অসহায়
তিনজন লোক মাঝরাস্তায় পথ আটকে দাঁড়ালো অবনীশের । তখন সন্ধের অন্ধকার ঘন হতে শুরু করেছে । নিঝুম রাস্তায় স্ট্রীটলাইটের আলোগুলো নীরবে সময়ের সঙ্গে সময় গুনে গুনে সময় কাটাচ্ছে । অবনীশ ভয় পেল ! লোকগুলোর মধ্যে একজন কর্কশ গলায় বলল 'যা আছে এক্ষুনি বের করে দে' । অবনীশ থমকাল । অফিসফেরতা মধ্যম মাপের কর্মচারির কাছে যতটুকু যা থাকে তার বেশি কিছুই নেই । একটা লম্বা হ্যান্ডেল দেওয়া কালো ব্যাগ । তাতে কিছু কাগজপত্র, লোণের ফাইল, টিফিন বক্স, ভাঁজ করা ছাতা আর টুকিটাকি নিতান্তই সাধারণ কিছু বস্তু । হাতে রেডিয়াম দেওয়া সস্তা হাতঘড়ি, পকেটে পার্স আছে বটে কিন্তু তাতে সব মিলিয়ে সওয়া তিনশোর বেশি হবে না । তবু অবনীশ ভয় পেল । লোক তিনটে আরও এগিয়ে এলো, প্রায় ওকে ধরে ফেলবে এবার । পালিয়ে যাওয়ার পথ নেই, দু'পাশেই দেওয়াল । তাতে লাল, সবুজ, গেরুয়া রঙে আঁকা, ফুল-ঘাস-হাত-হাতুড়ির ছবি । দেওয়াল-লিখন নয় যেন সমাজের ললাট-লিখন ।
আবার হুংকার 'যা আছে সব দে, পালাবার পথ নেই'। সত্যিই নেই, অবনীশ জানে পালিয়ে বেশিদূর যাওয়া যায় না । ঘরে বউ, সমত্ত মেয়ে, উঠতি ছেলে – পালিয়ে যাবে কোথায় ? আগন্তুকরা আরও কাছে এগিয়ে এলো ওর । ওদের ছায়া মিলেমিশে বিকট আকার নিয়ে ঘিরে ফেলল অবনীশকে । অবনীশের মুখচেনা । রাস্তায় রাস্তায় এদেরই ছবি, ভোটের সময় এদেরই দেখা যায় মা-বাপের ভূমিকায় । এরাই সরকার, এরাই বিরোধী, এরাই কানুন, এরাই নিয়তি । এরা ঘরে থান কাপড় পাঠাতে পারে, মেয়ের মুখে অ্যাসিড দিতে পারে, ছেলের পেট বরাবর চাকু চালিয়ে ফেড়ে ফেলতে পারে । এদের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো রাস্তা পি ডবলু ডি এখনও বানায়নি কিম্বা বানালেও অবনীশ সে পথে যাওয়ার মতো সাহস বা সম্বল কিছুই সঞ্চয় করতে পারেনি । অতএব পালিয়ে যাওয়া ওর পক্ষে অসম্ভব ।
বাধ্য হয়েই ছেলে তিনটের হাতে নিজের সবকিছু তুলে দিল । প্রতিবেরেই দেয় । মানিব্যাগ, হাতঘড়ি, কালো ছাতা ছাড়াও আরও অনেককিছু । সাধারণ মানুষের যেটুকু সম্বল – সোজা হাঁটার শক্তি, প্রত্যুত্তর দেওয়ার সাহস, চোখে চোখ রেখে তাকানোর দৃঢ়তা । মাঝপথে সব কিছু দিয়ে দিয়ে কোনক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে আসে প্রতিদিন ।
____________