শ্রাবণ ঘন গহন মোহে
তরুণ প্রামাণিক
ঝিম ধরা বিকেলের প্রান্তে মিইয়ে আসা আলোর রেখা বৃষ্টি ভেজা কার্নিশে লেগে আছে তখনো। দিনমানে কাকের গলার মত কালো আকাশ জুড়ে অঝোর প্লাবন,ভেজা বাতাসে কি এক সর্বনাশের হাতছানি!
জলে ভেজা টসটসে পিচ কালো রাস্তায় ছুটে চলেছি,সাথে একটা হলুদ ট্যাক্সি। গন্তব্য- কোন এক অচিনে। বৃষ্টির ঝালর তখনও ট্যাক্সির কাচে ঝমঝম করে ঝরছে। রাস্তার জল ছিটিয়ে দ্রুত চলেছি বাইপাস বেয়ে। এ পথে রোজই যেতে হয়,কারণে কিম্বা অকারণে। কিন্তু আজ যেন কিসের এক মোহগ্রস্থতা ক্রমে গ্রাস করছে আমাকে। ফিরতে ইচ্ছা করছে না কিছুতেই -
কিছু দূরে রাস্তাটা ছোট একটা বাঁক ঘুরতেই চোখ পড়লো শ্রাবণের খোলা আকাশের দিকে, ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ে চলেছে তখনো। কী এক গভীর সম্মোহনে বসে থাকতে পারলাম না,নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে। তখন আকাশে চলছে সান্দ্রতার খেলা। মেঘের সাথে মেঘ মিশছে , আকাশের সাথে আকাশ ! পথের ধারের আদিগন্ত গাঢ় সবুজ ক্ষেত, সেই ক্ষেতের ওপারে যেখানে- জলভরা আকাশ ঝুঁকে আসছিল ধানের ক্ষেতের ওপরে, আর কতগুলো শান্ত বকের ওড়াউড়ি, নিঃশব্দ আলপনা আঁকছিল বৃষ্টি ভেজা পুব আকাশের ঘন ক্যানভাসে-
আমি দুহাতে তালি দিয়ে লাফিয়ে উঠলাম। যেন একটা অসীম মুহূর্তের সৃষ্টি হল সেই সময়টুকুতে। মনে হল, যেন কত যুগের অপেক্ষার পরে শুধু এই আশ্চর্য মুহূর্তটাই দেখব বলে আমি এখানে এসেছিলাম আজ। পূর্ণতার এই উৎসবে- আলো আর আঁধারের অপরূপ বিভাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ, ভাষাহীন। মনে হল- আমার কোথাও যাওয়ার নেই, কোথাও কোন অভিযোগ নেই, কোন নালিশ নেই, অভাব নেই। এই মুহুর্তে পৃথিবীর যা কিছু খারাপ, এক লহমায় তা ক্ষমা করে দিলাম।
বৃষ্টি ঘন হয়ে আসে। চুলের প্রান্ত ছাড়িয়ে ঘাড়ে এসে পড়ে। আসন্ন অন্ধকারের আয়োজনে মেতে ওঠে প্রকৃতি। আর আমি ঋণী হয়ে থাকি ক্ষণজন্মা ঐ মুহূর্তটির কাছে।
প্রকৃতির এই রূপ রস বর্ণ গন্ধের মাঝে একই আলোয় চোখ মেলতে পেরে, শ্রাবণের জলে ভেজা এই সব সবুজ গাছ-গাছালি, কীটপতঙ্গ, পাখ-পাখালির সঙ্গে একই বাতাসে শ্বাস নিতে পেরে ধন্য হই। তুচ্ছ এই নশ্বর জীবন খানি হঠাৎই অনেক দামি মনে হয়। ভীষণ ভাগ্যবান মনে হয় নিজেকে।
প্রকৃতির আঙিনা জুড়ে অবহেলায় পড়ে থাকা এই সব মণিমুক্তো কুড়িয়েই না হয় বাকি জীবনটুকু ধন্য হোক।
=======০০০=======
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন