google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re প্রবন্ধ ।। বাংলাদেশে সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন যাপন ।। রুদ্র সুশান্ত - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩

প্রবন্ধ ।। বাংলাদেশে সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন যাপন ।। রুদ্র সুশান্ত

সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন যাপন

রুদ্র সুশান্ত



আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে নানান জাতি ও ধর্মের লোক একত্রে বসবাস করে। বাঙালির পাশাপাশি অনেক আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতিসত্তার বসবাস এখানে। এদের সাথে আমাদের বাঙালিদের দৈহিক, পারিবারিক, সামাজিক ভিন্নতা রয়েছে। ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, পোষাক-পরিচ্ছদ, বিবাহ ও বিভিন্ন উৎসবেও তারা বাঙালিদের চেয়ে আলাদা। বাংলাদেশে বসবাসরত তেমনি একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতিসত্তা হলো সাঁওতাল ( Santal) । সাঁওতালদের আদি নাম হলো- সান্তাল, হড় ( মানুষ ),সান্দাল, সন্থাল, সান্থাল ও সান্তাড় । বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মধ্যে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী অন্যতম।২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশে বসবাসরত জনসংখ্যা প্রায় ২,০২,৭৪৪ জন। কিন্তু সে সংখ্যা এখন কমে গেছে, বাংলাদেশ ব্যুরু পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বসবাসরত সাঁওতাল জনসংখ্যা ১,২৯,০৪৯ জন (পৃষ্ঠা ৩৪) ।

 আধুনিক যুগে এসেও সাঁওতাল জনগোষ্ঠী তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য এবং নিজস্ব সংস্কৃতি দারুণভাবে আটকে ধরে বসবাস করছেন । সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে জানা যায় সাঁওতাল জনগোষ্ঠী কোন এক সময় অস্ট্রেলিয়া থেকে এই উপমহাদেশে এসে বসবাস শুরু করেন, তার-ই ধারাবাহিকতায় এই জনগোষ্ঠী বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন । বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, বগুড়া, পাবনা, মৌলভীবাজার এবং সিলেটের আশেপাশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন । দৈহিক গঠনের দিক দিয়ে সাঁওতালদের উচ্চতা মাঝারি ধরনের, এদের নাক একটু চ্যাপ্টা হয়ে থাকে চুল কোঁকড়ানো গায়ের রং স্বভাবত বাঙালিদের মতই । সাঁওতালি ভাষা অস্ট্রিক ভাষার পরিবারভুক্ত । কোল ও মুন্ডারি ভাষার সঙ্গে সাঁওতালি ভাষার সাদৃশ্য রয়েছে। সাঁওতালদের নিজস্ব লিপি রয়েছে , "অলচিকি" লিপি নাম । বাংলাদেশে বসবাসরত সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা থাকলেও তারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন এবং বাংলাতে সংগীত পরিবেশনও করে থাকেন।

 সাঁওতালদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন অত্যন্ত সুদৃঢ। এদের সামাজিক বন্ধন অত্যন্ত সোপাদ্যপূর্ণ এবং এরা সামাজিক নেতৃত্বে বিশ্বাসী । গ্রাম প্রধানকে এরা 'মাঝি' নামেই পরিচিত করেন। উত্তরাধিকার সূত্রে সাঁওতালরা পিতৃতান্ত্রিক হিন্দু ধর্মীয় নীতি অনুসারে সাঁওতালদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে শুধুমাত্র পুত্রদের অধিকার থাকে তবে পিতা যদি বিবাহের পর কোন কন্যাকে সম্পত্তি দিয়ে থাকেন তবে সেটা উক্ত কন্যা প্রাপ্ত হন। সাঁওতালরা বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি দিয়ে ঘর করে বসবাস করেন, তবে বর্তমান সময়ে বেড়ার ঘর ও আধা পাকা ঘর দেখা যায় । ঘরবাড়ির দেয়ালে ছবি আঁকেন । সাঁওতাল সমাজে ঘরবাড়ি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা সবসময়।

 পোশাক হিসেবে পুরুষরা ধুতি ও শার্ট আর মেয়েরা 'ফতা' পরিধান করেন। "সোহরাই" উৎসবে এরা নতুন পোশাক পরিধান করেন। সাঁওতালদের ধর্মীয় বিশ্বাস মূলত দেবতা নির্ভর । ওরা বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা-পার্বণ করেন, সূর্যকে এরা মঙ্গল অমঙ্গলের দেবতাজ্ঞানে বিশ্বাস করেন। এদের প্রধান দেবতা হচ্ছে চান্দোবোংগা (সূর্যদেব)। তারা সামাজিকভাবে নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। । বাঙালিদের মতো এদেরও বারো মাসে তেরো পার্বণ। সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য বাঙ্গালীদের মতবাদ "হাড়িয়া" নামে এক ধরনের মদ তাদের প্রধান পানীয়, এই হাড়িয়া তারা নিজেরাই প্রস্তুত করেন। ‌ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন- হাঁড়ি কলসির গায়ে চুনকালি দিয়ে ছবি আঁকেন। 

এদের আদি সম্প্রদায়ের প্রধান পেশা শিকার হলেও সাঁওতালরা সবাই কৃষিজীবী, সাঁওতাল পুরুষরা অত্যন্ত কর্মঠ এবং পরিশ্রমী। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কৃষিতে সমান অবদান রাখে। জমিতে নানান ধরনের ফসল উৎপাদনে এরা অত্যন্ত পারদর্শী। কিন্তু আর্থ-সামাজিক কারণে দারিদ্র্য তাদের নিত্যসঙ্গী। তাই বাধ্য হয়ে অতি অল্প বিনিময়মূল্যে এরা চা বাগানে বা অন্যত্র শ্রম বিক্রয় করে। এছাড়া এরা মাটি কাটে, দিনমজুরের কাজ করেন। 
এরা মৃতদেহ আগুনে পোড়ান। 

=================


লেখক- রুদ্র সুশান্ত
ঢাকা, বাংলাদেশ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন