google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প ।। এক ডেচকি জল ।। প্রতীক মিত্র - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২

গল্প ।। এক ডেচকি জল ।। প্রতীক মিত্র



এক ডেচকি জল

প্রতীক মিত্র

 
বাড়িতে আজকের সমস্যাটা রীতিমত বড়। নাক চাপা দিয়ে স্রেফ পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মত নয়। বাড়ির মূল কত্তা সর্বেসর্বা অজিত বাবু বাড়ির একতলায় রান্নাঘর আর বাথরুমের পাশে ছোট্ট একটা ঘরে শুয়ে আছেন।থাকতেই পারেন।তার বয়স আশি হল।শরীরে পীড়া ক্লান্তি দুর্বলতা রোগ থাকাটাই স্বাভাবিক।তার জন্য বিশ্রাম...কিন্তু না এটা ঠিক তেমন ব্যাপার নয়। নয় বলেই তার দুই ছেলে, দুই পুত্রবধু, তিন নাতি-নাতনি, বউ, ক'দিনের ছুটিতে আসা মেয়ে, জামাই, তাদের ছেলে, বাড়িতে কাজ করে যারা তারা সবাই... চিন্তিত।অন্য দিন অন্য কোনো দিনই এমন সকালে অজিত বাবু এমন মুখভার করে শয্যা নেন না তাও ওই একতলার কোণের ঘরটাতে।তার প্রেসার বেড়েছে।মাথাও নাকি ঘুরছে।আগের চেয়ে অনেক অনেক বেশি দুর্বল লাগছে। হাউস ফিজিশিয়ানকে ডাকা হয়েছে। যদিও ওর হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এতে ফায়দা খুব একটা হবে না। এতদিন এতগুলো বছর দাপটের সাথে জীবন যাপন করে আজ একটু আগে সকালে উনি বেশ বুঝতে পেরেছেন আর নয়।আর বুঝি সম্ভব নয়।পরাজয় এবার বুঝি নিশ্চিত।সময়ের কাছে, জীবনের কাছে।নির্ভরশীলতাই এর পর থেকে ওর আর একটা সমনাম হয়ে দাঁড়াবে।লোকে ঘরে এবং বাইরে সকলে ওকে সমব্যথা দেখাতে থাকবে।বয়সের কারণে অভিজ্ঞতার কারণে প্রাজ্ঞতার কারণে যে সম্মান আর সম্ভ্রম তিনি অ্যাদ্দিন পেয়ে এসেছিলেন সেটার বদলে এখন থেকে শুধুই করুণা মিলবে আর মিলবে তার আনুষঙ্গিক যত্ন এবং খেয়াল।সবাই এবার থেকে ওকে ওর বাড়ির শিশুদের থেকেও বেশি চোখে চোখে রাখবে এইভেবে যে যে কোনো মুহুর্তে ওর কিছু একটা হয়ে যেতে পারে।মৃত্যু ভয়কে সমান্তরাল বানিয়ে এমন দোসর করে এগোনোর ইচ্ছে ওর একদমই নেই।নেই বলেই অজিত বাবু একতলায় ওই কোণের ঘরটায় আশ্রয় নিয়েছেন হঠাৎই যে ঘরটা তার বরাবরের অপছন্দ যেহেতু ও ঘরেই কোনো এক সময় ওর পিতা রেগে গেলে ওকে আটকে রাখতো।তাছাড়া ওর মায়ের মৃত্যুও হয়েছিল ওই ঘরে।বাড়ির সমস্ত নেতিবাচকের ঠাঁই যেন ওই ঘরে।তাই কি ওই ঘরটাই বেছে নিলেন উনি? ডাক্তার এসেছে।পরীক্ষা করছে।কথা হচ্ছে বাড়ির মূল কত্তার সাথে যিনি অন্য দিন এই সময়ে বাড়ির বাগান চষে ফেলেন ফুল তুলতে পুজোর জন্য।তারপর বালতি করে জল।তারপর সেই জল থেকে এক ডেচকি সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে ব্যলকনির পাঁচিলে রাখেন রোদে গরম করার জন্য।এসবই তার গত বিশ বছরের অভ্যেস।কোনোদিনও তার অন্যথা হয়নি। আজও ডেচকি রাখতে গিয়েছিলেন।পাঁচিলের ধারে রাখবার সময় মাথাটা একটু ঘুরে যায় আর হাতটা যায় কেঁপে। ডেচকির সব জল পড়ে গিয়েছিল নিচে।আর একটু হলে বাসন মাজে যে মেয়েটি তার মাথায় পড়তো।বুড়ো মানুষ।হতেই পারে ভেবে তাছাড়া বাড়ির মূল কত্তা বলে সেও আর কিছু বলেনি।কিন্তু অজিতবাবুর কাছে এটা একদমই নতুন। এবং অনেক বাজে কিছুর ইঙ্গিত বহন করছে। কেন এমনটা হল না ভেবে তিনি তার কপালকে মেনে নিয়েছেন।মেনে নিয়েছেন বাস্তবটাকে।ডাক্তার দেখছে দেখুক। তিনি বুঝে গেছেন আর কিছু হওয়ার নয়। বাড়ির আজকের সমস্যাটা তাই বড়। নাক চাপা দিয়ে পাশ কাটাতে কেউই পারছে না।ওর অনুশাসন নিয়ম শৃঙ্খলা অভ্যেস সবারই জানা।সেটা যখন হয়নি তখন...অজিত বাবু ওই একতলায় কোণের ঘরটাতে শয্যা নিয়েছেন। নিজের কপালকে, বাস্তবকে শেষমেশ তিনি মেনেই নিয়েছেন।
 
=====================

প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235, পশ্চিমবঙ্গ






























কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন