google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প ।। শিখা ।। অঙ্কিতা পাল - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২

গল্প ।। শিখা ।। অঙ্কিতা পাল


 

পলাশতলী গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের কন্যা শিখা। শিখা এবছর মহা বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে  বিশ্ববিদ্যালয় এ অধ্যায়নের জন্য চেষ্টা করছে। তার গায়ের রং ছিল শ্যাম বর্ণ , দেখতে যেমন ভালো না হওয়ায় পরিবার থেকে তার বিবাহের জন্য চেষ্টা করছিল। প্রচন্ড নম্র-ভদ্র স্বভাবের ছিল শিখা।
অনেক দেখা শোনার পর অবশেষে কলকাতার মল্লিক বাজারে রায় পরিবারের ছোট ছেলের সাথে বিয়ে হয় শিখার। বছরখানেক ভালোই চলছিল তাদের সংসার, ইতিমধ্যে শিখা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। কন্যা সন্তানকে মেনে নিতে পারেনি রায় পরিবার, তাই শিখাকে এক প্রকার নির্মম অত্যাচার করে বাড়ি থেকে  বের করে দেওয়া হয়।শিকার স্বামী অতনু রায় প্রচণ্ড মারধোর করে তারপর অসহায় শিখা তার বাপের বাড়িতে ফিরে আসে, শেখ প্রচন্ড কাঁদতে কাঁদতে বাবা-মাকে সমস্ত ঘটনার কথা খুলে বলে। শিখার বাবা শ্যামল বাবু প্রচন্ড রেগে যান এবং বলেন, এদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির দরকার। তিনি চিৎকার করে আরো বলেন - প্রথমে বুঝতে পেরেছিলাম এটা একটি জঘন্য পরিবার। কিন্তু তোর মা আর মামার জন্য এই বিয়েটা আমার দিতে হয় কেন দেশে কি এর থেকে ভালো পরিবার আর পাওয়া যেত না। তিনি তার স্ত্রী অলকা দেবীর কে উদ্দেশ্যে বলেন - মেয়েটারে চরম পরিণতির জন্য তুমি দায়ী। বিয়ে দেওয়ার জন্য কত ই না ব্যস্ততা, কেন তাকেখাওয়ানো পড়ানোর ক্ষমতা আমাদের ছিল না। যাইহোক আমি এবার প্রশাসনের সাহায্য নেব এই বলে তিনি হন হন করে বেরিয়ে যান..................
এরপর শ্যামল বাবু বাড়িতে পুলিশ নিয়ে আসেন। প্রথমে শিখা মুখ না খুললেও  অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর সে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং সে যে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিল তা এইরূপ.......
আমি যেদিন বিয়ে হয় ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম সেদিন আমাকে কোন বরণ করা হয়নি, বরংচ আমাকে কুৎসিত বলে অনেক অনেক অপমান করতো। তখন আমি নতুন বলে কিছু বলে উঠতে পারেনি। আত্মীয় স্বজনেরা নানা রকম গালিগালাজ করেছিলেন। কিন্তু ঘটা করে লোক দেখানোর জন্য বৌভাতের আয়োজন করা হয়, অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমার সমস্ত অলংকার নিয়ে নেওয়া হয়। আমি যখন অনেক কষ্ট বুকে চেপে অতনুকে বলতে গেলাম, সে ঝাঝি মেরে উত্তর দিলো -  চুপ করতো কালি পেত্নী তোকে কি আমি রূপ দেখতে বিয়ে করেছি, তুই টাকা আনবি আমি ফুর্তি করবো। আমাকে ভয় দেখিয়ে বলে - শোন শালী এ কথা যদি পাঁচ কান হয় তোর জীবন আজকেই শেষ। আমি তখন ভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি তবে আমার বাপের বাড়ির লোক গেলে এমন আচরণ করতেন যেন  কত আমায় ভালবাসেন। শিখা দুঃখ করে বলে - জানেন অফিসার আমাদের বিয়ের ঠিক ছ মাস পর ও আরেকটি বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। আমার জায়গা ছিল চিলেকোঠার ভাঙ্গা ঘরে সে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলে - অতনু কখনো কখনো আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো, তার বাবা-মা সে গুলোকে রহস্য মনে করে উৎসাহ যোগাতেন আমার খুব খারাপ লাগতো কিন্তু আমি বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আজ পর্যন্ত কখনো এ কথা কাউকে বলিনি। অনেক কিছু সব মুখ বুজে সহ্য করেছি, তারপর যখন আমার মেয়ে হল আমার  উপরে অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিল এবং তারা বলতে শুরু করলো - কালির বাচ্চা তো কালি হবে। এ আবার নতুন কি এক যদি ছেলে হত তাহলে বুঝতেন এলেম আছে। তারপর আমার চুলের মুঠি ধরে হিছড়াতে হিছড়াতে টেনে এনে জোর করে কাজ করিয়ে নিতে।  মেয়ের জন্য দুধ কেনার পয়সা টাকা চাইলে - আমাকে প্রচণ্ড মারধোর করতো, বলতো বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে যা। আর না হলে দুটিতে গলায় দড়ি দিয়ে মর।
আমি আর এসব অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলাম না একদিন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম সব শেষ করে দেবো। তারপর ভাবলাম এই দুধের শিশু তার কি হবে? তাই দাঁতে দাঁত চেপে কতই না  সব অত্যাচার  সহ্য করতে লাগলাম। কিন্তু আজ আমার শরীরটা ভাল লাগছিল না সকাল থেকেই গায়ে খুব জ্বর, ওরা আমার কোন কথা শুনলোনা মারতে মারতে ঘরের বাইরে বার করে দিল। তাই আর কিছু ভেবে চিনতে না পেরে এই বাড়িতে এসে উঠি।
শিখার কথা শুনে, শিখার বাবা-মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা হাহা করে কাঁদতে থাকে কতইনা অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে তাদের মেয়েকে।
শিখার বয়ানের ভিত্তিতে রায় পরিবারের সকল সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়। আইনের সাহায্য নিয়ে শিখা ও অতনুর বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়।
 
==============

নাম - অঙ্কিতা পাল
ভাঙ্গড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন