গ্রামের ভ্রষ্টতা
আবদুস সালাম
সামান্য যে জমিটুকু ছিল তার ধান কেটে বিক্রি করে বাবা ঋণ শোধ করতেন। কিছু টাকা বাঁচলে নতুন কাপড় চোপড় কেনা হতো। কিছুটা গম, তিসি, তিল, আলু-পেঁয়াজ, শাক-সবজিরও চাষ করা হতো। এসব আমরা নিজেরা খেতাম এবং প্রতিবেশীদেরও দিতাম।
গ্রামে ছিল খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির তৈরি একটি ছোট্ট মসজিদ। সেখানেই আমরা নামাজ পড়তে যেতাম। খেজুর পাতার তালাই পেতে আমরা নামাজে দাঁড়াতাম। প্রতি শুক্রবারে বেশি ভিড় হতো। কারও গাছের প্রথম ফল মসজিদে আসত। কারও নতুন ধানের ক্ষীর। সেদিন দুই হাত পেতে এসব শিরনি নিতাম।
গ্রামটি গরিব ছিল, কিন্তু মানুষগুলি কত সুখী ছিল আজ উপলব্ধি করতে পারছি। এখনো মনে হচ্ছে, শহরের গোলকধাঁধায় এবং ভ্রান্তির জৌলুসে মত্ত না হয়ে, বরং গ্রামেই সামান্য জমি-জিরেত নিয়ে চাষ করে উপায় করা অনেক ভালো ছিল। কেননা গ্রামে আমাদের চাহিদা সীমিত। শহরে বাস করে যে লোলুপতায় আমরা আক্রান্ত হয়ে চলেছি তাতে শুধু অতৃপ্তি এবং মানসিক কষ্টই বৃদ্ধি করে চলেছে। জীবনে নেমে এসেছে কৃত্রিমতা। অনৈতিক নানা ব্যভিচারে আমরা ডুবে যাচ্ছি। সেখানে ঈমান নেই। সুন্নাহ মোতাবেক জীবনযাপন নেই। আধুনিক প্রযুক্তির কাছে নিজেদের সমর্পণ করে দিচ্ছি। হৃদয় নামক যে মানবিক ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার নিয়ে এক সময় আমরা বড় হয়েছি, সেই হৃদয় এখন পাথর হয়ে গেছে। বরকতের ফেরেশতারা আর আমাদের কাছে আসে না। রহমতের কোনো সুসংবাদ আমরা আর পাই না। তাই আমাদের মনের মধ্যে চূড়ান্ত অস্থিরতা এবং শূন্যতা বিরাজ করে। আত্মীয়স্বজনদের কথা ভুলে যাই। তাদের সম্পর্কেও ভাটা পড়ে। এইভাবে স্বার্থপর হতে হতে, নির্বাসিত হতে হতে আমরা কোনো বিপন্নতার দিকেই এগিয়ে চলেছি। আজ অনেক গ্রামই আর গ্রাম নেই। শহরের মিশ্র কালচারে তারও চরিত্র ভ্রষ্ট হয়েছে। অতীত ঐতিহ্য স্মরণ করে হৃদয় মথিত আহ্বান আর কারও মুখেই শোনা যায় না। ঈদগাহ ময়দানে দাঁড়িয়ে ভাবতে ভাবতে অনেকক্ষণ ধরেই স্তব্ধ হয়ে গেছি। দুই চোখ বেয়ে পানি ঝরে পড়েছে নিজের অজান্তেই।
==================
আবদুস সালাম
প্রয়াস শ্রীকান্তবাটি মাদারল্যান্ড
রঘুনাথগঞ্জ
মুর্শিদাবাদ৭৪২২২৫
No comments:
Post a Comment