খুড়ো মশাই
অঙ্কিতা পাল
আজ মাধব খুড়োর কথা মনে করলে মনটা যেন হু হু করে ওঠে। কারণ কিছুক্ষণ আগে তিনি গত হয়েছেন।
আমার পরিচয় আমি শ্রীরামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নিবাস - পটাশপুর গ্রাম ।
আমাদের পটাশপুর গ্রামের এক খুড়ো মশাই ছিলেন , গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দেবদাহ দুপুরবেলা ছাতা মাথায় দিয়ে চলেছে মাধবখুড়ো। পরনে সাদা ধুতি পাঞ্জাবি ও চোখে মোটা কাঁচের চশমা , তার সারা শরীরে দরদর করে ঘাম ঝরছে। আমি সাইকেলটা নিয়ে সেই সময় বাজারে চলেছি, হেকে বললেম - কিগো, খুড়ো নাকি ? খুড়ো হ্যাঁ সূচক মন্তব্য করেই গড় গড় করে হাঁটতে শুরু করলেন। আমিও খুড়োর সাথে একটু মজার ছলে প্রশ্ন করলাম - তা এত ভর দুপুরবেলা কোথায় চললে? খুড়ো বললেন, এই তো বড় মেয়ের বাড়ি। আমি আবারো রহস্য করে বললাম - তা _খুড়ির সাথে ঝগড়া বুঝি ? খুড়ো কোনো উত্তর না দিয়ে বরং বড় রাস্তা ধরে গিয়ে অটোয় উঠে পড়লেন।
আমার এই ভেবে খারাপ লাগছে যে,
মানুষটা আর বেঁচে নেই তাই উনার সাথে রহস্য করা ঠিক হয়নি। আমি প্রথমে কিছু না বুঝলেও পরে জানলাম, মাধব খুড়ো ছোট ছেলের সাথে ঝামেলা করে চলে যাচ্ছেন। খুড়োর দুই ছেলে বড় ছেলে বকুল শশুর বাড়িতে থাকে ও ছোট ছেলে বিলাস বাড়িতে থাকলেও বাপের সাথে তার সাপ নেউলের সম্পর্ক।ছোটবেলা থেকেই দেখেছি খুড়ো খুব কষ্ট করেই দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে চেয়েছেন কিন্তু কোনটাই মানুষ হয়নি। কপালের অদৃষ্ট আর কে খন্ডায় বড় ছেলে টাকা পয়সা নিয়ে শ্বশুরবাড়ি উঠেছে কআর ছোটটাজমি জমা নিয়ে বাপ মা কে বাড়িছাড়া করেছে। খুড়ি মা আজ সকালে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন , খুড়ো বিলাসের কাছে কিছু টাকা চাইতে গেলে বিলাস অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। তাই মনের দুঃখে ভর দুপুরে মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন মাধব খুড়ো ।
প্রচন্ড অপমানে ও লজ্জায় খুড়োর মাথা ঘুরতে থাকে এবং পথেই তিনি প্রাণ হারান।
===============================
অঙ্কিতা পাল, ভাঙ্গড় দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন