নারীকে নিয়ে দুচার কথা
মনোরঞ্জন সাঁতরা
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরাও। পরিবার, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে নারীরা প্রায় সমানভাবে অবদান রাখছেন। ১৯৪৭ থেকে ২০২৩-স্বাধীনতার দীর্ঘ ৭৬ বছরে নারীরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন। নারীদের এগিয়ে যেতেই হবে; কারণ আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। এ নারীরা যদি উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত না হয়, পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে এগিয়ে না চলে; তাহলে পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে?
দেশের অর্ধেক জনশক্তি দিয়ে দেশের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়- এ বাস্তব সত্য আমাদের উপলব্ধি হয়েছে বলেই নারীরা আজ পারিবারিক, সামাজিক এবং অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হতে পেরেছেন। নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি নারী। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের যতগুলো খাত রয়েছে, তার প্রায় সব ক'টিতেই বিশেষ করে কৃষি এবং পোশাকশিল্প খাতে নারীর অবদান সবচেয়ে বেশি। দেশের রপ্তানি শিল্পে ৯০ ভাগই নারী শ্রমে অর্জিত।
সম্প্রতি একটি জরিপে জানা যায়, শুধু কৃষি ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ নারী কাজ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষা-চিকিৎসাসহ বেশ কিছু পেশায় নারীরা পুরুষদেরও ছাড়িয়ে গেছে। আরও আগে নারীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হলে, সর্বোপরি নারী দুর্বল, নারী অবলা, নারী পারবে না, নারী শুধু সন্তান জন্মদান করবে আর গৃহকোণ সাজিয়ে রাখবে-এসব চিন্তাচেতনা থেকে যদি পুরুষরা বের হয়ে আসতে পারত-তাহলে দেশের বর্তমান অগ্রগতির জন্য স্বাধীনতার ৭৬ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো না।
উদ্বেগজনক হলো, নারীরা আজকাল নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছে। এ ধরনের অসুস্থ পরিবেশে নারীরা কীভাবে এগিয়ে যাবে? এ জন্য গোড়ায় হাত দিতে হবে। অপরাধের কারণগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। নারী নির্যাতনের শাস্তি ঘোষণা করার পরও নারী নির্যাতন কমছে না। আমরা বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি অপসংস্কৃতি, আকাশ সংস্কৃতি, মাদকের অবাধ ব্যবহার, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ইত্যাদির অপব্যবহারে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে গেছে। মানবিক মূল্যবোধগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে নারীর সম্মান প্রায়শই ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।যদিও আমাদের সংবিধানে নারীদের সমানিধকার লিপিবদ্ধ আছে। তবে তার প্রয়োগ কতখানি হয় সে বিষয়ে সন্দিহান আছে।
আবার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের জন্য একটি সনদ তৈরি করা হয়, যা 'সিডও' সনদ হিসাবে গৃহীত হয়। 'সিডও' এমন একটি সনদ, যা নারীর সব ধরনের মানবাধিকার ভোগের দলিল। এ ছাড়া আমাদের সংবিধানে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্যহীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করে। নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন এবং আরও দুর্বার গতিতে যাতে এগিয়ে যেতে পারেন, সেজন্য সরকারসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে পরিবার ও সমাজে নারীর সম্মানজনক অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন