google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re রিংকু বিশ্বাসের ছোটগল্প - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮

রিংকু বিশ্বাসের ছোটগল্প

প্রেমালাপ



সকাল থেকে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে।
এমন প্রেমাতুর বর্ষায় প্রেমার ঘরে মন লাগছে না। বৃষ্টির জেরে আজ কলেজ যাওয়াটাও
তার বন্ধ হয়ে গেছে। আবার সকাল থেকে আলাপনের ফোনও আসেনি। বিকালে আজ কলেজ শেষে
দুজনের ঘাটের ধারে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ তো কলেজটা বন্ধ হল, কখন
বৃষ্টি থামবে, কখন আলাপনের ফোন আসবে, কিভাবে বেরোব আজ - এইসব কথা ভাবতে ভাবতে
প্রেমার মনপ্রাণ একেবারে উতলা হয়ে উঠল। আর এমনি সময় হঠাৎ করে ফোনটাও বেজে উঠল।

তাড়াতাড়ি করে ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপার থেকে ভেসে আসা কন্স্বঠরে
এপারের মুখটা এক্কেবারে খুশিতে ভরে উঠল।
'এতক্ষণে মনে পড়ল আমার কথা।'
'আরে কি করব বলো সকাল থেকে ফোনে ঠিকমতো নেটওয়ার্কই থাকছে না।'
'যাও তোমার শুধু ফাঁকিবাজি কথা।'
'সত্যি বলছি বিশ্বাস করো।'
'মিথ্যুক! আড়ি তোমার সাথে।'
'এই দেখো রাগ করে না বাবু। আচ্ছা, যাও ভাব তোমার সাথে।'
ওমনি প্রেমা আলাপনের এইকথা শুনে আর হাসি চাপতে না পেরে খিলখিল করে হেসে উঠল।
'যাক রাগ ভাঙল তাহলে?'
হাসতে হাসতেই প্রেমা বলল, 'হুম, ভাঙল। আচ্ছা শোনো বিকালের কথা তোমার মনে আছে
তো?'
'মনে থাকবে না মানে, আমি তো ভাবছি এখনি ঘাটের ধারে গিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা
করি।'
'আরে পাগল, এখন তোমাকে বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করতে হবে না।'
'শোনো না আজ কিন্তু তুমি শাড়ী পড়ে আসবে।
আচ্ছা বেশ তাই-ই পড়ব।'
'তারপর আমরা দুজনে হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে একটা নিভৃত নির্জন কিনারায়
বসে সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করব আর সেই আলোকচ্ছটায় তোমার অপরূপ
সৌন্দর্যকেও আমার প্রেমাতুর নয়নে উপভোগ করতে করব।'

প্রেমার মুখটা একমুহুর্তের জন্য লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল।

আলাপনের কন্ঠস্বরে নিরবতা ভাঙল, 'কি হল আবার আমার কথায় রেগে গেলে বুঝি?'
'ধুর পাগল, রাগব কেন এমনি তোমার প্রেমাতুর কথাগুলোকে অনুভব করছিলাম।'
'তাই বুঝি!'
'হুম, তাই-ই। আচ্ছা শোনো এখন রাখছি। বিকালে দেখা হলে তোমার কবিতা শুনতে শুনতে
সূর্যাস্ত দেখব কেমন।'
'আচ্ছা, তাহলে ওই কথা-ই রইল।'
'হুম, টাটা।'
'বেশ; সময়মতো চলে এসো। আমি তোমার অপেক্ষায় রইব।'

ফোনটা রেখে প্রেমা বিকালের কথা ভেবে মনে মনে খুব আপ্লুত হল। এদিকে বেলা বাড়ার
সাথে সাথে বৃষ্টিও থেমে গিয়ে সূর্যদেবও আকাশে দেখা দিলেন। ঠিক সময়মতো আলাপনের
কথামতো উপহার হিসাবে তারই দেওয়া একটি শাড়ী পড়ে হালকা সাজে সে ঘাটের ধারে
পৌঁছে দেখল আলাপন আগে থেকেই তার পছন্দের একগোছা হলুদ-সাদা গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে
আছে। প্রেমাকে দেখে আলাপনের চোখে-মুখে হাসি ফুটে উঠল। গোলাপের গোছা প্রেমার
হাতে দিতে দিতেই আলাপন কবিতার ছন্দে প্রেমার সৌন্দর্যের প্রশংসা করল,
"হে অপরূপা, তোমার লাগিনু আনিয়াছি এ গোলাপগাছি
কিন্তু, তোমার লালিমায় হার মানিয়াছে এ গোলাপগাছি।"
আলাপনের হাত থেকে প্রেমা লজ্জানত মুখে গোলাপের গোছা নিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
"হে প্রিয় আমি শুধুই তোমার প্রেমে অপরূপা
তোমার হৃদয়াতুর পরশেই আমি অপরূপা।"

তারপর দুজনে দুজনে পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে সূর্যাস্তের আলোকচ্ছটা
উপভোগ করার জন্য এক নিভৃত নির্জন কিনারায় গিয়ে বসল। সূর্যাস্তের আলোকচ্ছটায়
একে অপরকে প্রেমাতুর নয়নে মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকল। এমনই সময় হঠাৎ চারিদিক ঘনঘটা
হয়ে শুরু হল অঝোর বারিধারা আর এই রারিধারাতেই শুরু হল প্রেমা আর আলাপনের এক
বৃষ্টিস্নাত প্রেমালাম।
আকাশে-বাতাসে চারিদিকে বাজতে থাকল প্রেমের গান-
"রিমঝিম গিরে সাওন, সুলগ সুলগ যায়ে মন
ভিগে আজ ইস মৌসম মে লাগি কেইসি এ আগন।"

*****************************************

#কলমে - রিংকু বিশ্বাস
ভীমপুর, নদীয়া-৭৪১১৬৭
পশ্চিমবঙ্গ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন