খোলা চোখে স্বাধীনতা: একটি আন্তরিক স্বীকারোক্তি
জীবনের দোড়গোড়ায় আরো একটি স্বাধীনতা দিবস। 'স্বাধীনতা'কথাটার পরিব্যাপ্তি আজও বোধহয় বুঝে উঠতে পারলাম না। ঠিক কতটা স্বাধীন হয়েছি আমরা, কতটা পেরেছি ইচ্ছে কে হাতের মুঠোয় পুরে জীবন নদী অবগাহন করতে, জন্মসূত্রে প্রাপ্ত মৌলিক অধিকার গুলো কতটা নিজেরা ভোগ করতে পারছি, কতটা অন্যকে ভোগ করতে দিতে পারছি এসব আমাকে খুব ভাবায়। স্বাধীনতা দিবসের দিন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যখন মিছিলে পা মেলায় রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে কাজ করা সমবয়সী ছেলেটা,কিংবা অন্যের বাড়ি বাসন মাজতে থাকা মেয়েটা ,অথবা নর্দমার মুখোমুখি কাগজকুড়ুনি ছেলে গুলো আধিকার করে বসে আমার সমস্ত স্বত্বা। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরেও আমরা ঐ শিশুগুলোকে দিতে পারলাম না একটু স্বাভাবিক জীবন! তাদের মুখে বসাতে পারলাম না প্রাণের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত। এ ব্যর্থতা কি আমাদের সবার নয়? আমি আপনি আপনারা আমরা কি একটু একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি না তাদের দিকে অন্ততপক্ষে ঐ একটি গৌরবময় দিনের জন্য। ধরুণ আমরা যারা শিক্ষিত নাগরিক, জীবনে প্রতিষ্ঠিত আমরা প্রত্যেকে যদি একটি একটি বাচ্চাকে নিয়ে হাজির হই তেরঙ্গা পতাকার সামনে , ছোলামুড়ি খেতে খেতে আনন্দঘণ মুখের হাসি দেখে কি সর্বশ্রেষ্ট সুখ পাবেন না নেতাজি, ক্ষুদিরাম রা।স্বাধীনতা দিবস কি সত্যিই স্বার্থক হবে না! আলোয় আলোয় ভরে উঠবেনা চারিদিক?
এছাড়া ও যে সমস্ত মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু কেটে যায় অথচ নিজের দেশের নামটাই হয়তো ঠিক মতো শোনা বা বলা হয়ে ওঠে না ,ঠোঁটের আগায় ফুটে ওঠে না জাতীয় সঙ্গীত, জীবনের পুরোটা জুড়েই শুধু অন্যের গোলামী, দুমুঠো ভাতের জন্য হাহাকার, জীবন সংগ্রাম মূলত উদরপুর্তিকে ঘিরে, বিলাস ব্যসন নেহাত জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার মতো...এই সফ শত সহস্র মানুষের স্বাধীনতা কোথায়? যাপনে মননে কোথায় তার ছাপ? আমরা দেখে ও দেখিনা, বুঝে ও বুঝিনা।
চোখের সামনে উধাও হচ্ছে মাটির নীচের পানীয় জল, পুঁজিবাদীরা গ্যালন গ্যালন জল নষ্ট করে বানাচ্ছে বোতল বোতল ঠান্ডা পানীয়, মাটির নীচের জল ক্রমশ শেষ হচ্ছে, আমরা সাধারণ মানুষ চিন্তিত হয়রান।পুঁজিবাদীদের থোড়া কেয়ার..... তাদের পকেটে রাশিরাশি ডলার, হাতের নাগালে ব্র্যান্ডেড ওয়াটার পিউরিফায়ার। যে পানীয় জল, তাজা অক্সিজেন, বিশুদ্ধ খাদ্য পৃথিবীতে জন্মগ্রহণকারী জীব হিসেবে আমাদের অন্যতম অধিকার তা ও চুরি হয়ে যাচ্ছে অবাধে, আমরা নীরব ,চুপ, স্থির।
বুকের নীচে ভয়,বুকের ওপরে কালোঘাম, জীবন জুড়ে ক্ষমতাধারীর আস্ফালন, কাল যে ছিঁচকে চোর আজ সেই নেতা, ক্ষমতার ঈশ্বর,চাইলেই আমাকে করতে পারে একঘরে, তুলে নিয়ে যেতে পারে আমার ষোড়শী কন্যাকে, রাস্তা ঘাটে হেনস্থা করে দিতে পারে বাড়ির লোকজনকে, নিদেনপক্ষে দু'একটা কেস তো খাইয়ে দিতে পারেই সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।আমার ভেঙে যাওয়া মেরুদন্ড প্রিয়জনেরা জানে, আমার সন্তানের ভেতরে আমি অনর্গল ঢুকিয়ে দিতে চাই এমনই এক গা শিরশিরে ভয়, রুখে দিতে চাই তার সাহসী পদক্ষেপ.... এইভাবে মৃতপ্রায় মানুষের মতো জীবন আগলে বসে থাকি আমি... বেছে নিই কোনোরকম টিকে থাকা মাটি মায়ের কোলে, এবং পনেরোয় আগষ্টে আমি ও গেয়ে উঠি - "এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না তো তুমি/ সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।"
===============