রাখে হরি মারে কে
মিঠুন মুখার্জী
সকাল সাতটার সময় অমরেশ ঘুম থেকে উঠে বাবাকে বলেন---"বাবা আমার বাঁ চোখের পাতাটি কেমন যেন লাফাচ্ছে! এটা কি কোন খারাপ ইঙ্গিত দিচ্ছে?" বাবা সমরেশ চক্রবর্তী ছেলেকে বলেন---"এগুলি মনের ভুল, কুসংস্কার। এতে কিছুই হয় না। ডান চোখ লাফালে ভালো কিছু হয় না যখন, তখন বাঁ চোখ লাফালেও কিছুই হবে না। অমরেশ সেই দিনই চাকরি-সুত্রে চেন্নাই যাচ্ছিলেন। চেন্নাইতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার তিনি। পাঁচ বছর ধরে চেন্নাইতে চাকরি করছেন। বাড়িতে আসেন বছরে একবার। প্রত্যেক বছরের মতো এবছরও একমাস আগে বাড়ি এসেছিলেন। অমরেশের বয়স আঠাস বছর। বাবা সমরেশ চক্রবর্তী অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। ২রা জুন ছেলেকে শালিমার স্টেশনে দিতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু বুঝতে পারেননি ছেলের জীবন সংকট সামনে উপস্থিত। শালিমার থেকে সঠিক সময়ে করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়েছিল। বাবা সমরেশ চক্রবর্তীর বাড়ি ফেরার সময় মনটা কেমন যেন অস্থির লাগছিল। তবে এই সকল কুসংস্কারে তিনি তেমন কোন আমল দেননি।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ অমরেশ পিতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তখন সমরেশ চক্রবর্তী বাড়িতে। মা ও একমাত্র বোন আরাধ্যাও সেই ভিডিও কলিং-এ তার সাথে কথা বলেছিল। অমরেশের মা বলেছিলেন--- "লাগেজের মধ্যে টিফিন কারিতে চাওমিন দিয়ে দিয়েছি। রাত নটার সময় খেয়ে নিস। আর ট্রেনে কারো সাথে কোন ঝামেলায় জড়াবি না। ফ্লাক্সের মধ্যে গরম জল করা আছে। সন্ধ্যা ও সকালবেলা চা করে খেয়ে নিস। চা না খেলে তোর মাথার যন্ত্রণা হতে পারে। আর সাবধানে যাস। কাল সকালে ট্রেন থেকে ব্রেকফাস্ট ও দুপুরের লাঞ্চটা সেরে নিস।" অমরেশ মার কথাগুলো শুনে বলেছিলেন---"মা, আমি কি এখনো খুব ছোট? তুমি এভাবে সব বলে দিচ্ছ। তুমি চিন্তা করো না। সবকিছু সময় মতো মনে করেই করবো। তুমিও ভালো থেকো। এবার পুজোয় একবার আসবো ভাবছি।" দাদার পুজোয় আসার কথা শুনে বোন আরাধ্যা বলে--- "খুব মজা হবে দা ভাই। ভাবতে পাড়ছি না তুই আসবি। কিন্তু গত পাঁচ বছর তোকে পুজোর সময় পাইনি। খুব মিস করেছি। এবার তুই এলে কলকাতায় অনেক ঠাকুর দেখব। আনন্দ হবে, খাওয়া-দাওয়া হবে।" বোনের কথা শুনে অমরেশ বলেন--- "ঠিক আছে পাগলী, তাই হবে। তোর এই পাঁচ বছরের দাবি আমি এবার পুজোয় এসে মিটাব। এবার পুজোর সময় এসে তোদের জন্য নিজে হাতে আমি কেনাকাটা করব। কলকাতার বড়বাজারে সবাই মিলে যাব। কী এবার খুশি তো ভূতনী?" বোন আরাধ্যা রেগে গিয়ে বলে --- "মা দেখছ, দাভাই আবার আমায় ভূতনী বলছে। এই ভাবে ডাকলে কিন্তু আমি তোর সঙ্গে আর কথা বলব না দাভাই।" অমরেশ বুঝতে পারেন, তার ভূতনী বলায় বোন অভিমান করেছে। অভিমান ভাঙানোর জন্য বলেন--- "আরে পাগলী, আমি তো তোর সঙ্গে তামাশা করছিলাম। আমি ভূতনী বললেই কি তুই ভূতনী হয়ে গেলি? না বললে তুই খুশি তো?" বোন বলে--- "হ্যা খুশি। আচ্ছা ও সব কথা রাখ। তুই ভালো থাকিস। সাবধানে যাস।" বাবা শুধু বলেছিলেন---"কোন সমস্যা হলে রেল পুলিশদের সাহায্য নিবি। আর ফোনটা সবসময় খোলা রাখবি। রাতে আর ফোন করতে হবে না তোকে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফোন করিস।" অমরেশ শুধু বলেছিলেন---"ঠিক আছে।"তারপর অমরেশ ফোনটা কেটে দেন। কিছুক্ষণ পর ট্রেনের জানালা দিয়ে একটা কালো বিড়াল দেখেন তিনি। হঠাৎ তার মনে হয়, সকালে বাঁ চোখের পাতাটি লাফাচ্ছিল আর এখন না চাইতে কালো বিড়াল দেখলাম--- কোন বিপদ হবে না তো। মনটা খচখচ করতে লাগলো তার। একবার তার মনে হয়েছিল বাড়িতে বাবার কাছে ফোন করে বিষয়টি জানাবেন। আবার ভাবেন, বাবা তো বলল রাতে আর ফোন করতে হবে না। না ঠিক আছে, করবো না। একেবারে সকালেই ফোন করবো। তার মনের ভুল হবে বোধয়। বাবা বলেছিলেন এসব কুসংস্কার। এরপর দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। ট্রেন বালেশ্বর স্টেশন পেড়িয়ে যায়।
অমরেশ সাইড আপার সিটে উঠে কানে হেডফোন দিয়ে কৃষ্ণের নামকীর্তন শুনছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ ভগবানের পরম ভক্ত সে। নামকীর্তন শোনার সঙ্গে সঙ্গে গুনগুন করে নিজেও গাইছিলেন। মিনিট কুড়ি পরে হঠাৎ একটা বিরাট ঝাঁকুনি। অমরেশের মনে হলো ভূমিকম্প হচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে করমন্ডল এক্সপ্রেসের সামনের কতগুলি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পালটি খায়। অমরেশ সাইড আপার সিট থেকে পড়ে যান। সমস্ত ট্রেনটি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়।
দুই এক মিনিটের মধ্যে স্থানীয় মানুষজন ও প্রশাসন যে যেখানে ছিলেন চলে আসেন। চিৎকার- কান্না আর গাড়ির আওয়াজে রাতের অন্ধকারের নির্জনতা ভেঙে যায়। রেলপুলিশ, এম্বুলেন্স, ফায়ার বিগ্রেড কয়েক মিনিটের মধ্যে দুর্ঘটনার স্থানে এসে হাজির হয়। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা খবর পেয়ে তৎক্ষনাৎ সেখানে আসেন। লাইট লাগানো হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী আসে রাতেই। উদ্ধার কাজ শুরু হয়। বীভৎস সে দৃশ্য। না দেখলে বলে বোঝানো যাবে না। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রথমে বোঝা যায়নি। পরে দেখা গেল তিনশোর কাছাকাছি মানুষ মারা গেছে ও আহত হয়েছে হাজারেরও বেশি। আহতদের তৎক্ষণাৎ বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। অমরেশের কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। অমরেশের বগি থেকে প্রায় কুড়িটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের দুর্ঘটনার খবর সারা দেশময় ছড়িয়ে পড়ে। টিভি ও সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ এই দুর্ঘটনার কথা জানতে পারে। অমরেশের মা ও বোন এই খবর দেখে চিৎকার করে কান্না করেন। সেই রাতে কিভাবে কি করবেন বুঝে উঠতে পারেন না অমরেশের বাবা। তিনি ছেলের ফোনে ফোন করেন। কিন্তু ফোন সুইচ অফ জানায়। ভয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তার। রেলের হেল্পলাইন নাম্বারে ফোন করে জানার চেষ্টা করেন তিনি। অমরেশ চক্রবর্তী নামে কোন স্লিপার ক্লাসের যাত্রীকে পাওয়া গেছে কিনা--- তিনি জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু কোন নাম্বার থেকেই আশানুরূপ উত্তর তারা পাননি। অমরেশের মা বাড়ির গোপাল মন্দিরে যান। গোপালের পা দুটো জড়িয়ে ধরে কান্নার সহিত বলেন--- "হে প্রভু, আপনি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন। তার বদলে আমার জীবন নিয়ে নিন। ওর কিছু হয়ে গেলে আমরা যে কেউই বাঁচবো না।" এক মুহূর্তের মধ্যে গোপালের পায়ের একটি ফুল অমরেশের মা বিদিশা চক্রবর্তীর সামনে গড়িয়ে পড়ে। তিনি বুঝতে পারেন, তার ছেলেকে এই গোপালের আশীর্বাদী ফুলটিই ফিরিয়ে আনতে পারে। তিনি তাঁর স্বামীকে বলেন--- "কি গো, চলো আমরা এই মুহূর্তে গাড়ি ভাড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। আমার বিশ্বাস আমাদের অমরেশের কিছু হয়নি। ও নিশ্চয় ফিরে আসবে।" রাত এগারোটার সময় একটা ইন্ডিকা গাড়ি ভাড়া করে তারা তিনজন রেল দুর্ঘটনার স্থলে যাত্রা শুরু করেন।
রাত তখন তিনটে বাজে। সমরেশ চক্রবর্তীরা উড়িষ্যায় প্রবেশ করেন। টেনশনে আর মনের কষ্টে কারো ঘুম আসে না। সকলেরই দুচোখে জল। অমরেশের মা বারবার কৃষ্ণ ভগবানের নাম স্মরণ করতে থাকেন। ভোর চারটের সময় গন্তব্য স্থলে উপস্থিত হন তারা। দেখেন গ্যাস কাটার দিয়ে বগি কেটে কেটে মৃতদেহ ও আহত মানুষদের বের করা হচ্ছে। পাগলের মতো তারা তিনজন অমরেশকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কোথাও খুঁজে পান না। স্থানীয় জনগণ তাদের মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেন। এক জায়গায় তারা মৃতদেহের ঢিবি দেখেন। কারো মাথা থেতলে গেছে, কারোর হাত থেতলানো, কেউ মরে রয়েছে কিন্তু শরীরে কোন ক্ষত সৃষ্টি হয়নি। চারিদিকে রক্ত। ওই জায়গাটা পুলিশ চারিপাশ থেকে ব্যারিকেড দিয়ে দিয়েছেন। পাশেই জনা পাঁচেক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছেন। সমরেশ চক্রবর্তী মনে মনে ভাবেন---"ওখানে গিয়ে একবার ভালোভাবে খুঁজে দেখি। আমাদের অমরেশ থাকতেও পাড়ে।" মনের মধ্যে ভয়, শরীর ও হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। তিনি তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ওই মৃতদেহগুলির কাছে যান। একজন পুলিশকে তিনি জানান--- "স্যার আমার ছেলে অমরেশ চক্রবর্তী এই ট্রেনের যাত্রী ছিল। চেন্নাইতে চাকরি সূত্রে- যাচ্ছিল। কোথাও খুঁজে ওকে পাচ্ছি না। আপনারা অনুমতি দিলে এই মৃতদেহগুলো একবার দেখব।" পুলিশটি বলেন---" আপনাদের কাছে আপনার ছেলের কোন ছবি থাকলে আমাকে দিন। আমি দেখে বলব যে আপনার ছেলে এই মৃতদেহ গুলির মধ্যে আছে কিনা। ওইখানে গেলে ভয় পেতে পারেন আপনারা। তাছাড়া মৃতদেহের গায়ে কারো হাত দেওয়া আইনত নিষিদ্ধ।" অমরেশের বাবা-মা তবুও পুলিশদের কাছে অনুরোধ করতে লাগলেন। অবশেষে একজন পুলিশ তাঁর সিনিয়রের অনুমতি নিয়ে বলেন-- "ঠিক আছে, আপনারা একজন যাবেন। বেশি সময় নেবেন না কিন্তু। কেউ দেখলে তারাও যাওয়ার জন্য ঝামেলা শুরু করবে। যদিও আগামীকাল সকাল থেকে মৃতদেহগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য বাড়ির লোকদের পার্শ্ববর্তী হাসপাতাল গুলোতে ঢুকতে দেওয়া হবে।"
অমরেশের বাবা মাকে বলেন---"তুমিই যাও। আমি আর মেয়ে বরং এখানে দাঁড়িয়ে থাকি।" তখন অমরেশকে হারানোর ভয়তে বিদিশা দেবীর দুচোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে।চোখ দুটো তার লাল। গোপাল ঠাকুরের দেওয়া সেই ফুলটি একটি ব্যাগে তার সঙ্গেই ছিল। তিনি একজন পুলিশের সঙ্গে মৃতদেহগুলির কাছে যান। নিথর দেহগুলো একটা আরেকটার উপর পড়ে রয়েছে। কোনোটি ভুট হয়ে আবার কোনোটি চিৎ হয়ে। কারো মাথা ফাটা আবার কারো শরীর রক্তে ভেসে গেছে। মৃতদেহগুলি দেখে অমরেশের মা উচ্চস্বরে কেঁদে ওঠেন। সমস্ত মৃতদেহগুলি ভালো করে দেখেও অমরেশকে তিনি খুঁজে পান না। মনে মনে গোপাল ঠাকুরের উদ্দেশ্যে বলেন---"হে প্রভু, শেষপর্যন্ত একরাশ হতাশা আর যন্ত্রনা নিয়ে আমাদের বাড়িতে ফিরতে হবে। আমার ছেলের দেখা কী আমরা পাব না। কৃপা করুন প্রভু। কৃপা করুন।"একটি মৃতদেহ ভুট হয়ে হাতটা মাথার উপরে দিয়ে পড়েছিল। অমরেশের মা ফিরে আসতে গিয়ে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগটি ঐ মৃতদেহটির হাত স্পর্শ করে। মৃতদেহটির হাত ব্যাগে লাগার সঙ্গে সঙ্গে হাতটি নড়ে ওঠে।সেটি অমরেশের মার চোখে পড়ে। তিনি কিছুটা ভয় পেয়ে যান। তারপর সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসারকে বলেন----"ওই মৃতদেহটি কেমন যেন নড়ে উঠলো। আপনি একটু মৃতদেহটি সোজা করবেন। আমি একটু মুখটা দেখব।" পুলিশ অফিসার প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করছিলেন। তারপর ভাবলেন, বলছেন যখন চিৎ করে দেখাই যাক না। হাতে গ্লাপস পড়া পুলিশটি মৃতদেহটিকে সোজা করলে মুখ দেখে তিনি চিনতে পারেন ছেলেকে। চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলেন --- "এই তো আমার ছেলে অমরেশ চক্রবর্তী।" তৎক্ষণাৎ কান্নার সহিত তিনি ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। তার এই রকম আচরণ দূর থেকে দেখে সমরেশ চক্রবর্তীরা বুঝতে পাড়েন অমরেশকে তার মা নিশ্চয় খুঁজে পেয়েছেন। পুলিশকে ব্যাপারটি বলে বাপ ও মেয়ে দুজনেই কাঁদতে কাঁদতে অমরেশের মৃতদেহের কাছে যান। মিনিট দুয়েকের মধ্যে পুনরায় অমরেশের ডানহাত নড়তে থাকে। এবার একজন পুলিশ অফিসারও লক্ষ করেন। তিনি অন্যদের বলেন --- "এই ছেলেটি এখনো বেঁচে আছে। এখনি ওর হাত নড়ল।" তারপর একজন ডাক্তারকে ডেকে এনে পালস্ চেক করান পুলিশ অফিসারেরা। ডাক্তার বলেন---" এখনো বেঁচে আছে। এখনি ওকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।" তাড়াতাড়ি অ্যাম্বুলেন্স করে অমরেশকে পাসের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তারদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও মায়ের রক্তের বিনিময়ে অমরেশ সেই যাত্রা বেঁচে যান।
তিনদিন পর ছেলে একটু সুস্থ হলে বাবা সমরেশ চক্রবর্তী বন্ডসই দিয়ে তাকে কলকাতার একটি ভালো নার্সিংহোমে এনে চিকিৎসা করান। নাওয়া-খাওয়া-ঘুম সব উড়ে যায় তাদের। দুই সপ্তাহ সেখানে ছিলেন অমরেশ। শরীরের ক্ষতগুলো তখন অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। সকলের সঙ্গে কথা বললেও মনের ভিতরের আনন্দ নষ্ট হয়ে গেছে তার। বাড়িতে যাওয়ার পরও বেশ কিছুদিন লেগেছিল সুস্থ হতে। মাঝে মাঝে দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ত। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনার বিষয়টি সে মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি। বাবা - মা ও বোন তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক বোঝাতেন। তবু তার আশে-পাশের সিটে থাকা ক্ষণিকের সম্পর্কের বন্ধনে জড়ানো মানুষগুলির মৃতদেহগুলো তার চোখের সামনে বার বার ভেসে এসে মনটা ভারাক্রান্ত করে তোলে। সবকিছু ভুলে থাকার চেষ্টা করেও পারেন নি তিনি। অবশেষে মাস খানিক পর অমরেশ চেন্নাইতে কাজে জয়েন্ট করেন। তবে এবার আর ট্রেনে নয়, প্লেনে করে সেখানে যান। বাবাও তার সঙ্গে ছিলেন। সপ্তা দুয়েক পর সমরেশ চক্রবর্তী কলকাতায় ফিরে আসেন। কাজের ব্যস্ততায় করমন্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার কথা ভুলে গিয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন অমরেশ। পরিবারের সকলে তাদের আগের অমরেশকে ফিরে পেয়ে খুব খুশি হয়।
মিঠুন মুখার্জী
গ্ৰাম - নবজীবন পল্লী
পোস্ট + থানা - গোবরডাঙ্গা
জেলা - উত্তর ২৪ পরগনা
পিন - ৭৪৩২৫২
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন