালনের মূল লক্ষ্য।প্লাস্টিক ব্যাগের বিকল্প ব্যাগ আমরা ব্যবহার করতে পারি। যে বিকল্পগুলি আমাদের নাগালের মধ্যে সেগুলি হলঃ কাগজের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ এবং পাটের ব্যাগ। মুদির দোকানের জিনিসপত্র নেওয়ার সময় নিজের ব্যাগে কাগজের ঠোঙাতে নিন। প্লাস্টিক নেবেন না। দোকান থেকে কোন জিনিস প্লাস্টিকের প্যাকেটে বাড়ি নিয়ে এলে পরের দিন সেই প্লাস্টিক ফিরিয়ে দেওয়াই ভালো।পরিশেষে একটি কথা আসুন আমরা প্রত্যেকে আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবসে অঙ্গীকার করি প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি অন্যান্য প্লাস্টিক জাত দ্রব্য থেকেও আমরা বিরত থাকি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পরিবেশকে দূষণমুক্ত সজীব করে তুলতে সর্বোপরি পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে অবশ্যই প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকেও প্লাস্টিকের উৎপাদন কমাতে হবে এবং পুলিশ প্রশাসনকে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে নিরন্তর নজরদারি ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর দেরি নয় আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্লাস্টিক মুক্ত সমাজ দেশ ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে অঙ্গীকার করতে হবে। আসুন আমরা সকলে মিলে হাতে হাতে রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার না করে পরিবেশ বান্ধব জিনিসপত্র ব্যবহার করি। সময় এসেছে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে আমাদের জরুরী ও কার্যকরী কর্মসূচির যথার্থ বাস্তবায়নের।
-------------------
ঋণঃ বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও মুদ্রিত পত্রিকা।
===============================
প্রতিবেদকঃ পাভেল আমান- হরিহরপাড়া- মুর্শিদাবাদ
No comments:
Post a Comment