google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প ।। তাসফীর ইসলাম (ইমরান) - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০

গল্প ।। তাসফীর ইসলাম (ইমরান)



ভালো থেকো তুমিও

 


"পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। ইনি হলেন রুদ্র শেখর, আমার অফিসের বস। আর স্যার, ও হলো মেঘবালিকা , আমার স্ত্রী।"

আমি মিষ্টি করে হাসলাম মেঘবালিকার দিকে তাকিয়ে। কিন্তু মেঘবালিকা চোয়াল বিস্ময়ে ঝুলে পড়েছে।

"রুদ্র তুমি? এত্ত দিন পর?.... তুমি কি তানভীরের বস? অথচ অথচ...."

অথচ আমি তার প্রাক্তন প্রেমিক, এ কথাটা মেঘবালিকার মুখ দিয়ে একবারের জন্যেও বের হলো না।

তানভীর সাহেবও বেশ অবাক হয়েছেন বলে মনে হলো।

"মেঘবালিকা, তোমরা কি আগে থেকে পরিচিত?"

মেঘবালিকা কিছু বলার আগেই, আমি দ্রুত বললাম-"হ্যা তানভীর সাহেব, মেঘবালিকা আমার ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড।"

তানভীর সাহেব মুক্তাঝড়া হাসি দিলেন-"রিয়েলি? দ্যাট'স আ গ্রেট সারপ্রাইজ!"

মেঘবালিকা এখনো ভীষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর চিন্তা আমি স্পষ্ট ধরতে পারছি। আমি একসময় বইয়ের মতো পড়তে পারতাম এই মেয়েটাকে।

মেঘবালিকা নিশ্চয়ই ভাবছে, চার বছর আগে যে ছেলেটার সাথে দীর্ঘদিনের ভালবাসার সম্পর্ক কোন কারণ ছাড়াই এক লহমায় চুকিয়ে দিয়েছে, কাউকে না জানিয়েই বাবার পছন্দে আমেরিকা ফেরত ছেলের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছি, সেই ছেলেটা এত দ্রুত শক কাটিয়ে এত ভাল একটা পজিশনে স্টাবলিশড হলো কি করে?

"কি ভাবছ মেঘবালিকা?"

তানভীর সাহেব তার এক কলিগের সাথে গল্প করছেন, এদিকে খেয়াল নেই। এই ফাঁকে প্রশ্নটা করলাম মেঘবালিকাকে।

"কিছু ভাবছি না, তুমি ভালো আছো?"

"কিছু তো একটা ভাবছই!"

"আমি...আমি আসলে অবাক হচ্ছি তোমাকে দেখে। আমি ভাবতাম খুবই দুর্বল মনের ছেলে তুমি। আমি তোমাকে না জানিয়ে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করেছি, এই ধাক্কাটা এত দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে ধারণা ছিল না আমার। সবসময়ে এক ধরনের অপরাধবোধে ভুগতাম তোমার কথা ভেবে। অথচ তুমি দিব্যি সুখেই আছো!"

আমি মৃদু হেসে বললাম, "দেখলে তো তোমার ধারণা ভুল। আসলে তোমার যেদিন বিয়ে হলো, সেদিনই আমি স্কলারশিপ নিয়ে ডেনমার্কে পাড়ি জমাই। দু'বছর পর পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরি। তারপর ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কাজটা জুটিয়ে ফেলি তোমার হ্যাজব্যান্ডের অফিসে। অবশ্য তানভীর যে তোমার বর সেটা আগে জানতাম না!"

মেঘবালিকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল-

"যাক, তুমি বাঁচালে আমায়। আমি তো সবসময় তোমার কথা ভেবে ভেবে দুঃশ্চিন্তায় ভুগতাম।"

আমি আস্বস্তের হাসি হাসলাম।

দু'ঘন্টা পর। অফিস পার্টি শেষ। তানভীর আর মেঘবালিকা হাত ধরাধরি করে গাড়িতে গিয়ে উঠল। মেঘবালিকাকে উঠিয়ে দিয়ে তানভীর হেটে এল আমার দিকে। আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল-

"ধন্যবাদ রুদ্র। সত্যি, আপনার অভিনয়ের প্রশংসা করতে হয়। এই অভিনয়টুকু না করলে মেঘবালিকা কখনো সুখী হতো না।"

আমি আমার সেই অস্বস্তিকর হাসিটা দিলাম আবার।

তানভীর-মেঘবালিকার গাড়িটা চলে গেল দূরে, অনেক দূরে......ওরা চলে যেতেই আমার বুকটা হাহাকার করে উঠল, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হলো- "আমি মিথ্যে বলেছি মেঘবালিকা। আমি অফিসের বস নই! আমি টিউশনী করে চলা, পুরনো গেঞ্জি পড়া হলে থাকা অকর্মা- সেই বেকার যুবকটা। যেদিন তোমার বিয়ে হলো, সেদিন আমি ডেনমার্ক যাইনি। আমি সারারাত ছাদে বসে থেকেছি... তোমার কথা ভেবেছি । তোমার ধারণা ঠিক, আমি মানসিক ভাবে আসলেই দুর্বল। আমি ভালো নেই মেঘবালিকা, আমি ভালো নেই।
জানি না কেন, এরপর আমি আর সামনে দাঁড়ানো মেঘবালিকার মুখ দেখতে পাব না। শুধু আমার নিজেকে দেখতে পাব। যেন চারদিকে আয়না। আয়না নাকি প্রতারণা করে না—যা সামনে থাকে, তা-ই ফুটিয়ে তোলে। অথচ প্রতিফলনে ইস্ত্রি করা পরিপাটি শার্ট-প্যান্টের সঙ্গে মিলিয়ে পরা আমার চকচকে জুতো আর বেল্ট—সব ঠিকঠাক থাকলেও আমার মুখ টা হয়তো আর ঠিক থাকবে না। নিজের অবয়ব হারিয়ে আমি তাকে খুঁজে ফিরব যেন কতকাল। জানি না কোন ভঙ্গি অদেখা মুখটাতে মানাবে। সেই ভঙ্গিটা আমি পাগলের মতো খুঁজে ফিরব। খুঁজতেই থাকব। সেই পর্যন্ত মেঘবালিকা তুমিও ভালো থেকো।

ভালো থেকো তুমিও!!


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন