google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প : অঞ্জনা গোড়িয়া - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২০

অণুগল্প : অঞ্জনা গোড়িয়া




কম্বল 


গায়ে একটা  ছেঁড়া  চাদর জড়ানো। মেয়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাধা। রামবাবুর অপেক্ষায়।
রামবাবু খুব দয়ালু, উদার মনের মানুষ।  লোক মুখে তাই শুনে,  ছুটে এসেছে  রাধা।  গ্রামের এক কোণে  খড় কুটো আর তাল পাতার ছাউনি ঘেরা কুঁড়েঘরে  থাকে। মায়ে ঝিয়ে কোনো  মতে মাথা গোজার ঠাঁই । বিছানা  বলতে একটা  ছ্যাঁদলা তার ওপর  ছেঁড়া  কাঁথা। সামনে ই শীত আসছে। গায়ে দেওয়ার মতো  কিছু নেই। খবরটা  শুনেই  মায়ে ঝিয়ে  ছুটে  এসেছে।
 গরীব  দুস্থদের  নাকি পাড়ার ক্লাব থেকে  কম্বল দেওয়া  হচ্ছে।  সেই সঙ্গে  শীতের চাদর।  কম্বল টা পেলে মেয়েটা নিশ্চিন্ত মনে  ঘুমাতে  পারবে। কনকনে  ঠান্ডায় কেমন  গুটিয়ে  শুয়ে থাকে। 
নিজের  কথা ভাবে না। রাধা কাপড়টা জড়িয়ে কোনো  ক্রমে ঢেকে রেখেছে সামনেটা।  শীতের পোশাক  বলতে ছেঁড়া  একটা  চাদর।  আগের বছর দত্তদের বাড়ি থেকে দিয়েছিল। তাই গায়ে ঢাকা দিয়ে  মেয়েটার  কোনো  রকম শীত কাটছে।
বড় গাড়িতে  বাড়ি ফিরছিল রামবাবু। হঠাৎ  ওদের দেখে  থমকে  গেল  গাড়ি। তারপর  আর কিছু  জানা যায় নি।  
সেই রাতে আর মায়ে ঝিয়েকে কেউ দেখল না গাঁয়ে। 
সবাই  অবাক। এমনি করে প্রতিরাতেই   রাধা  আর তার মেয়ে কোথায় যেন চলে যেত।
 কিছুদিন যেতে না যেতে ই রাধার ঘরে নতুন কম্বল নতুন চাদর। মেয়েটার জন্য নতুন সইডার। 
গাঁয়ের  মানুষ  খবর পেয়েছে  সামনেই বাড়ি তৈরি  করার টাকা ও সেন্সন হয়েছে।
 এই নিয়ে কানাকানি, ফিসফিসানি  চলতে ই থাকে। রাধা কোনো  কিছুই গায়ে মাখে না।  অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের  অভাব দূর হলে আর কিসের ভাবনা?
আজ বুক ফুলিয়ে বলতে পারে রাধা , "আমি সব চেয়ে বেশি  সুখী"। 
 রাস্তা দিয়ে যখন  ফিরে আসে বাড়ি।গাঁয়ের কিছু  বউ মেয়ে মুচকি  মুচকি  হাসে।
গতর দিয়ে  যাহোক  রাধার বাড়িটা পাকা হলো। 
আমরাও যদি যেতাম, এমন কত কি হয়ে যেত।
 রাধা, কোনো  কথার উত্তর  দেয় না। 
 প্রতি  রাতেই মেয়েকে নিয়ে চলে আসে রামবাবুর বাড়ি।
 সাড়া পাড়া ঢি ঢি পড়ে গেল। শেষ  পর্যন্ত  কিনা রাধা, নিজের শরীর দিয়ে---- ছি ছি। 
 রাধার মুখে কথা নেই।  বাড়ি হলো।  শীতের চাদর  কম্বল পেল ক্লাব থেকে। 
একদিন রাতে পাড়ার লোক রাধাকে অনুসরণ  করল। কোথায় যায়? কি করে? হাতে নাতে ধরে কিছু  একটা  বিহিত  করতে হবে। গাঁয়ের  ইজ্জত  বলে কি কিছু নেই।
রামবাবু কে কিছু  বলার সাহস  ছিল না কারোর। ক্লাবের প্রেসিডেন্ট  ইনি।আবার সব থেকে ধনী লোক এই গাঁয়ের। 
গরীব  রাধাকেই কলঙ্কিনী  করা খুব  সোজা।
তারা সোজা এসে পৌঁছায়  রামবাবুর বেডরুমে । রাধাকে হাতে নাতে ধরতে।
এসে দেখে রাধা অসুস্থ  এক মহিলাকে  খাইয়ে  দিচ্ছে। যার দুটো  হাত ই অবশ।  পাদুটো ও নাড়তে পারে না।  রামবাবুর অসুস্থ  স্ত্রীর  দেখাশোনা  করতে ই রাধা রোজ রাতে  আসে। সেদিন প্রথম  দেখেই স্ত্রীর  কাছে নিয়ে গিয়ে ছিল রাধাকে। রাধাকে খুব পছন্দ  হয়ে যায় রামবাবুর স্ত্রীর।  সেদিন থেকেই  রাধা রাতের সেবিকা হিসাবে সেবা করে রামবাবুর স্ত্রীকে।   রাধা এখন খুব খুশি।  শীতের হাত থেকে  বাঁচতে পেয়েছে এক জোড়া কম্বল। রামবাবুর স্ত্রীর  অনুরোধে।