google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গ্রন্থ আলোচনা ।। ছন্দ-ছড়ায় মনোলোভা 'মিলির ছড়া' ।। পাঠ-প্রতিক্রিয়া: গোবিন্দ মোদক - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

গ্রন্থ আলোচনা ।। ছন্দ-ছড়ায় মনোলোভা 'মিলির ছড়া' ।। পাঠ-প্রতিক্রিয়া: গোবিন্দ মোদক

ছন্দ-ছড়ায় মনোলোভা 'মিলির ছড়া'


পাঠ-প্রতিক্রিয়া: গোবিন্দ মোদক



"ও মিলি তুই, কোথায় গেলি, একটা কথা কই,

আয় কাছে আয়, তোকেই দিলাম, প্রথম ছড়ার বই। 

তুই যে আমার নাতনি সোনা, আমার প্রিয় সই, 

ছড়ায় ছড়ায় গল্প করি, তোর বয়সি হই।


ছবির ছড়া, ছন্দে ভরা পড়বে কি আর কেউ?

কেউ না পড়ুক, তুই পড়লেই, জাগবে বুকে ঢেউ।"


এমনই চমৎকার একটি অভিনব উৎসর্গ পত্র দিয়ে শুরু হয়েছে কবি রতন কুমার নাথের 'মিলির ছড়া ছন্দে গড়া' কাব্যগ্রন্থটি। রতন কুমার নাথ দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে কবিতায় রঙিন হয়ে আছেন; যদিও তাঁর প্রথম ছড়া-কবিতার বই মিলির ছড়া ছন্দে গড়া। ছোট্ট মিলিকে নিয়ে লেখা তাঁর ছড়াগুলি শুধু মিলি বা তার বন্ধুদেরই নয়, বয়স নির্বিশেষে বড়দেরও মন কেড়ে নেয়। বইটি পড়তে পড়তে পাঠক বেশ বুঝে যান যে ছড়ার বইটির প্রথম অংশে রয়েছে মিলিরই কথা, দ্বিতীয় অংশ জুড়ে রয়েছে মিলির ভাবনার বর্ণময় জগৎ। মিলির প্রথম বাড়িতে আসা নিয়ে কবি লিখেছেন —

"তুই যে আমার পাহাড়-সাগর তুই যে আমার নদী,

দিনগুলো সব রাত হয়ে যায় তুই না থাকিস্ যদি!"   (সোনামণি)। 

তারপর মিলির ঘুম ভাঙা, মিলির হাঁটা, মিলির গল্প শোনানো, মিলি ও পুতুলখেলা, কথার রানী মিলি, আজই প্রথম স্কুলে গেলাম, মিলির রবিকবি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে তিনি একটু একটু করে মিলিকে চিনিয়ে দিয়েছেন পাঠকের সঙ্গে। 


পরবর্তী ছড়াগুলি মিলির নানাবিধ ভাবনার সুচারু প্রতিফলন যেখানে ফুল, পাখি, চাঁদ, তারা, চুন্নু-মুন্নু, ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি, বাঘ ভাল্লুক, অরণ্যদেব টিনটিন, অঞ্জনা চন্দনা ছাড়াও রয়েছে সোনার কাঠি রুপোর কাঠি, কেষনগরের ভূত, বাঁটুল দি গ্রেট, ঝরণা, পাহাড়, সাগর, নদী… আরও কতো কি! সত্যি বলতে কি — 'বাঁটুল', চরকা কাটা বুড়ি, 'আমাদের ছোট নদী', অরণ্যদেব', 'বাঘের ব্যথা', 'যা পাখি তুই যা', গোলাপ চারা, রঙের দোল ইত্যাদি ছড়ায় চিত্রকল্প আর নিটোল ছন্দের দোলায় কবি রতন কুমার নাথ সাজিয়ে দিয়েছেন শিশুর নিজের জগতটিকে। 


কবি রতন কুমার নাথ সম্যক জানেন ছোটদের জগতটিকে। তাই তিনি নিশ্চিতভাবেই ধরতে পেরেছেন ছোটদের জগতের সেই চাবিকাঠিটিকে। একমাত্র ছোটরাই বুঝি পারে রাত্তিরে সবাই ঘুমিয়ে গেলে বাবার স্মার্টফোনটা হাতে তুলে নিয়ে টিনটিনকে ফোনে ধরে অজস্র কথা বলতে —

কানে কানে মনের কথা বলছি তোমায় ভাই

ও টিনটিন, তোমার সাথে সাগর যেতে চাই।

কুট্টুসকে সঙ্গে নিয়ে, এসো আমার বাড়ি

তোমার সাথে নিশুত রাতে সাগর দেব পাড়ি। 

জাহাজ চেপে অনেক দূরে ডলফিনদের দেশে

যেখানে রোজ সুনীল আকাশ সাগর জলে মেশে।


ভূতের ছড়া নির্মাণেও কবি রতন কুমার নাথের কলম অত্যন্ত পটু — এই কারণেই ধলেশ্বরের বিপত্তি কবিতাটি এক কথায় অনবদ্য হয়ে ওঠে —

'শ্যাওড়াগাছের মগডালেতে শাঁকচুন্নীর ঘর' 

এই কথাটা ছড়ায় লেখেন কবি ধলেশ্বর।

সেই কথাটা ছন্দ-পাখায় ছড়িয়ে গেল দূরে-

শাঁকচুন্নীর কানেও গেল পাঁচ-ছটা কান ঘুরে।


এদিকে ভাই, সত্যি বলি, ছড়ার লেখা পড়ে 

শাঁকচুন্নী সটান এলো ধলেশ্বরের ঘরে। 

ঘুমুচ্ছিল ধলেশ্বর, সাপটে ধরে চুল 

চেঁচিয়ে বলে-"এই হাঁদারাম, কি সব লিখিস ভুল?"


"কোথায় এখন শ্যাওড়া গাছের আঁধার-মাখা ঘর? 

শ্যাওড়া গাছ আর আছে না কি, ভোঁদা ধলেশ্বর!

সব গাছ তো সাফ করেছিস, চারদিকে সব বাড়ি, 

কোথায় থাকি? কোন মুলুকে? খোঁজ কি রাখিস্ তার-ই?"


"উদ্বাস্তু আমরা সবাই, হাইড্রেনে ঘর বাঁধি, সারাটা দিন, সারাটা রাত নাকি সুরে কাঁদি। 

তাও কি রে ভাই স্বস্তি আছে, পলিথিনের বোঝায় 

নিশ্চিন্তে দু'এক মিনিট যায় না থাকা সোজা।"


"চল ত ধলা সঙ্গে আমার ঢুকবি চ হাইড্রেনে, 

লেখার আগে যাচাই ক'রে সত্যিটা নে জেনে।" 

ধলেশ্বর তো কেঁদে আকুল, দু'চোখ ভরা পানি, 

বলে- "তুমিও ছড়া পড়ো, এ কথা কি জানি!"


এভাবে একের পর এক মজারু ছন্দ-ছড়ায় কবি ছোটদের মন এবং বড়দের মনন ভরিয়ে তুলেছেন অনায়াস দক্ষতায়। আশা করা যায় পাঠক-সমাজ বইটি সানন্দে গ্রহণ করবেন এবং আগামীতে কবি আরও মন-ভরানো ছড়া-কবিতা উপহার দেবেন।


___________________________




কাব্যগ্রন্থ (ছড়ার বই): মিলির ছড়া ছন্দে গড়া 

কবি: রতন কুমার নাথ

প্রকাশক: আনন্দ প্রকাশন

প্রচ্ছদ: সমীর মজুমদার

মূল্য - ১০০ টাকা



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন