মা
জরায়ু দেওয়াল আঁকড়ে রক্তের ছিটে,আমি।
ছিটে থেকে কণা,কণা থেকে পিন্ড
তারপর পূর্ণাঙ্গ।সযত্নে লালিত...
জন্মের ক্ষণ কতটুকু শুভ ছিল জানা নেই!
চিরায়ত কান্না শুনে,শত কষ্টেও ;
তোমার শুকনো ঠোঁটে ছিল মৃদু হাসি।
ঈশ্বরীয় অমৃত সুধায়,
আমার নরম বুকের পাটা, একদিন শক্ত হলো ;
সীমান্ত ছুঁলো অকপটে ।
তোমার আঙুল ধরে প্রথম হাঁটতে শেখা,মা
তোমার বিদুর সুরে সুর মিলিয়ে প্রথম কথা বলা,
তোমার লেখায় আঙুল রেখে প্রথম বর্ণমালা।
ছেলেবেলার হাসি-কান্নার সাথি, তুমিই।
তখন কিশোর,তখন বন্ধু,তখন খেলার মাঠ
সন্ধেবেলা দেরি হলে, 'বাবু -বাবু' হাঁক।
খুব রাগ হতো।
যখন কলেজ-
পুজো,পাড়ার রক,বাড়ি ফিরতে মাঝরাত
তোমার ঘনঘন ফোন।কেটে দিতাম।
মনে হতো জ্বালাতন।
আমার কৌটো ভরা গোঁসা,অবিবেকী দোতলার দরজা;
তোমার আদরের ঠকঠক,আকছার রোজা।
পায়ে ব্যাথা নিয়ে ঠায় দাঁড়াতে,রোদসী ধৈর্য্য,
আমার রাগ,তর্ক, ইচ্ছাকৃত অগ্রাহ্য...
মা-
কখনো অক্রোধের চূড়ায় বসে হিসেব করিনি,
তুমি কি পেলে !
অবজ্ঞাতেও কখনো হেসেলে উঁকি দিয়ে দেখিনি,
সারাদিন কি খেলে !
ভাবান্তরেও ভাবা হয়নি,
কত রাত বিনিদ্র থেকেছো,
কিভাবে শেষ হচ্ছো তিলে তিলে !
তোমায় চিরকাল শাসনের প্রতিমূর্তি'ই ভেবেছি,
রাতের পর রাত যে চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে,তাকে;
অসামাজিক কোনোও সুলতানের সিংহাসন ভেবে এসেছি।
মমতা বুঝিনি।
অন্ধ ছিলাম...
যেদিন চোখ খুলল- ঘোর চক্রবাত
তুমি নেই,শুধু ধুলো আর অনুতাপ প্রপাত।
যখন অমলিন চাঁদের দিকে দেখি
তোমার ধরণীসুতা মুখটা ভেসে ওঠে,
হেরেও জিতে যাওয়া তুমি,আমার মা।
হারিয়েছি আমি।
জানো?
আর কেউ দরজায় ঠকঠক করে না,
কেউ জানতেও চায় না খেয়েছি কি-না,
রাত জেগে অপেক্ষাও না।
একটা শেষ সুযোগ;
প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই, মা,
পায়ে ধরে বলতে চাই, 'ক্ষমা।
ক্ষমা করে দাও মা।আর কখনো হবে না।'
ফিরে এসো একবার,
ফিরে এসো তুমি, মা...
========
সৌরভ ঘোষ
মুন্সিরহাট,হাওড়া