ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নববর্ষকে আবাহন বা বরণ করা হয় জাঁকজমক আড়ম্বর, উৎসব ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
তবে ইংরেজদের নববর্ষ ১জানুয়ারিই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দেশে পালিত হয়। ইংল্যান্ড, আমেরিকা,অস্ট্রেলিয়া, কানাডা সহ একদা ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রায় সবক'টি দেশেই ইংরেজি নববর্ষ পালিত হয় উৎসব, অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
আমাদের দেশ ভারতেও আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয় ইংরেজি নববর্ষ। তবে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক নববর্ষ রয়েছে। যেমন আমাদের বাঙালিদের নববর্ষ পালিত হয় ১বৈশাখ বা পয়লা বৈশাখ।
বঙ্গাব্দের এই পয়লা বৈশাখ গণনার হিসেব শুরুর ব্যাপারে মুঘল সম্রাট জালালউদ্দিন মোহাম্মদ আকবরের যথেষ্ট অবদান রয়েছে l আগে অখণ্ড বঙ্গদেশে বছর গণনা হত চান্দ্রমাস অনুযায়ী যাকে হিজরি সন বলা হয়ে থাকে। এই হিজরি সন ২৭দিনের হিসেবে গণনা করা হয়ে থাকে। এর ফলে প্রতি বছরই হিজরি সন কয়েকদিন করে এগিয়ে আসে। এর ফলে বাংলার অধিকাংশ কৃষকই রাজা জমিদারদের খাজনা বা কৃষিকর দিতে ভীষণ মুশকিলে পড়তেন।
সম্রাট আকবর বাংলার কৃষকদের এই অসুবিধে দূর করার জন্য তাঁর দরবারের স্বনামধন্য জ্যোতির্বিদ আমির ফতেউল্লাহ সিরাজিকে নির্দেশ দেন চান্দ্রমাস বা হিজরি সন এবং সূর্যকেন্দ্রীক বর্ষপঞ্জীর সংমিশ্রণে একটি নতুন বর্ষের গণনা করার। যাতে করে বঙ্গদেশের আপামর কৃষকদের খাজনা দিতে সুবিধে হয়। মুঘল সম্রাট আকবরের নির্দেশ পেয়ে আমির ফতেউল্লাহ সিরাজি কয়েকবছর গণনার পরে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১১মার্চ একটি কৃষি ভিত্তিক বর্ষ পঞ্জী (হিজরি সন ও সৌরবর্ষের সংমিশ্রণে) তৈরি করলেন যার নাম হল -ফসলি সন। যা বর্তমানের বঙ্গাব্দ বর্ষের বৈশাখ মাসকে বছরের প্রথম মাস ধরে গণনার সূচনা বা ভিত্তিবর্ষ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে।
উত্তর ভারতের কয়েকটি রাজ্যে নতুন বছর শুরু হয় চৈত্র মাসের শুক্লা প্রতিপদে। এই নতুন বছরকে বিক্রম সম্বত বলা হয় l দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে ১বৈশাখ নববর্ষ পালিত হয়। আসাম, ত্রিপুরা রাজ্যেও নববর্ষ পালিত হয় পয়লা বৈশাখ।
অন্যদিকে প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের ৭তারিখে মিশরীয় নববর্ষ পালিত হয়। ১ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলামিক নববর্ষ পালিত হয়। রোমান নববর্ষ পালিত হয় ১মার্চ তারিখে। এপ্রিল মাসের ১৪তারিখে নেপালি নববর্ষ শুরু হয়।
বৌদ্ধ নববর্ষ পালিত হয় এপ্রিল মাসের প্রথম চাঁদ ওঠার দিন থেকে। মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, লাউস, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে একে বলা হয় থেরাবাদিন বৌদ্ধ নববর্ষ।
ইহুদি নববর্ষ পালিত হয় ১৬সেপ্টেম্বর তারিখে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখনও নববর্ষ নতুন আশা, সুখ শান্তি সমৃদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে মানুষের মনে। তাই নববর্ষ আবাহন করা হয় জাঁকজমক, আড়ম্বরের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
**************
তুষার ভট্টাচাৰ্য।
বহরমপুর। মুর্শিদাবাদ।
২৫/০৩/২০২৫
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন