শঙ্কুর প্রশ্ন
অমিত কুমার রায়
শঙ্কু ঘুম থেকে উঠে সবেমাত্র টয়লেটে ঢুকেছে ঘড়িতে তখন ভোর ছটা। সে শব্দ শুনতে পেল ধপাস দুম ধপাধপ ধপাধপ ঘচাং খচাং। এ হলো ত্রেতাযুগের রামভক্তদের টিনের চালে, ডালে মাচায় লাফালাফির কান্ডকলাপের ঝম্প!
তার কিছুক্ষণ পরেই শঙ্কুর মায়ের চিৎকারের শব্দ--- হ্যাই হুই যা নিয়ে নিল রে! ততক্ষণে ছাদ থেকে করবীগাছের ডাল ধরে ইলেকট্রিক কেবলে পা রেখে নখ দিয়ে কুচ করে কচি চালকুমড়ো পাঁচশ ওজনের কামড়ে ভাগাভাগি করে তিন জনের পেটে চালান হয়ে গেল! একশ কেজি ওজনের কর্তারা তুলতে আসেনি, এক বিশকেজির কিশোরকে দিয়ে কাজ সারল। ওরা দলে ভারি ছিল পঁচিশ জন ছোট বড়ো মিলে।
এদিকে ভোর হলেই উঠোন সংলগ্ন বাগানে পাখিরা আসে ছাতার ফিঙে বুলবুলি হাঁড়িচাঁচা শালিক কাঠবিড়ালি। ওদের জন্য হাতে গড়া রুটি কুচি কুচি করে ছড়িয়ে দেয় শঙ্কুর মা। আজ ওদের কেউ আসেনি, রাম ভক্তরাই যেন বিসকিট খাচ্ছেন পা ছড়িয়ে; এককাপ করে চা কিম্বা কফি হলে হাল্কা শীতে ভাল হয়!!
শঙ্কু টয়লেট থেকে বেরিয়ে সবজির ঝুড়ি থেকে মাকে বলে কয়েকটি আলু খেতে দিল হাল্কা ছুঁড়ে দিয়ে। গ্রীষ্মের দুপুরে শঙ্কুর মা যখন দরজা বন্ধ করে বিশ্রাম নেয় কোনো না কোনো ফাঁকে ফাঁকি দিয়ে কত্তারা ফোচকেদের গ্রীল দিয়ে গলিয়ে দিয়ে আলু বেগুন পটল সব্জি চুরি করাবেই। একবার তো একছড়া পাকাকলা নিয়েই চম্পট। অত বড়ো বড়ো পেটগুলো কি খেয়ে বাঁচে গাছের পাতা কত চিবুবে?
শঙ্কুর বাবা দীপ্তবাবু ঠিক করেছেন ওদের জন্য একটা মিনি অরণ্য বানাবেন তার গচ্ছিত অর্থ দিয়ে। বাড়ির পাশাপাশি ক'বিঘে পতিত জমি আছে ঝিল সমেত। সেখানে নতুন করে নিম জারুল কদম তেঁতুল আম জাম পেয়ারা পেঁপে তাল গাছে ভরিয়ে দেবেন। তারপর রামভক্তদের গাছে ওঠবার অধিকার দেবেন। একাজ শুরু হলে নিশ্চিত যে হনুমান আর বেশি বাড়িতে এসে হানা দেবেনা। শঙ্কু প্রশ্ন করল আচ্ছা বাবা বনদপ্তর তো আগ্রহী হতে পারে হচ্ছে না কেন?
বন্ধু সন্তুকে গেল মাসে রাগে পিঠে কামড়ে মাংস তুলে নিয়েছে, চোদ্দটা সেলাই হয়েছে। ইনজেকশন আজও চলছে।
অত বড়ো বড়ো প্রাণীদের খাবার কোথায়? গাছ কেটে সাফ হয়ে যাচ্ছে তাই না বাবা??
দীপ্তবাবু শঙ্কুর প্রশ্নের কি উত্তর দেবেন জানা নেই।
--------------------------
অমিত কুমার রায়
ঝিখিরা হাওড়া ৭১১৪০১
.......
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন