google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re রম্যরচনা ।। আপনার ভাগ্য খুব ভালো ।। এস এম মঈনুল হক - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

রম্যরচনা ।। আপনার ভাগ্য খুব ভালো ।। এস এম মঈনুল হক

আপনার ভাগ্য খুব ভালো

এস এম মঈনুল হক 


 

লটারি লটারি লটারি.....। তামাম পশ্চিমবঙ্গের এমন একটা জায়গা নেই যেখানে লটারি বিক্রি হয় না। প্রায়-ই শুনি ৫ সেমে টাকা লেগেছে। ৪৫ হাজার। কখনো শুনি ২৫ সেমে দু লাখ পঁচিশ হাজার। বিষয়টা জানতে উৎসুক হলাম। শিখেও নিলাম।একই নাম্বারের  পাঁচটা কার্ড হলে ওটা পাঁচ সেম। ক্রমান্বয়ে ১০ সেম ২৫ সেম ৫০ সেম ইত্যাদি। টেবিলে অনেক টিকিট সাজানো আছে। তখন কোনো খদ্দের নেই। লটারী সেলারটাকে বললাম - বসবো ভাই ?

 - হ্যাঁ, বসুন। লটারী লাগবে?

 - এখন তো নিইনি,  পরে দেখছি।

 - ১০ সেমের একঘরই পড়ে আছে। এটা লাস্ট টিকিট। লাস্ট টিকিট ছাড়তে নেই। নিয়ে নিন। ভগবান দিলে দিতেও পারে। লাস্ট টিকিট সবার ভাগ্যে জোটে না। বলছি, এটা আপনি নেন।

 - এতটাই যখন নিশ্চয়তা দিচ্ছ তখন তুমিও তো নিতে পারো। 

 - কত আর কাটবো বলুন। পকেট ভর্তি। আনসোল্ড দেওয়ার পর যেগুলি বিক্রি হয় না সেগুলি আমার কাছেই রাখতে হয়। পড়ল তো ভালোই, না হলে... ব্যাস আর কি।

 - হিন্দু-মুসলিম শিক্ষিত-অশিক্ষিত গরিব দরিদ্র সবাইতো দেখছি লটারি কাটছে। 

 - কি বলছেন দাদা! এরা আর ক' টাকার টিকিট কাটে। আমার কাছে না হলেও ৫০ জন চাকুরীজীবী ও ব্যবসিকের ফোন নাম্বার আছে। ওরা ফোনের সাহায্যে আমাদের কাছে টিকিট বুক করে। ফোনপেতে পরিশোধ দেয়। ফোনের মাধ্যমে ফোন করে বলে, আমার একটা গ্যারান্টিও হয়নি। যা এক টিকিটের জন্য হাজারের ঘর ধরতে পারলাম না! কালকেও আমার ব্যারেল মার হয়েছিল। ভালো মিডিল আনতে পারো না। কি কি মিডিল আছে বল। আমরা বলে দিই , তারপর ওরা বুক করে নেয়।

 - এই যে বললে মিডিল, গ্যারান্টি.... এসব গুলো কি?

   একটা রেজাল্টের সিট বের করে আমাকে দেখিয়ে বলল- প্রথম ঘরটা প্রথম পুরস্কার। সিরিয়াল সহ যদি নাম্বার মিলে যায় তাহলে এক কোটি টাকা পাবে। যদি সিরিয়াল না মেলে শুধু নাম্বার মিলে তাহলে যটা সেম তটা এক হাজার টাকা পাবে। তারপরে পাঁচটা নাম্বারের দশটা ঘর আছে। যদি পাঁচটা নাম্বার মিলে যায় তাহলে পার কার্ড নয় হাজার টাকা করে পাবে। তারপরের ঘরটা প্রথম মিডিল। এখানেও দশটা ঘর আছে। যদি প্রথম সংখ্যাটি বাদ দিয়ে বাকি চারটে সংখ্যা মিলে যায় তাহলে পার কার্ড চারশো পঞ্চাশ টাকা করে পাবে। তার পরের ঘর দ্বিতীয় মিডিল। এখানেও দশটি ঘর আছে। যদি প্রথম সংখ্যা বাদ দিয়ে পরের চারটি মিলে যায় তাহলে পার কার্ড দুশো পঞ্চাশ টাকা করে পাবে। তার পরে ১০০ টি ঘর আছে। এটা গ্যারান্টির ঘর। প্রথম সংখ্যা বাদ দিয়ে চারটি সংখ্যা মিললে পার কার্ড একশো কুড়ি টাকা করে পাবে। বুঝতে পারলেন তো মশাই। 

 - হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি। লটারি সম্পর্কে অনেক কিছুই শিখলাম তোমার কাছে।

 - তোমার কথায় রাজ্য জুড়ে কয়েক কোটি মানুষ লটারি কাটছে। লটারি খেলিয়েদের বেশ কিছু কোটি টাকা ইনকাম হচ্ছে। পরিবর্তে যে পরিমাণ টাকা তারা দিচ্ছে কয়েক কোটির মধ্যে তা খুবই সামান্য। অথচ মানুষ লটারির মোহে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছে। তোমার কি জানা আছে এমন মানুষের কথা যারা নিয়মিত লটারি কাটে অথচ একটা গ্যারান্টিও পায়নি।

 - কি বলছেন মশাই, আমার চোখের সামনে বেশ কিছু লোককে ভিখিরি হতে দেখেছি। এমন কিছু লোক আছে যারা জমি বন্ধক দিয়েও লটারি কাটে। স্ত্রীর কানের দুল মালা বন্ধ করে রেখে বা বিক্রি করে লটারি কাটে। সেই সব পরিবারে নিত্যই ঝগড়া লেগেই আছে। কত লোক আছে যারা ১০-১২ বছর লটারি কেটে একটা গ্যারান্টিও পায়নি। অথচ এখনো পর্যন্ত তারা লটারির মোহ ছাড়তে পারেনি। কিন্তু আমাদের তো কিছুই করার নেই। রাজ্য সরকারের স্বেচ্ছা নীতির অনুমতি আছে এই লটারিতে। পার ডে ২০ লক্ষ টাকা রাজ্য সরকার সিকিম সরকারের কাছ থেকে পায় এই লটারির জন্য।

      টাকার অংকটা আমি পারফেক্ট মনে করতে পারলাম না। সত্যি মিথ্যা ওরাই জানে। তবে সিকিম সরকারের কাছে একটা চুক্তি আছে এটা সত্য।

 - বলছি, এবার তো লাস্ট টিকিটটা নেবেন। প্রাইজ পড়লে আমিই আপনাকে জানিয়ে দেব।

  অনিচ্ছা সত্ত্বেও টেবিলে পড়ে থাকা দশ সেমের লাস্ট টিকিটটা আমি নিলাম এবং কিছুদূর এসে একটা ঝোপের মধ্যে ওটাকে লুকিয়ে রাখলাম। নাম্বারটা দেখলেও কিছুক্ষণ পর আর মনে ছিল না। সেলার তো বলেই দিয়েছে প্রাইজ লাগলে আমাকে জানাবে। তখন না হয় ঝোপের মধ্যে থেকে ওটাকে নিয়ে গিয়ে প্রাইজটা নিয়ে নেব। দিন চারেক পরে আমি ওই সেলারের  পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম এমন সময় সেলার আমাকে বলল-  এই যে দাদা, এদিকে আসুন। আপনার ভাগ্যটা খুবই ভালো। কথাটা শুনেই মনের মধ্যে একটা উষ্ণ আনন্দ অনুভব করতে লাগলাম। যাক কিছুতো একটা পেয়েছি। কেমন যেন একটা লজ্জাও অনুভূত হচ্ছিল আমার মনের মধ্যে। মনের মধ্যে একটা জড়তা নিয়ে ওকে বললাম- কোন্ ঘরটা পড়েছে ভাই?

 - আর বলবেন না। সত্যিই আপনার ভাগ্য ভালো। জীবনে প্রথমবার টিকিট কেটে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আর কি...।

  আনন্দটা আরও একটু বেড়ে গেল এবং লজ্জাও অনেকটা দূর হয়ে গেল মনে হলো আমার মধ্যে। বারবার জানতে ইচ্ছে হচ্ছিল কত টাকার ঘর আমি পেয়েছি। তাহলে তো ঝোপের মধ্যে থেকে আমাকে এবার টিকিটটা আনতে যেতে হবে। 

 - বলছি টিকিটটা আনবো কি?

 - কি আর বলি দাদা, আপনি নিয়েছিলেন ৬২ আর পড়েছে ৬১ তে, সত্যিই আপনার ভাগ্য ভালো।

  মনটা অনেকটাই খারাপ হয়ে গেল, কারণ সেলার যেভাবে বলছিল যে আমার ভাগ্য ভালো কিন্তু এই ৬১ আর ৬২ তেই সব গন্ডগোল হয়ে গেল। ওর কথায়, এক ঘর মার খাওয়াতেও আমার ভাগ্য খুবই ভালো। আমার এই ভাগ্য ভালোর বিষয়টা আমি কিছুতেই বুঝতে পারলাম না। শুধু এইটুকু অনুভব করলাম যদি প্রথমবার টিকিট কাটার পর এক ঘরের জন্য কেউ মার খায় তাহলে অবশ্যই তার ভাগ্য ভালো। সেলারের কথায় যেমন আমার ভাগ্য খু-ব ভালো।


====================


          

এস এম মঈনুল হক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন