পরশুদিন ঠিক এই রকম সময়ে আমি ফিরছি চেন্নাই থেকে কলকাতা। একটু তন্দ্রা মত এসেছিল। চোখ মেলে নীচের দিকে তাকাই। দেখি আমি মাঝ আকাশে।
(বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল বউ। তাই ভরা দুপুরে ছাদে থাকতে হয়েছিল।)
মিলনের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা সবাই ঢোঁক গিলে প্রশ্ন করল - তুমি পেলেন চড়েছো?
- এ তো আমার কাছে জলভাত। প্রায়ই যেতে হয় তাও কোম্পানির পয়সায়।
(সেদিন বাসে পয়সা দিতে পারে নি তাই মাঝ রাস্তায় কণ্ডাকটর নামিয়ে দিয়েছিল।)
উঁ হুঁ করতে করতে মাথার উপরে আম পাতাগুলোকে দেখে মিলন আবার শুরু করে - সেই স্কুলে পড়ার সময় আমগাছটা দেখেছিলাম ভাগ্যিস এখনও আছে। এসি ছাড়া তো আমি আবার থাকতেই পারি না।
(গত বছর থেকে দুটো ফ্যানের একটা খারাপ)
শ্রোতাদের একজন বলে উঠল - তোমার কি বিশাল বড় বাড়ি।
(ভাড়া বাড়ি প্রমোটারের হাতে চলে যাচ্ছে)
একটু যেন ক্ষেপে গেল মিলন - তুই কাদের ঘরের রে।
মাথা নীচু করে আছে দেখে অন্যজন বলল - ও হরেনের বেটা।
- ও। সেই দিনমজুর খাটা লোকটা।
আর একজন এই হাসি ঠাট্টার আসর নীরস করে দিল - তুই তো এখানেই মানুষ হয়েছিস, মিলা।
- তা হয়েছি। তবে তোমাদের ন্যাংটো গাঁইয়াদের ছেড়ে বেরিয়ে গেছি অনেকদিন। এখন গলদা চিংড়ি ছাড়া খাই না। গাড়ি ছাড়া চলি না। স্যূট প্যাণ্ট ছাড়া পরি না। ছেলে কনভেণ্ট স্কুলে পড়ে। হিল্লী দিল্লীর বাবুদের সাথে ওঠ বোস করি।
হাঁ করে কথা শোনা সবাইয়ের একজন বলল - বাপরে! এই তো বছর দশ পনের বছর হবে এর মধ্যে। পড়াশোনাতে তো তুই সে রকমই ছিলি। যাচ্ছেতাই।
- পড়াশুনায় ভাল নম্বর পাওয়াটা সব নয়। তাছাড়া ভাবলাম তোমাদের সাথে আমার আনন্দ ভাগ করে নেব। বাবা মা মারা যাওয়ার পর ভাবলাম তোমাদের পাশে মাঝে মাঝে আসব। এখন দেখছি তোমরা সব হিংসুটে। তিন দিন হয়ে গেছে এখানে। আর না। আমার অনেক কাজ বাকী আছে। আজই ফিরে যাব।
রেগে মেগে আম গাছ ছাড়িয়ে পুকুর পাড়ে চলে এল মিলন। প্রচণ্ড রোদ।
শ্রোতাদের একজন পেছন পেছন কিছুদূর এগিয়ে এসে বলল - এই মিলা। এখনো সেই ঢপের রাজত্বে আছিস।
ঢপই বটে। এবার দাদার সঙ্গে ভাগাভাগি করে যে অল্পক'টা টাকা পেয়েছে তাতে এর চেয়ে আরো বেশি রোদে পড়তে হবে। লেবারের কাজটাও থাকবে কি না ঠিক নেই।
মিলন পিছন ফিরে বাবার প্রিয় ছাত্র হারুকে দেখতে লাগল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন