Featured Post
গদ্য ।। কবিতার কথা ।। সুবীর ঘোষ
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
কবিতার কথা
সুবীর ঘোষ
একজন মা যেমন নিজের সন্তানকে কারো সঙ্গে তুলনা করে দেখতে চান না , তেমনি আমার কবিতার গায়ে আমি তত্ত্বায়নের লেবেল আঁটা পছন্দ করি না । ফলে কবিতার ক্রিয়াকরম রীতিপ্রণীতি ব্যাকরণ কিছুই জানা নেই আমার । জানি না কবিতার সংজ্ঞা ও ভূমিকা কুশল ও কৌশল । কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কবিতা লিখি না , কোনো প্রাপ্তির জন্যও নয় , কোনো বার্তা দেবার জন্য তো নয়ই । কবিতায় আমি নিজের সঙ্গেই কথা বলি , এ আমার অফুরন্ত আনন্দের স্বরালাপ খেলা । কখনো চোখের আলোয় কোনো রৌদ্রপ্রতিমাকে দেখা যায় , যার সঙ্গে কথাও বলা যায় । কবিতা তখন কিছুটা দ্বিরালাপ হয়ে যায় ঠিকই তবে প্রকৃত দ্বিরালাপ তো কবির সঙ্গে পাঠকের কথা বলা ।
অনেকে অনেক কথা বলেছেন ---কবিতা হয়ে ওঠে , বেজে ওঠে । কেউ কেউ নির্মাণ – বিনির্মাণের কথাও বলেছেন । আমি মনে করি কবিতা এসে ওঠে । আমরা যেমন বেড়াতে গেলে কোনো হোটেলে গিয়ে উঠি তেমনি কবিতা অজানা কোনো স্বপ্নলোক থেকে এসে ওঠে সাদা কাগজের চৌকো ঘরটিতে । সেটিকেও সে শব্দে বর্ণে অর্থে ব্যঞ্জনায় আলোকিত করে তোলে ।
যদিও বাংলাভাষায় আদিকাব্যগুলো সবই গল্প বলেছে , আমি কবিতায় গল্প বলা পছন্দ করি না । সংবাদ মূলত কাব্য কী না জানি না কিন্তু কাব্য মূলত সংবাদ কখনই নয় । কাজেই সংবাদপত্রের তাজা খবরকে কবিতায় অনুবাদ করে দেব এটা চাই না । কবিতা ভ্রমণবৃত্তান্ত নয় যে তাকে খুব বেশি স্মৃতি ভারাক্রান্ত হতে হবে । কবিতা কবির জীবনচরিত নয় যে তাকে নিজের অভিজ্ঞতা লিখে যেতে হবে কবিতায় । কবিতা প্রাকৃতিক বর্ণনা বা দৈনন্দিন যাপনের ঘটনাবলি বলারও জায়গা নয় । অর্থাৎ কবিতা আখ্যান নয় , রিপোর্টাজ নয় , স্মৃতিকথা নয় , আত্মজৈবনিক নামচা নয় , ফোটোগ্রাফ নয় , বিবৃতি নয় , বায়োপিক নয় । তাহলে এগুলো কি কিছুই থাকবে না ? আমার উত্তর ---- সব থাকবে কিন্তু যেভাবে চায়ের ব্লেন্ডিং হয় সেভাবে । কবিতার সত্যের সঙ্গে জড়জগতের সত্য মিশে যাবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে । কবির স্মৃতি অভিজ্ঞতা সব থাকবে এত খন্ড খন্ড আকারে যে তা দিয়ে কারো পক্ষে কবির জীবনী লেখা সম্ভব নয় । কবিতার মধ্যে মনন দর্শন বিশুদ্ধতার ঝোঁক কবিতাকে গরিমা দেয় । কবিতা নিয়ে আসবে পাঠকের কাছে বচনাতীতের আনন্দ । কবিতা কবির কাছে সব থেকে নিরাপদ সেই লকার যেখানে কবি তাঁর গোপন কথা লুকিয়ে রাখতে পারেন । সে পাসওয়ার্ড ভেঙে ব্যাখ্যা বের করে নেওয়ার দায়িত্ব পাঠকের । আমি মনে করি নদীর বহতা জলে যেমন দুবার হাত ডোবানো যায় না তেমনি কবির অনুভবকে পুরোপুরি ছুঁতে পারা পাঠকের কেন , পরবর্তীকালে কবির নিজের পক্ষেই দুষ্কর হয়ে ওঠে । কবির অনুভব কতখানি পাঠকের উপলব্ধির কাছাকাছি যেতে পারছে , কবির প্রকাশ পাঠকের ভাবনার সমর্থন কতখানি পাচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে কবিতার সার্থকতা ।
আমি এসব দর্শনকে বিশ্বাস করে কবিতা লেখার চেষ্টা করি । কবিতা আমার কাছে কোনো টাস্ক বা টার্গেট নয় , কবিতা আমার একান্ত নিজস্ব প্রয়োজনীয়তা ।
__________________________________________________________
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন