#রবির আলোয়#
---------+-----+-----+----
রবি লক্ষ্য করে বৈশাখ মাস এলেই তাদের স্কুলে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের জন্য ধূম পড়ে যায়।কেউ নাটক করার তোড়জোড় করে আবার কেউ নাচের তালিম নিতে শুরু করে।
রবি এবছর নবম শ্রেণীতে উঠল।প্রতি বছরই আবৃত্তিতে নাম দেয়।এবারও ঠিক করেছে একটা কবিতা পাঠ করবে।
সেদিন হঠাৎ ওদের বাংলার স্যার অবনীবাবু ক্লাসে ঘোষণা করলেন---এবার রবীন্দ্র জয়ন্তীতে আলাদা আকর্ষণ থাকছে। রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে কেউ স্বরচিত কবিতা পাঠ করলে তাকে আমার তরফ থেকে পুরস্কার দেওয়া হবে।হাতে সময় রয়েছে আদাজল খেয়ে লেগে পড়ো।
কথাটা শুনে রবির সারাগায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।স্বরচিত কবিতা পাঠ!
তখন থেকেই রবির মনে নানা ভাবনার ঢেউ খেলে যায়।এবছর তাকে কিছু একটা করতেই হবে।স্বরচিত কবিতা মানে বন্ধু মহলে আলাদা এলেম।তাছাড়া অবনীবাবুর চোখে আলাদা কদর মিলবে।
বাড়ি ফিরে মাঠে না গিয়ে খাতা কলম নিয়ে বসে পড়ে।রবি ঠাকুরের একটা কবিতার বই তার আছে।প্রথমে বেশ কয়েকটা কবিতা মন দিয়ে পড়ে।কিছু শব্দকে বাছাই করে।একটা জবরদস্ত লেখা হওয়া চাই।
রবি কলম কামড়ে বসে থাকে । মাথায় কিছুই আসছে না।কবিগুরু কত সহজেই সহজ কথাগুলো কবিতায় প্রয়োগ করেছেন।কিন্তু সে পারছে না কেন? এখন বুঝতে পারছে কবিতা লেখা কি কষ্টের ।
ভাব গম্ভীর রবিকে দেখে মা জিজ্ঞাসা করে--কি ব্যাপার আজ পড়ার ঘরে এরকম ধ্যান মগ্ন হয়ে কি করছ?
রবি তার মাকে বহু কষ্টের লেখাটা দেখায়।মা বলে--হয়েছে তবে বড্ড নীরস। মন না ছুঁলে কবিতা হয় না।
রবির মব খারাপ ।তবে তার দ্বারা আর কবিতা লেখা হলো না।অন্য কেউ যদি পুরস্কারটা পেয়ে যায়.....
রবি আর ভাবতে পারে না।খাওয়া দাওয়া সেরে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে।
-----এই যে রবি এভাবে হাল ছেড়ে দিলে হয়?
রবি দেখতে পায় তার বিছানার সামনে চেয়ারটায় দাড়িওলা লম্বা আলখাল্লার মতো পোষাক পরা একজন মানুষ ।আরে এ যে কবিগুরু !
রবীন্দ্রনাথ মুচকি হেসে বললেন---যারা কবিতা লেখার চেষ্টা করে আমি তাদের কাছে যাই।একটা কথা মনে রেখো বাছাই করা শব্দ দিয়ে কবিতা হয় না।নিজের মনের দিকে তাকাও ।মনের কথা মেনে চলো।দেখবে কবিতা ঠিক হয়ে যাবে।
রবিকে আশীর্বাদ দিয়ে কবিগুরু অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মুখ হাত ধুয়ে খাতা কলম নিয়ে বসে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে লিখে ফেলে একটা কবিতা । রবির মনে খুশীর জোয়ার।
রবীন্দ্র জয়ন্তীর দিনে অবনীবাবু স্বরচিত কবিতা পাঠের জন্য রবির নাম ঘোষণা করেন।কাঁপা কাঁপা গলায় রবি কবিতাটি পাঠ করে---
রবীন্দ্রনাথ এই বোশেখে
জন্ম নিলেন জোড়াসাখে।
বোশেখ মাসের সকল গ্লানি
মুছিয়ে দিল তার সে বাণী ।
আকাশ বুকে মর্ত্য মাঝে
রবীন্দ্রনাথ সবার মাঝে।
ভাবতে থাকি সারা দুপুর
তিনি সবার প্রাণের ঠাকুর ।
পাঠ শেষে হাততালির আওয়াজ ।রবি ঠিক শুনছে তো?ঐ তো অবনীবাবু পর্যন্ত হাততালি দিচ্ছেন ।
অনুষ্ঠানের শেষে অবনীবাবু রবির হাতে পুরস্কার স্বরূপ একটা গীতাঞ্জলি তুলে দিলেন।রবির পিঠ চাপড়ে বললেন---মন ছুঁয়ে গেল তোর কবিতা ।
গীতাঞ্জলির প্রচ্ছদে রবীন্দ্রনাথের মুখে একলপ্ত হাসি দেখতে পেল রবি।
##----##
তরুনার্ক লাহা
বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া
**==**
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন