জননী যন্ত্রণা
ততবারই তোমায় যন্ত্রণা দিয়েছি
যতবার মা হয়েছ।
কিছুই বুঝতে পারিনি,বুঝিনি,বা হয়ত
বোঝার চেষ্টাই করিনি।
যখন প্রসব করেছিলে আমায়
কি অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করেছ তুমি!
তা সব সয়েও মুখে হাসি তোমার অম্লান
যেন আমি হয়ে এসেছি তোমার তথাগত।
পাঠশালার গন্ডী আর তার পরের দুষ্টুমিতে
সয়েছ অনেক অপমান,
করেছ মায়ের কর্তব্য অক্ষরে অক্ষরে পালন
তবুও আজ দিয়েছি অসহ্য যন্ত্রণা!
প্রথম চাকরীর সুখবরে মুখে হাসি দেখেছি তোমার
খাঁটি,অমলিন;যেন মুক্ত ঝরে পড়ছিল।
সারা পাড়া মাথায় করেছিলে,আর;
মহাভোজ দিয়েছিলে নিজের শেষ সম্বলটুকু বন্ধক দিয়ে!
বিয়ের জন্য খুঁজেছ শত শত,মনের মত
না পেয়ে আবার খোঁজ,খোঁজ আর খোঁজ;
বিয়ের পাঁচ বছরের পর তোমায় ঘরছাড়া করলাম
পারিবারিক শান্তি রক্ষার দায়ে।
বুঝিনি তোমার যন্ত্রণা,হে মহীয়সী জননী
আজ তুমি তিরিশ বছর চলে গেছ ছেড়ে,
অনাথ করে।আজ আমার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম,
তাই রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপলব্ধি করছি,জননী যন্ত্রণা!
আমি সেই মেয়ে
আমি সেই মেয়ে,যার জন্মে-
নিষ্প্রদীপ সন্ধ্যা নেমেছিল বাড়ীতে!
শাঁখ বাজেনি,উলুধ্বনি পড়েনি,
দোকান থেকে আনা রাজভোগ
ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল দোকানে।
পাঁচশ লোকের ভোজের আয়োজন-
হয়েছিল বাতিল!
মা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল তখন
পরে দেখেছিল কি না জানি না,
বাবা দামী ফোনটা ছুঁড়ে আয়না ভেঙেছিল!
দাদু দামী ফুলদানীটা ভেঙেছিল রাগে,
ঠাম্মা মুখ বেঁকিয়ে বলেছিল-
"হতভাগী এসেছে লাখ লাখ টাকা ফাঁকা করতে!"
কাকা-কাকীমা আমায় দেখতে পর্যন্ত যায়নি
আমায় কূলটা,হতচ্ছাড়ি বলেছিল কেউ কেউ।
আমি সেই মেয়ে,যার জন্মে-
আতুর সারা হয় যোগেযাগে।
ষষ্ঠীপূজোয় একটা বিড়ালকেও খাওয়ায়নি,
আর নামকরণের দিনটাও ভুলেছিল সবাই!
দিদিমাই শেষে নাম রাখেন অভাগী,
সত্যিই সার্থক নাম হয়েছে আমার;
আমি এক নিশাচর যেন!
দাদুভাই বলে যে আমি সৌভাগ্য আনবই একদিন
মা হেলায়ফেলায় ডাকে ফেলি বলে!
আমার আদরযত্ন যা সব দিদা-দাদুতে,
মামা-মামীর মধ্যেও পেয়েছিলাম বাবা-মায়ের ছায়া!
তবে কদিন খুঁজতে একটু দেরী হয়েছিল এই যা।
তারপর একদিন কলম ধরলাম,বড় হলাম;
আই.এ.এস হয়ে মুখ রাখলাম দিদা-দাদুর;
সবাই এসেছিল,কিন্তু আমি তাদের ফিরিয়ে দিতে পারিনি!
======================================
সৌমেন সরকার,
vill-জয়পুর;
P.S-বনগাঁ,
P.O-ছয়ঘরিয়া,
Dist-উঃ 24 পরগনা,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন