*সাধু সিদ্ধান্ত *
একদিন পড়ন্ত বিকেলে গাছের তলে বসে প্রশ্ন করেছিলাম,গাছ তুমি কার উপর দাঁড়িয়ে
আছো? নির্বাক গাছের পাতা একটু নড়ে বাতাস দিয়ে ক্লান্ত মস্তিষ্ককে শান্ত করে
ছিল,হৃদয়ের গহনে শীতল ধারায় গাছের ভূত ভবিষৎ ভেসে উঠেছিল। বাতাসের ছন্দে
শুনেছিলাম 'শিকড়', প্রশ্ন এসেছিল গাছ জানিস শিকড় জানিস না?আমি ভাবলাম দরুন
উত্তর। আমি নিজেকে ব্যর্থতার কার্পেটে মুড়ে রেখেছি বলে নিজেকেই অপমান করেছিলাম।
ও শিশু তুমি কোথা থেকে এসেছ? শিশু তোমার শিকড় আছে?মনে ভাবছো আমি কি
গাছ?যে শিকড় থাকবে!ওগো শিশু তুমি হয়েই যা পান করেছ তা মাতৃদুগ্ধ আর প্রথম যে
ভাষায় কথা বলেছ তা মাতৃভাষা। তুমি বাঙালি তাই তোমার মাতৃদুগ্ধ বাংলা।
শিশুর শিকড় চেনাতে বাংলা ভাষাকে বর্তমান রাজ্য সরকার
রাজ্যের প্রতিটি বিদ্যালয়ে আবশ্যিক করার কথা ঘোষণা করেছে। সাধু সাধু। এটি একটা
ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। আমাদের রাজ্যের ভাষা বাংলা,এখানে পড়ার ভাষা বাংলা, এখানে
থাকতে হলে বাংলাকে জানতে হবে,বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে জানতে হবে। এতো এক
অদ্ভুত তৃপ্ত কর সিদ্ধান্ত।
আমাদের বাংলাতে যারা আসেন তারা অনেকেই বাংলা জানেন,বোঝেন কিন্তু
বলেননা। আমরা উপযাজক তাদের অনুসরণ করি,তাদের ভাষায় কথা বলার চেষ্টাও করি। আসলে
আমরা অস্পৃশ্য,আমরা সকলের বাড়িতে খাব কিন্তু কেউই আমার বাড়িতে খাবেননা। আমরা
অন্যের ভাষা শিখব,বলব কিন্ত ওনারা বলবেননা। আমরা সকল ভাষাকে শ্রদ্ধা করি,সম্মান
দিই,আগ্রহ প্রকাশ করি, আন্তরিকতা দেখায় কিন্ত আন্তরিকতা পাইনি।
বর্তমান যুগ ফ্যাশনের যুগ। এই যুগে বাঙালি হয়েও বাংলাটা না বলতে
পারলে,বাংলা না শিখলে,বাংলায় কথা না বললে সেটি ফ্যাশন। ফ্যাশনের স্রোতে গা
ভাসাতে গিয়ে নিজের সংস্কৃতি,কৃষ্টি,সমাজ ও ঐতিহ্যকে গলা টিপে হত্যা করছি। বেনো
জল কত ক্ষতিকারক তা যার পুকুরে ঢোকে সেই জানে।
আসুন আমরা সরকারের সাধু সিদ্ধান্তকে
বাস্তবায়িত করে মনে তৃপ্তির স্বাদ আস্বাদন করি।
রবীন্দ্রনাথ,উপেন্দ্রকিশোর, অবনীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, সুকুমার, সুকান্ত
প্রমুখের পূণ্যভূমিকে পূর্ণ করে তুলি। মহামানবের সাগর তীরের ঢেউয়ে স্নাত হয়ে
পবিত্র সংস্কৃতির আঙিনায় বিচরণ করি। ধনধান্যে পুষ্পে ভরার দেশে সুবাসে মাতোয়ারা
হয়ে জীবনযাপন করি।
প্রশান্ত কুমার ঘোষ
রামজীবনপুর
পশ্চিম মেদিনীপুর
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন