'স্বর্গাদপি গরিয়সী'
মফস্বলে থেকে কলকাতার প্রতি আকর্ষণ বরাবরই সবার।আমিও তার ব্যতিক্রম নই। এখনো আকর্ষণ আছে। তবে সেটা কেরিয়ার জন্য।তবে আমার আকর্ষণের কারণ আমার আত্মীয় স্বজনদের বসবাসের জন্য।অনেকের কথায় শুনি কলকাতাই সব আর বাকি জায়গা ঠিক জায়গা নয়। এ ধারণা আমারও ছিল।
এই ভাবনাটা এলো অন্য একটি জায়গা থেকে।আজ থেকে ছয় বছর আগে যখন প্রথম জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিং কলেজে U.G.র Form জমা দিতে গিয়েছিলাম; College Addminestrative Building এ দাড়িয়ে বাবাকে বলেছিলাম 'এই কলেজে কেউ পড়ে নাকি? কি বাজে দেখতে কলেজটা! জায়গাটাও কী বাজে!' ইত্যাদি ইত্যাদি।আসলে আমার বহরমপুর ছাড়া মুর্শিদাবাদের কোনো জায়গা খুব একটা ভালো লাগেনা।হতে পারে ছোটো থেকে বহরমপুর-কলকাতা করেও এই ব্যাপারটা জন্মেছিল।
এর পাঁচ বছর পর আবার সেই শ্রীপৎ সিং কলেজে গিয়েই ভর্তি হই M.A.পড়ার জন্য।দেখতে দেখতে দুটি বছর কাটালাম ,আমার চোখে সেই বাজে জায়গাটায়।কিন্তু এই বাজে জায়গাটায় আজ অনেক নতুন বন্ধু পেয়েছি,পুরোনো চেনা কারোর সাথে নতুন করে বন্ধুত্ব হয়েছে,অনেক ভালো ভালো স্মৃতি হয়েছে,প্রকৃতির একরূপ কাশবনে গিয়ে সময় কাটানো,প্রকৃতিচক্র পরিবর্তন,
ক্লাসে সেই বাচ্চাদের মতো এর ওর টিফিন খাওয়া, Train travel,আনন্দ হয়েছে কলেজ নবীন বরণ বা বসন্তোসবে।
আসলে কোনো জায়গাই ছোটো নয়।হতে পারে জায়গা অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা কম-বেশি থাকেই। 'Uniti in Diversity' ব্যাপারটা সব জায়গায় থাকে।হয়তো বা বড় বড় শহরে এই ব্যাপারটা কম থাকে।ছোটো শহরে ব্যাপারটা বেশি থাকে।কিন্তু আমাদের চোখে হয়তো ভালো জায়গা বলতে ভাসে Pantaloons,Big Bazar,Pizza Haat,Mio Aamore,City Centar ইত্যাদি ইত্যাদি।কিন্তু এগুলো না থাকলেও ভালো জায়গা হতে পারে।এসব দিয়ে কখনোই জায়গা বিচার করা উচিত নয়।
শ্রীপৎ সিং কলেজে এসে অনেক ভাবনাই বদলেছে।আমার চোখের সেই বাজে জায়গা আজ অনেক সুন্দর হয়ে উঠেছে।অনেক নতুন কিছু শিখেছি,জীবনের অনেক নতুন সংজ্ঞা খুঁজে পেয়েছি,অনেক কিছুই দেখেছি,এটাই মনে হয়েছে নিজের জন্মস্থল ও কর্মস্থল দুটোকেই সম্মান করা উচিত।হতে পারে বড় বলে যাকে ভাবি তার মন হয়তো ছোটো আর যাকে ছোটো বলে ভাবি তার মন উদারতায় ভরা।তাই কলকাতা হোক বা প্রত্যন্ত গ্রাম-সবাই সুন্দর;সবাই নিজস্বতায় পরিপূর্ণ।সবাই সবার কাছে 'স্বর্গাদপি গরিয়সী'।
সর্বাণী বসু
৬৪/২১ কান্তনগর রোড
পোস্ট-খাগড়া
থানা- বহরমপুর
জেলা-মুর্শিদাবাদ
পিন-৭৪২১০৩
ফোন নং- ৯৬৭৯৭২২৫৪৬