সমাজে নারীর অবস্থান ও মূল্য
দেবযানী পাল
ও মেয়ের সর্বঅঙ্গে তো নিষিদ্ধ বসন্তের প্রলেপ দেওয়া - নির্দিষ্ট সময়ে যার ছোঁয়ায় গ্রহণ লেগে যাবে সমাজ দর্পণে ----
আহা, এলোকেশীর এমন জ্যোৎস্না ঝড়ানো রূপে কত যে মৌমাছির আগমন হবে ----
এ তো গেল সুন্দরী মেয়ের নিত্য কথিত বর্ণিত পরিহাস, আবার যদি কালো মেয়ে হয় তো তার জন্মেই অমাবস্যার নিশি লেগে যায়।
এই পৃথিবী নামক গ্রহে মনুষ্যজাতির জন্ম ইভের থেকেই এবং তাকে আদমের সাথে দেখা যায় নিষিদ্ধ গাছের ফল পেড়ে খেতে, যার ফলে তাদের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় এবং তার ফলস্বরূপ বংশবিস্তৃতি (বাইবেল ও কোরানে লিখিত )। মানুষের প্রথমে উৎপত্তি হয় ৭০ লক্ষ বছর আগে ওরাং ওটাং প্রজাতির নরবানর থেকে ক্রমবিবর্তন এর মাধ্যমে নারী পুরুষ এই দুই ভাগে বিবর্তিত হয়ে।
পুরাকাল থেকেই নারী হল সমাজের,সংসারের পুরুষ দ্বারা কঠোর শাসনে অনুশাসিত, পদানত। নারীর নিজস্ব সত্তা নিমজ্জ্মান ছিল তার নিজের অন্তরে যার বহিঃপ্রকাশ ছিল অবর্ণনীয় অপরাধ, বিভিন্ন মহাকাব্যেও তার বর্ণনা আছে তাই হয়তো ক্লিওপেট্রা বা ভারতের বিভিন্ন নারীরা বা রামায়ণের সীতা ভিন্নভাবে নিজেদের লাঞ্ছনার হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়েছেন মরণকে বেছে নিয়ে।
অবশ্য মহাভারতের দ্রৌপদী নিজেকে পুরুষদের লাঞ্ছনার হাত থেকে বাঁচাতে কৃষ্ণের সাহায্য নিয়েছিলেন যিনি পুরুষ ছিলেন।
যুগ পাল্টালেও বর্তমান সময়ে নারীরা শিক্ষার অধিকারী হয়েও পুরুষ শাসিত সমাজে নিজস্ব মত জাহির করে দীর্ণভাবে যেখানে একজন পুরুষই শেষ ইচ্ছেটা জাহির করে। যদিও মহিলারা এখন অনেকেই মাথা উঁচু করে নিজস্ব সিদ্ধান্তের পূর্ণ সম্মান দেয় তাতে হয়তো সংসারের বিদ্রুপের বা স্বেচ্ছাচারিনি তকমাটা তার জুটে যায় তবুও ----
আচ্ছা,আমরা সমাজের আর একটা কালো দিকে একটু দৃষ্টি দিই না কেন --- এই যে যারা বারবধু তারা তো এই পুরুষদের দ্বারাই শোষিত, তাদের কামনার স্বৈরাচারিতায় নিজেদের নামের পাশে এই অপমানজনক শব্দটা বসাতে বাধ্য হয়েছে কিন্তু যে পুরুষরা তাদের কাছে যায় তারা কেন সমাজের মূল্যবান পদবীতে শোভিত হয়!!
যেসব ঘরের নারীরা তাদের পুরুষ দ্বারা বঞ্চিত বর্জিত হয়ে দিনের পর দিন ঘরের কোনে পড়ে থাকে তারা যদি অন্য পুরুষে আকর্ষিত হয় তাহলে সমাজ সংসার কেন তাদের কুলটা, দুশ্চরিত্রা আখ্যা দেয়??
আসলে মনুষ্য সমাজটাই এখনও সুশিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেনি,শুধুমাত্র বইয়ের শিক্ষার বাইরে
ও যে আর একটা শিক্ষা আছে - নৈতিক শিক্ষা - সেটা যেন জোর করেই বাদ দেওয়া হয়েছে তাই তো পরম্পরায় নারীদের দিকেই সমাজ তর্জনী তুলে দেখায়।
অত্যাধুনিক নারী তাদের বেশভূষার রুচিটাও হারিয়ে ফেলেছে যদি বলি এই পুরুষদের কব্জা করার জন্য, মনের কোনও গহীন কোণে পুরুষদের প্রতি ধিক্কার, তাদের অবদমিত করার জন্য তাদের শরীরকে অস্ত্র হিসেবে তুলে ধরেছে।
আজ নারী শুধু বিদ্রোহিনী নয়, তারা সমাজের সর্বস্তরে প্রমাণ করেছে যে তারা পুরুষদের থেকে যোগ্যতায় কোন অংশে কম নয়।
পাইলট,কমান্ডো, আন্তর্জাতিক স্তরে সাহিত্য বিজ্ঞানের উন্নত শাখায় রাজনীতি এবং বিভিন্ন উচ্চপদে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে প্রমাণ করেছে আমরা নারীরা পুরুষদের থেকে কোন অংশে কম নয় বরং অনেক বিষয়ে এগিয়েও।
নারীরাই সমাজের ধারক বাহক, পরোক্ষ সঞ্চালক।নারী ছাড়া সংসার প্রাণহীন মূল্যহীন যদিও আজও নির্বিচারে কন্যা ভ্রূণ্য হত্যা করা হয় আইন অগ্রাহ্য করে যেখানে এক সমীক্ষায় জানা যায়,ভারতে ছেলের জন্মহার মেয়ের জন্মহারের থেকে অনেক বেশি যা সংসারে ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।
একজন নারী সমাজের সংসারের পুরুষদের যে সম্মান দেয়, প্রাধান্য দেয়, পুরুষদের সেটাই দেওয়া উচিত তার নারীদের। পুরুষরা সংবেদনশীল সুরুচির মাধ্যমে নারীকে তার যথাযথ সম্মান, করে মূল্য দিলে এই পৃথিবী একদিন সমস্ত বৈষম্যের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে সূর্যের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
=============
দেবযানী পাল
নিউ ব্যারাকপুর
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন