Featured Post

কবিতা ।। হে নববর্ষ, এসো নবরূপে ।। অজিত চৌধুরী

হে নববর্ষ, এসো নবরূপে। অজিত চৌধুরী  নববর্ষ-জাগে হর্ষ নতুনের আগমনে, নব দিশা জাগে নব আশা জাগে  সকলের মনে-প্রাণে। যত কিছু গ্লানি,খুন হানাহানি  পিছনেই ফেলে আসি, নববর্ষ এসে নূতন আবেশে   নূতনেই ভালোবাসি। চারিদিকে আজ আলপনা সাজ বর্ষ বরণের গান, পুরাতন ফেলে আনন্দ উদ্বেলে ভরে উঠুক মন-প্রাণ। তাই আজ প্রাতে পবিত্রতার সাথে  বরণে ভরে যে বুক, এইতো সবার সুখ। করি যে বরণ নববর্ষে স্মরণ ধূপ দীপ শঙ্খ বাজিয়ে, সকলের তরে সুখ শান্তি ভরে  নিয়ে এসো তুমি আজি এ।

প্রবন্ধ: শুভদীপ রায় চৌধুরী



 
            

কলকাতার প্রাচীনতম দুর্গাপূজাঃ আভিজাত্যে বনেদিয়ানায়



        ১৬০৮ খ্রিঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের থেকে ৮টি পরগনার  জায়গীরদারি লাভ করেছিলেন লক্ষ্মীকান্ত. ১৬১০সালে লক্ষ্মীকান্ত শুরু করেন বাংলাদেশের প্রথম সপরিবার শ্রীদুর্গার পূজাকার্তিক,গনেশ এবং মহিষাসুরমর্দিনী-দুর্গাকে আনলেন একই কাঠামোর মধ্যে এককথায় তিনিই বাংলাদেশে আধুনিক দুর্গাপূজার জনক বড়িশা গ্রামে কাছারী বাড়ী সংলগ্ন জমিতে আটচালার চণ্ডীমণ্ডপ নির্মাণ করে মাতৃ-আরাধনার প্রবর্তন করেন ইচ্ছা করলেই তিনি বিশাল অট্টালিকা করে রাজকীয় আভিজাত্যের মাধ্যমে দেবীপূজা করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করলেন না, যাতে তাঁর প্রজারা নির্ভয়ে একান্ত আপনার ভেবে মাতৃপূজায় অংশ নেয় তাই বড়িশায় আদি চণ্ডীমণ্ডপের নাম "সাঁঝার আটচালা"(সাঁঝার অর্থে সবার) এর থেকে অনুমান করা যায় লক্ষ্মীকান্ত প্রজা-দরদী বিচক্ষণ জমিদার ছিলেন দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ্মীকান্তের অগণিত বংশধর পূজার পাঁচটি দিন জড়ো হয় পরিবারের ৮টি পূজাতেই জায়গীরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত অসংখ্য প্রজাদের জন্য পূজার পাঁচটি দিন জমিদার বাড়ী থাকতো অবারিত দ্বার  কোলিকাতা, গোবিন্দপুর সুতালুটা (বর্তমানে সুতানুটি) এই তিনটি গ্রামের প্রজাস্বত্ত তখনো হস্তান্তরিত হয়নি, ঠিক তখনি গ্রামে কৃষকদের প্রজাদের আনন্দ দান করার জন্য শুরু হল দুর্গার আরাধনা কলকাতার প্রাচীনতম দুর্গাপুজো শুরু হল বড়িশার আটচালাতেগ্রামের জমিদার সাবর্ণ বংশের লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়( রায় চৌধুরী) তাঁর স্ত্রী ভগবতীদেবী শুরু করলেন কোলকাতায় প্রথম স্বপরিবারে দেবীর আরাধনা, যা আজ ৪০৮বছরে পদার্পণ করল রায় চৌধুরী পরিবারে দুর্গাপুজোর সময় গ্রামের কৃষকরা প্রজারা ভালোবেসে আনন্দে উপভোগ করত  বিদ্যাপতি রচিত "দুর্গাভক্তি তরঙ্গিণী" মতে পুজো হয়. এই পরিবারের একটি বৈশিষ্ট্য হল একমাত্র পরিবার যেখানে এিধারা সংগমে পূজা হয় বড়, মেজো নিমতাপাঠানপুর বাড়ীত সিংহের মুখ ঘোড়ামুখো আবার বড়বাড়ী বিরাটীবাড়ীতে অষ্টমীর বদলে নবমীতে হয় কুমারীপুজো এছাড়া নিমতাপাঠানপুর বাড়ীতে খিরের পুতুল বলি হয় চালচিত্রের পেচনে দশমহাবিদ্যা অঙ্কিত থাকে ডাকের সাজের মায়ের মূর্তির গায়ের রং বিধান অনুযায়ী হতে হবে শিউলি ফুলের বোঁটার মতোন বা স্বর্ণরং এই পরিবারে কার্তিককে যুবরাজ হিসাবে পূজা করা হয় কারণ আগে কার্তিক কৃষ্ণবর্ণের ছিল যা আদিবাসী সম্প্রদায়ে পুজো করা হত কিন্তু লক্ষ্মীকান্তই কার্তিককে যুবরাজ রূপে একচালায় নিয়ে আনেন অনুমান করা হয় লক্ষ্মীকান্তের রং দেখে রূপদেখেই এই রকম কার্তিকের রূপ কল্পনা করা হয়েছিলনবমীর দিন ১৮০টি খুড়িতে মাষকলাই ভোগ নিবেদন করা হয় অসুর অপদেবতার জন্য বড়বাড়ীতে অবিকল সন্ধিপূজার মতোন সপ্তমী অষ্টমীতে প্রথম শেষ ২৪মিনিট অর্ধরাত্র বিহিত পুজো হয় এই বাড়ীর পুজো একসময় স্মৃতিতীর্থ কিংবা কাব্যতীর্থ ছাড়া পুরোহিত পুজো করতে পারতেননাপরিবারের ৩৬তম পুরুষ শুভদীপ রায় চৌধুরী বলেন- সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার এমন একটি পরিবার যেখানে ৮টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং ত্রিধারা সংগমে দেবী আরাধনা হয়তিনি আরও বলেন, সাবর্ণ পরিবারে দেবীকে সবরকমের অলংকার দেওয়া হয় যেমন সোনার টিপ, সোনার মুকুট, সোনার বালা, হীরের দুল, চুনি-পান্না দিয়ে তৈরী অলংকার, চুলে রূপোর কাঁটা, সোনার চুর, সোনার কানপাশা, রতনচুড়, হাতপদ্ম, সোনার রতন হার, সোনার নথ ইত্যাদি
সাবর্ণ পরিবারে দেবীকে বাড়ীর তৈরী মিষ্টি দেওয়াই রীতিযেমন সাবর্ণ প্রাণমোহিনী, সাবর্ণ দ্বিধাপ্রাঞ্জলী, ফুলবাতাসা, পুলিপিঠে, খিরের পায়েস, মিষ্টি নিমকী, গজা, মালপো, লবঙ্গলতিকা ইত্যাদি প্রায় ২৫রকমের মিষ্টান্ন দেবীকে নিবেদন করা হয়এছাড়া দেবীকে সাদা ভাত, খিচুড়ি, পোলাও, ৯রকমের ভাজা, ৩রকমের তরকারি, পায়েস ইত্যাদি পঞ্চব্যঞ্জনে ভোগ নিবেদন করা হয়নিমতাপাঠানপুর বাড়ী ছাড়া ৭টি বাড়ীতেই দেবীকে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়

    সাবর্ণ পরিবারে প্রতিমা একচালের হয় তার ত্রিচালা বসে প্রতিমার একদিকে মহাদেব অন্যদিকে রাম থাকে, তাদেরও নিয়মিত পুজো হয়এবার আসা যাক দেবীর অলংকার সম্বন্ধে সাবর্ণ বাড়ীতে আগে ১৩টা পাঁঠা ১টি মোষ বলিদান হত কিন্তু বর্তমানে তা বন্ধ হয়েছে বর্তমানে সাবর্ণ বাড়ীতে ৮টি দুর্গাপুজো হয়, বড়িশাতে ৬টি একটি নিমতাপাঠানপুর বাড়ী একটি বিরাটী. অষ্টমীর সন্ধিপূজাতে নিমতা বাড়ীতে কুলমাতা ভুবনেশ্বরীর বিশেষ পূজা হয়ে থাকে নবমীতে বিরাটী বাড়ীতে ধুনোপোড়া হয় সাবর্ণ বাড়ীতে ৭টা বাড়ীতে আমিষ ভোগ হলেও নিমতাপাঠানপুর বাড়ীতে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারে জন্মাষ্টমীর দিন হয় কাঠামো পূজা রাধাষ্টমীর দিন হয় ১০০৮ তীর্থের মাটির প্রলেপ প্রদানকৃষ্ণানবমী তিথিতে আটাচালায় দেবীর বোধন শুরু হয় আর বাকী ৭টি বাড়ীতে ষষ্টির দিন বোধন হয়কৃষ্ণানবমীর দিন থেকেই দেবীর চণ্ডীপাঠ, হোম, ভোগ, ১০০৮ দুর্গানাম জপ ইত্যাদির মাধ্যমে শুরু হয় রায় চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজোষষ্টির দিন কালীকিংকর বাড়ীতে সাবর্ণ বার্তা প্রকাশিত হয়নবমীতে বড়বাড়ী এবং বিরাটি বাড়ীতে ভক্তিগীতির অনুষ্ঠান হয়সাবর্ণ পরিবারে ষষ্টির অধিবাসের দিন আকবরী মোহর দিয়ে দেবীকে বরণ করা হয়দশমীর দিন কনকাঞ্জলির মাধ্যমে দেবীকে বিদায় জানানো হয় এই ভাবে আদি কোলকাতার প্রথম পুজো আজও একভাবে রীতি পরম্পরা বজায় রেখে চলে আসছেসাবর্ণ পরিবারে শুধু দুর্গাপূজাই নয় পরিবারে প্রায় ৬২টি মন্দির রয়েছেরাধাকান্তদেব, দেবী চঁণ্ডীকা, অন্নপূর্ণা, করুনাময়ী কালী, ময়দাকালী, মহাতীর্থ কালীঘাট, দ্বাদশ শিব মন্দির, চিত্রেশ্বরী মন্দির, কেশবেশ্বর শিব মন্দির, শ্যামরায় ইত্যাদি বিভিন্ন পুজোই পরিবারে বহু প্রাচীন

===================================================

নাম- শুভদীপ রায় চৌধুরী
ঠিকানা- ৫২/২বি/২, শরৎ ঘোষ গার্ডেন রোড, ঢাকুরিয়া, কলকাতা-৩১
Contact- 8910109661         

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল