ট্র্যাজিক নায়ক : সুভাষচন্দ্র বসু
দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীন হলো ভারত । ফিরে এলেন না আমাদের যৌবনের প্রতীক নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু।বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু কাহিনী দেশময় চাউর হলেও আজও তা আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য।বিমান দুর্ঘটনার কাহিনী তে এতো বেশী ছিদ্র যে অলীক কথকথার জল সহজেই সেখানে ঢুকে পড়ছে।
এত বড়ো মাপের একজন নেতার মৃত্যু কাহিনীর তথ্য প্রমাণ এতো বেশি অকিঞ্চিৎকর যে পরস্পর বিরোধী স্বাক্ষ্য এবং গোপনীয়তার চেষ্টা নানা রকম সন্দেহের উদ্রেক করে । জাপানের রনকেজী মন্দিরে অবস্থিত ছাই কাহিনী ও আমাদের মনে বিশ্বাসের তত্ত্ব উপস্থিত করতে পারে না।
বিশ্ববরেণ্য সর্বভারতীয় নেতার প্রতি আমাদের আবেগ, আমাদের আবেগের উচ্ছলতা স্বাভাবিক ভাবেই উথলে ওঠে।তিনি ছিলেন একাধারে কবি গুরুর স্নেহ ধন্য,চিত্তরঞ্জন দাশের পুত্র তুল্য এবং স্বামী বিবেকানন্দের উত্তরসূরী।উচ্ছল তারুণ্যের মূর্ত প্রতীক সুভাষচন্দ্র বাঙালি জাতিকে সাহস ও তারুণ্যের দীক্ষা দিয়েছেন।ভীরু বাক্যবাগীশ বাঙালি জাতি একজন উচ্চ শিক্ষিত, প্রখর বুদ্ধি সম্পন্ন,অশ্বারোহী অস্ত্রধারী নেতা পেয়ে ধন্য হয়েছিল।
দেশভাগের পর বাঙালি জাতি এই নেতাকে প্রায় দেবতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে কুন্ঠাবোধ করেনি । আজও সমগ্র বাঙালি আমরা বিশ্বাস করি কেবল তিনিই হতে পারতেন একমাত্র মুক্তি দাতা।
নিত্য নতুন বুদ্ধি র কার্যক্রমে ইংরেজরা দিশেহারা ।তাদের চোখে ধূলো দিয়ে দেশত্যাগ করেন । এই অবিসংবাদিত নেতা যদি বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে আসতেন তবে হয়তো ভারতের রাজনীতি কোনদিকে মোড় নিতো তা বলা শক্ত । তবে এটুকু বলা যেতেই পারে ভারতীয় রাজনীতিতে যে আলোড়ন শুরু হতো তাতে কোন সন্দেহ নেই । দেশভাগের পর জাতীয় রাজনীতিতে তখন ডামাডোল অবস্থা ।যে যার আখের গোছাতে ব্যস্ত। তখন গান্ধীজি, জহরলাল নেহেরু, বল্লবভাই প্যাটেল প্রমুখ নেতাদের রাজনৈতিক কূটকাচালী ও আমাদের প্রিয় নেতার অনুপস্থিতিতে বাঙালীদের স্থান ক্রমেই গৌণ হতে থাকে জাতীয় রাজনীতিতে।এর সঙ্গে যোগ হয় ইংরেজদের কূটীল চক্রান্ত । এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রিয় নেতার অজ্ঞাতবাস তাই নানা বিষয়ে অলৌকিক কাহিনীতে ভরা।
প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গ এই সুযোগে তার প্রতি কুৎসা রটাতেও দ্বিধা করে নি ।এমনকি দেশদ্রোহিতার তকমা গায়ে লেপ্টে দেওয়ার চেষ্টা ও হয়েছে বিস্তর।জার্মান ও জাপানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন বলে রাশিয়াপন্থী সমাজবাদীর তল্পিবাহকেরা রে রে করে তেড়ে এসেছিল ।অথচ ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নে যুদ্ধতো ইংরেজদের বিরুদ্ধে।তাই জাপানের সাথে হাত মিলিয়ে যুদ্ধ করাতো আসলে নেতাজির সমর কৌশল।লোকমুখে একটা প্রশ্ন তখন ঘুরপাক খাচ্ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যদি মিত্র বাহিনীর পরাজয় হতো তবে কি আমাদের জাপানের প্রভুত্ব মেনে নিতে হতো। নানাবিধ অবান্তর প্রশ্ন নিয়ে অযথা কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি ও হয়েছে বিস্তর। পরে যখন লোকের নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন তখন নিজের থুতু নিজেরাই খেয়েছেন।
তিনি সর্বভারতীয় হয়েও বাঙালি নেতা হিসেবে বেশী পরিচিত। তিনি বেশী বেশী করে বাঙালি, উচ্চ শিক্ষিত, উচ্চাকাঙ্ক্ষী , চিরচঞ্চল এবং সুদূরের পিয়াসী। তার বক্তব্য ছিলোস্বাধীনতার জন্য সোজা আঙুলে ঘি না বেরুলে আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে । অন্য বিকল্প পথের সন্ধান করতে হবে ।আর সে পথ যতই দুর্গম হোক না কেন ।এই দুর্লঙঘ্য মানসিকতায় তাকে দ্বীপবাসী নেতা করে তুলতে আত্মিক সমর্থন যুগিয়েছিল ।
সুভাষচন্দ্রর সংবিধানে ছিলো না সময়, ধৈর্য্য, তিতিক্ষা আর সমঝোতা।গান্ধীজী সুভাষ চন্দ্র সম্বন্ধে বলেন "আগুনের অভাব নেই সুভাষের জীবনে ,অভাব কেবল কলাকৌশল আর কূটনীতির" ।-আরও অভাব ছিলো রাজনৈতিক ক্ষমতা আর চরিত্র বিচারে। তিনি সর্বদাই উগ্র বিপ্লবে বিশ্বাসী ।আর এই বাসনায় তাকে স্বদেশ ত্যাগে জুগিয়েছিলো মদত । তিনি যথার্থই সত্যনিষ্ট , নির্ভীক, সত্যসন্ধানী একম্ অদ্বিতীয়ম অপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশনায়ক। তিনি প্রতি টি সভায় আহ্বান জানিয়েছেন হয় স্বাধীনতা না হয় মৃত্যু ।তাই ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সুভাষ চন্দ্র ট্রাজিক চরিত্র।
এমন এক মহামানবের জীবন কর্ম যদি স্বাধীন ভারতবর্ষের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হতো তবে হয়তো আমরা অন্য ভারতবর্ষের সন্ধান পেতাম। যার সমগ্র জীবন ঘিরে এতো উত্তেজনা এতো প্রশংসা এতো বিতর্ক, তার মৃত্যু নিয়েই বা কেন শান্তিতে থাকতে পারবো।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে তাঁর মৃত্যু হোক বা না হোক আমাদের চোখে তিনি যৌবনময় তেজস্বী মহাপুরুষ।তিনি আমাদের চোখে যৌবনের প্রতি মূর্তি । সমগ্র বাঙালি তথা ভারতীয়দের কাছে আজও সদাজাগ্রত জিজ্ঞাসা। তাই সুভাষ চন্দ্র বসু ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক ট্রাজিক চরিত্র ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না ।
====================================
আবদুস সালাম
প্রয়াস, শ্রীকান্তবাটি মাদারল্যান্ড
ডাক রঘুনাথগঞ্জ মুর্শিদাবাদ742225
9734332656