তের বছর পর
-------------------------------
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বড় হয়েছে আসিফা। আজ সে একুশের যৌবনবতী। কাঠুয়ার সবুজ উপত্যকায় গাঢ় লাল সালোয়ার পরে ভোরের আলোয় সে ভেড়ার পাল নিয়ে বেরিয়েছে । এখন তার জীবনে প্রেম এসেছে । ভোরের হলুদে তার রক্তিম গাল জানান দিচ্ছে সে কথা । এক হিন্দু পণ্ডিত যুবকের হৃদয় আঁকা রয়েছে তার ঠোঁটে। গতকাল রাতের পাইন গাছের নীচের আলিঙ্গন তার শুভ্র দীর্ঘাঙ্গে এখনও তুলছে হিমেল হাওয়ার কম্পন।
তের বছর আগে ঘটে যাওয়া আটটা দিন সে বাদ দিতে পেরেছে জীবন থেকে । থেঁতলে পড়ে থাকা মাথা ধীরে ধীরে ভরেছে কালো চুলে । ক্ষতবিক্ষত যোনি থেকে একে একে উপড়ে ফেলেছে এক একটা পুরুষাঙ্গ । গলার ফাঁস সরিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস সচল করেছে । ধীরে ধীরে বড় হয়েছে আসিফা । প্রতিদিন পশু চরিয়ে বাড়ি ফিরে ঝাঁপিয়ে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে সারাদিন কি কি দেখেছে তার বর্ণনা দিয়েছে। মা র কাছে নিত্য নতুন বায়না নিয়ে কত্ত জ্বালিয়েছে। অভিমান করেছে ভাইদের উপর। কাউকে জানতে দেয়নি তের বছর আগের সেই আটটা দিনের যন্ত্রণার কথা।
কারণ ও জানত ওর ধর্ষিত মৃতদেহ ধর্মীয় রাজনীতির খোরাক হবে । কেউ বলবে বিশেষ সম্প্রদায় বলে ধর্ষিতা হয়েছে, কেউ বলবে তার জন্যই অতিরিক্ত প্রতিবাদ হচ্ছে । যে জানোয়ার গুলো হিংস্র নোংরা পুরুষাঙ্গ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার উপর, পিতার পর উঠে এসেছিল পুত্র তার ছোট্ট বুকের উপর, তাদের সমর্থনে ভারতের তেরঙ্গা উড়বে সে জানত। সে বুঝেছিল অষ্টম দিনের পরও প্রতিটি মুহূর্তে আরও অগণিত নারী পুরুষ ধর্ষণ করবে তাকে । কেউ বলবে বেশ হয়েছে বড় হলে তো সেই টেররিস্ট হত। কারও আফসোস আসিফা না হয়ে অনিতা আর মন্দির না হয়ে মসজিদ হলে বড় ভালো হত। কেউ নেট খুঁড়ে দেখবে কোথাও কোন হিন্দুরমণী ধর্ষিতা হল কিনা। কেউ বা আবার প্রশ্ন করবে বাংলাদেশের অমুক ঘটনা নিয়ে লেখনি কেন হে।
আট দিনের আট সমুদ্র যন্ত্রণাকে তাই সে তার ছোট্ট বুকে কবর দিয়ে নিজে উঠে এসেছে কবরের মাটি সরিয়ে। বাবাকে, মাকে, নিজেকে, ভারতবর্ষকে, পৃথিবীকে আজ বড় ভালোবাসে সে। আর ভালোবাসে ওই হিন্দু যুবককে। তার আট বছরের শরীর থেকে কিছু অতিধার্মিক নৈসর্গিক আনন্দ লাভে পাগল হয়েছিল । আজ সে বুঝেছে শরীর কি, দেওয়া নেওয়া কি, প্রেম কি ।
===========০০০০০============
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন