Featured Post
গল্প ।। কলার টিউন ।। নীলাঞ্জনা ঘোষ
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
কলার টিউন
নীলাঞ্জনা ঘোষ
সকালে অবিনাশ চলে যাওয়ার পর ঘর টা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে Beas এর, তাই সে প্রতিদিন অনিকে (অবিনাশ) বেলার দিকে ফোন করে, সে কি করছে, খেয়েছে কিনা, যেমন ভাবে এক নতুন বউ তার অর্ধাঙ্গর খেয়াল রাখে আর কি।
Beas আর Ani র লাভ ম্যারেজ না হলেও তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই, এতটাই গভীর তাদের সম্পর্ক ।
আজ শুক্রবার, অনি অফিস চলে গেছে সকাল ১০ টায়, এখন বাজে বেলা ১:৩০ টা, অনিদের টিফিনের সময়, তাই Beas ভাবলো একবার কল করবে…
Beas কল করে…
অনি তার ফোনের কলার টিউন চেঞ্জ করেছে, রেখেছে তার বউকে উদ্দেশ্য করে মিষ্টি একটা গান…
***
You have a voice message Press 1 to listen to this.
Beas এক প্রেস করতেই বেজে ওঠে… “soniyo…. raah me tanha hu, saath le chal yuh… sang tere safar pura karu…”
বেশ অবাক হয়, কে পাঠালো তাকে এইসব? কার এত সাহস??
কার আবার তমার, Beas এর জান, প্রাণ, তার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড … তারও যদি উর্ধ্বে কিছু থেকে থাকে তাহলে তমা সেটাই।
Beas আর তমা ছোট্ট থেকে বন্ধু, খেলা, স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা করা, সবটাই তারা একসাথে করতো। লোকে বলতো “উফফ কেউ কাউকে ছেড়ে যেনো থাকতেই পারিস না, বিয়ে হয়ে গেলে কি করবি রে??”
দুজনেই বলে উঠতো — “বিয়েই করবনা।” সেই শুনে সবার কি হাসি।
একদিন তো তমা রেগে গিয়ে বলেই ফেললো, “আমি Beas কে ছেড়ে কোথাও যাবনা, ওকে ছেড়ে আমি কী করে থাকবো?”- বলে Beas কে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না তার।
সবাই কত চেষ্টা করে শান্ত করে দুজনকে। এই ভাবেই অনেক গুলো বছর কেটে যায়, তারা তাদের জীবনের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে একজন কলকাতায় City College of Commerce এ ভর্তি হয়েছে। আর একজন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোলে অনার্স।
দুজনেই পড়াশোনায় সত্যি খুব ভালো, যথেষ্ট পড়াশোনার চাপ তাদের তবু তাদের বন্ধুত্ব থাকে অটুট। সবাই বলত, “কতদিন থাকে এই বন্ধুত্ব দেখবো” — পাত্তা দিত না দুজনের কেউই।
রোজ কলেজ থেকে ফেরার পথে এক সাথে বাড়ি ফেরে, সারাদিনের কত জমে থাকা না বলা কথা উগড়ে দেয়, আর সব শেষে একটাই কথা- “Beas তোকে খুব মিস করি জানিস।”
Beas হেসে বলে, “তো কি হয়েছে? দিনের শেষে পাখি তো ঘরেই ফিরবে, তার Beas এর কাছে।”
ফার্স্ট ইয়ার কেটে যায় কত কিছুর মধ্যে দিয়ে, ভাব – আড়ি – রাগ – অভিমান – কষ্ট - দুঃখ - ভালো লাগা - মন্দ লাগা সব কিছুকে আঁকড়ে ধরে তারা দ্বিতীয় বর্ষে পা রাখে… তৃতীয় বর্ষের শেষে ঘটে গেলো সেই দুর্ঘটনা। Beas এর বাবার বদলির চাকরি, তাই তাকে চলে যেতে হবে জামশেদপুর।
দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে, জল গড়িয়ে পড়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে দুজনের গাল, দুজনের অন্তরকে…
তবে কি হরিহর আত্মা এবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে???
***
Out of sight - out of mind - কথাটা কি সত্যিই ঠিক?
৬ বছর হলো Beas রা জামশেদপুরে সেটেল হয়েছে। Beas তার পড়াশোনা শেষ করে একটি প্রাইভেট স্কুলে বেশ ভালো মাইনের চাকরি পেয়েছে, মেয়ের বাবা মা খুব খুশি তাদের মেয়েকে নিয়ে, ২৭ বছর বয়সে এত প্রতিষ্ঠিত তাদের মেয়ে, আর চিন্তা কিসের?
আর তো মাত্র একটা ছোটো কাজ, তাহলেই ষোলো কলা পূর্ণ।
তারা Beas এর জন্য পাত্র দেখতে শুরু করে। বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হয়নি তাদের, Beas এর বাবার এক বন্ধুর ছেলে অবিনাশ ঘোষাল, তার সাথেই বিয়ে ঠিক হয়।
***
Beas chatterjee থেকে সে হয়ে উঠেছে Beas Ghosal– একদম অনির মনের মত। Beas এর শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা খুব খুশি তাদের নতুন বউমা কে পেয়ে।
খুশি তো Beas ও, তবুও সে একখানা ডায়েরি লিখে চলে যখনই সময় পায়, অনি জিজ্ঞাসা করলে বলে, “ব্যক্তিগত ব্যাপার”--- অনি সত্যি একজন ভদ্র মানুষ, কোনোদিন জোর করে জানতে চায়নি, দেখতেও চায়নি কী আছে সেই ডায়েরিতে।
Beas লিখে রাখে কোনো কবিতার কিছু পছন্দের লাইন, বা তার মনের কথা, তার প্রাণের কথা, যেগুলো হয়তো বলে ওঠা হয়নি, আর হয়তো হবেনা— ঠিক যেনো Anne Frank…
***
“Tu dede mera saath– tham le haath— chahe jo bhi ho baat….. soniyo….”
গানের লাইনটা ক্রমাগত ঘিরে ধরছে Beas কে, গত ৬-৭ বছর ধরে এই একটা গানকেই তো সে এড়িয়ে চলেছে, একদম শুনতে চায়না সে এই গান, ভালো লাগে না তার এই গান… অসহ্য লাগছে তার কানে, কাঁটার মতো বিঁধছে তার সারা শরীরে।
সেই যে কালিম্পং বেড়াতে গেল, তারপর আর কোনো খবর নেই তমার… কত ফোন রিং হয়ে কেটে গেছে, তোলেনি কেউ। জামশেদপুর থেকে কলকাতায় এসে তমাদের বাড়িতেও গিয়েছিল Beas, কিন্তু ব্যর্থ ছিল তার প্রচেষ্টা, কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারেনি কেউ তমার সাথে। কালিম্পং থেকে বাড়ি ফেরেনি তমা… তাহলে কি সে আর??????? এক রাশ কালো মেঘ ঘনিয়ে আসে Beas এর মনে…।
সে নিজেকে বলতে থাকে, “কেউ পারবেনা আমাদের আলাদা করতে… কেউ না।”
পুলিশের কাছেও গিয়েছিল Beas, কিন্তু কোনো হদিস মেলেনি তমার… তবে কি সত্যিই হারিয়ে গেলো তমা????? Beas কে একা ফেলে হারিয়ে গেলো???
বাড়ি থেকে তার মা বাবা অনেক বুঝিয়েও রাজি করাতে পারেনি Beas কে বিয়ের জন্য… তাহলে আজকের এই পরিণতি??
পাগলের মত খুঁজেছিল সে তার সেই ছোট্ট তমা কে — এমন কি সোশ্যাল মিডিয়াতে সে পোস্ট করেছিল, অন্তত কোনো ভাবে যদি খোঁজ খাওয়া যায় সেই মেয়েটির, যাকে Beas মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে…
ভাগ্যের পরিহাস বড়ই কঠিন….
একদিন সকালে সোশ্যাল মিডিয়া ঘাটতে গিয়ে সে জানতে পারে — Tilottoma Debnath happily married to Angik Debnath…
Ray থেকে কখন Debnath হয়ে উঠেছে সবার অগোচরে।
Beas কাঁদেনি সেদিন, হ্যাঁ বেশ খানিকটা অবাক হয়েছিল… আর মনে মনে বলেছিল “ভালো থাকিস রে...”
তার মনে পড়ে যায়, একদিন মিলেনিয়াম পার্কে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের সময় Beas বলেছিল, “এই তিলোত্তমা নগরী বড়ই সুন্দর রে...”
তমা উত্তরে বলেছিল, “তুই তো geography নিয়ে পড়ছিস বল তিলোত্তমা নগরীতে বিপাশা কেনো বয়ে না?”
সেদিন Beas সত্যি কোনো উত্তর দিতে পারেনি।
***
আজও সে তার সেই ডায়েরিতে তিলোত্তমা নগরীর ম্যাপে, (Beas)বিপাশা নদীকে বইয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে।
***
ওপার থেকে অনি বলে, “ওই কেমন হয়েছে কলার টিউনটা? তোমার জন্য রেখেছি” বলেই এক গাল হাসি তার…
Beas মনে মনে ভাবে, “সত্যিই তো তিলোত্তমা নগরীতে কিকরেই বা বিপাশা বইবে, তাদের দুজনের অবস্থানটা শুধু যে ম্যাপে আলাদা তা নয়, বাস্তবেও যে বড্ড আলাদা…” তবে out of sight হলেও সে কিন্তু out of mind হয়নি আজও।
খুব মৃদু স্বরে উত্তর দেয় – “ভালো”
—-------------------------------------------
Nilanjana Ghosh
Vill- Apurbapur, Rathtala
P.O+P.S - Singur
Dist. - Hooghly
State - West Bengal
Pin - 712409
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন