google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। পুত্রান্ দেহি ।। মিঠুন মুখার্জী - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

অণুগল্প ।। পুত্রান্ দেহি ।। মিঠুন মুখার্জী

পুত্রান্ দেহি

মিঠুন মুখার্জী 


ডাক্তার অরিন্দম ঘোষ অর্পিতা মুখার্জীকে সেদিন বলেছিলেন --- " আপনি একটি ছেলে নেওয়ার জন্য এই নিয়ে তিন বার সিজার করার মতো ঝুঁকি নিয়েছেন। যদি ছেলে না হয়, তবে কি চতুর্থবারও আপনারা চেষ্টা করবেন? আপনাদের চিন্তা-ভাবনার ভুলের জন্য জীবনের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ছেলে - মেয়েতে ভেদাভেদ করেন কেন? মেয়েদের কি সংসারে প্রয়োজন নেই?" ডাক্তারের কথা শুনে অর্পিতা বলেন--- " ডাক্তারবাবু আমার তো আর বাচ্চা নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। শাশুড়ি আমায় বলেছিলেন, 'ছেলে দিতে না পারলে এ সংসারে তোমার ঠাঁই হবে না।' তাইতো এবারও।" ডাক্তার অরিন্দম বুঝেছিলেন এখনো শাশুড়িদের দাবি মেটাতে বাংলার অসংখ্য মায়েদের জীবনের বলিদান দিতে হয়। এই সমাজ ব্যবস্থা কবে পাল্টাবে!!
        অর্পিতার স্বামী ডাক্তার অরিন্দমকে আড়ালে ডেকে বলেছিলেন --- " আপনার যত টাকা লাগে আমি আপনাকে দেব ডাক্তারবাবু, কিন্তু যেমন করেই হোক আমায় একটা ছেলে সন্তান দিতেই হবে। আমার এর আগে দুটো মেয়ে রয়েছে তা তো আপনি জানেন। আমার কোটি টাকার সম্পত্তি রক্ষা করার মতো একজন ছেলের প্রয়োজন। তা না হলে আমার বৌকে মা পুনরায় সন্তান নেওয়ার জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি করবেন। আমরাও আর পারছি না।" সমীর বাবুর কথা শুনে ডাক্তারবাবু বলেন --- "সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে তা একমাত্র ভগবান  জানেন। আমরা উপলক্ষ মাত্র। এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সংকীর্ণ চিন্তা- ভাবনা দেখে অবাক হচ্ছি। আপনারা আপনাদের মাকে বোঝান যে, এখন মেয়েরাও ছেলেদের থেকে কোনো অংশে কমতি নেই। তারা ছেলেদের থেকেও অনেক এগিয়ে যাচ্ছে।" মেয়েরাই যে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার পথে মূল অন্তরায় তা ডাক্তার অরিন্দম ভালোমত বুঝতে পেরেছিলেন।
       অবশেষে ডাক্তারের হাতদুটো ধরে সমীর বাবু বলেছিলেন---"ইউএসজি করে আপনারা তো বুঝতে পারেন সন্তান ছেলে না মেয়ে। আমায় শুধু সেটুকু আপনি বলে দিন, তাতেই হবে।" এবার ডাক্তারবাবু রেগে গিয়ে বলেন --- " আমায় ক্ষমা করবেন আপনি। আগে থাকতে লিঙ্গ নির্ধারণ আইনত অপরাধ। আমি একাজ করতে পারব না। কেন বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছেন না! আপনি চাইলে আপনার বৌয়ের সিজার অন্য জায়গায় করাতে পারেন।" এরপর ডাক্তার চলে যান। অর্পিতা মুখার্জী ও সমীর মুখার্জী খুবই টেনশনে পড়ে যান।
     সমস্ত টেনশনের অবসান ঘটিয়ে সাড়ে নয় মাসে অর্পিতা দেবী একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন। এই সংবাদ শুনে সমীরবাবু আনন্দে কেঁদে ফেলেন। সত্যিই প্রত্যেক সংসারে একটি ছেলে যে কত প্রয়োজন তা যাদের নেই তারা বোঝেন। একটি মেয়ে ও একটি ছেলে একটা সুখী পরিবারে খুবই প্রয়োজন। একটি না থাকলে অন্যটির গুরুত্বকে বোঝা যায় না।

=============================

              মিঠুন মুখার্জী
             গ্ৰাম - নবজীবন পল্লী
             পোস্ট + থানা - গোবরডাঙ্গা
             জেলা - উত্তর ২৪ পরগনা
             পিন - ৭৪৩২৫২


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন