Featured Post

কবিতা ।। ঘরে ফেরা ।। বিপ্লব নসিপুরী

ঘরে ফেরা বিপ্লব নসিপুরী  বাতাসের গায়ে তাপের ছোঁয়া  রঙের তুলি শাখে বিষাদ মনে বিবাগী ঢেউ আছড়ে পড়ে ক্ষোভে।  নয়ন তীরে অশ্রুনদী  দুকূল ভাঙে স্রোতে ভিটে মাটি দোর কেড়েছে গোটা পরিবার কাঁধে। আকাশটা আজ ছাদ হয়েছে মাটির স্নেহ ঘর পরিচয়হীন মানুষের দল সবার একই স্বর। বছর শেষে নতুন বছর দিচ্ছে হাতছানি  ক্ষোভের বাষ্প বিষাদ কষ্ট  উবে যাবে কী জানি? অসম্মানের বিষফলা তীর বিঁধেছে ওদের বুকে এমন মলম কোথায় আছে স্বস্তি দেবে প্রাণে। হারিয়ে সবই খড়কুটো দেহ বইছে সময় নীরে নতুন বছর নতুন বাতাস আনুক ফিরে তীরে।  ************* বিপ্লব নসিপুরী  গ্রাম পোস্ট শীতলগ্রাম জেলা বীরভূম  পিন-৭৩১২৩৭ 

স্মৃতিপটে মাস্টারমশাই ।। জীবন পাইক

 

স্মৃতিপটে মাস্টারমশাই

জীবন পাইক 

 

        আজ থেকে বছর চৌত্রিশ আগের কথা ৷ আমি তখন সবে মাত্র মাধ্যমিক পাশ করেছি ৷ গ্রাম্য পরিবেশে বেড়ে ওঠা জীবন শহুরে পরিবেশে কেমন যেন বেসামাল হয়ে পড়ছিলাম৷
গ্রাম্য বিদ্যালয় থেকে একেবারে ভর্তি হলাম শহরের নামকরা কলেজে ৷দক্ষিণ কোলকাতার সিটি ক একাদশ শ্রেণির ছাত্র তখন আমি ৷ প্রথম পিরিয়ডে এলেন এক মাঝ বয়সী অধ্যা -পক ৷তাঁর কালো প্যান্টের উপরে ইন না করা সাদা জামা,কাঁধে ঝোলা ব্যাগ,মুখে পরিপাটি করে রাখা সাদা কালো দাড়ি এবং  অসীম মমতায় কথা আমার অন্তরে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা বোধ গড়ে ওঠে ৷ আমি সে দিন তাঁর পাঠদানে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম ৷  আমি সেই থেকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ওনার কোন বাংলা পিরিয়ড করিনি এমন কখনো হয় নি ৷
উনি আর কেউ নন ৷আমার জীবন পথের দিশারী ,আমার স্বপ্নের শিক্ষক অধ্যাপক অরিজিৎ মিত্র ৷আজ উনি নেই ৷১২ইজানুয়ারি ওনার জন্ম দিবস ৷গভীর শ্রদ্ধায় ওনার ছবির সামনে আজ মাথা নত হয়ে আসে ৷
        মন না চাইলে ও দুটো বছর পরে ওই কলেজ ছেড়ে চলে আসি আর্মহাস্ট স্ট্রীট সিটি কলেজে ৷অরিজিৎ মিত্র আমার মধ্যে যে মাতৃভাষার আগুন জ্বেলে দিয়েছেন তা আমি ত্যাগ করি কি করে ৷
         তখন সিটি কলেজে আমাদের নাট্য সাহিত্য পড়াচ্ছেন অধ্যাপক ব্রাত্য ব্রত বসু (পঃবঃশিক্ষা মন্ত্রী)অর্থাৎ আমাদের বি.বি স্যার৷ কবিতায় এস .জি (শর্বরী ঘোষ)৷মাতৃভাষাকে ভালোবাসা যায় কিন্তু তার অতলান্তিক গভীরতা -য় আমি ক্রমশঃ দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম ৷
সে দিনে আমার মতো গরীব বস্তির অন্ধকার ঘরে স্বপ্নের সন্ধানে হাতড়ে হাতড়ে বাঁচা ছেলেটার টিউশন পড়ার খরচ জোগাড় করাটা বড়োই দুরুহ ব্যাপার ৷
          আমি আশাবাদী প্রফেসর এ.মিত্র নিশ্চয়ই আমাকে বুঝবেন ৷
তাই সে দিন কোন দ্বিধা না করে স্যারের কাছে সরাসরি তাঁর স্টাফ রুমে হাজির হলাম ৷স্যারকে
প্রনাম করলাম ৷
স্যার এ.মিত্র আমাকে চিনতে পেরে বলেন,
বলো কেমন আছ?কি পড়ছো ?
সে দিন ওনাকে পড়াশোনা সংক্রান্ত সব কথা খুলে বললাম ৷
রসিক মানুষ তিনি ৷আমাকে উনি বললেন--
আমি তোমাকে খুব ভালো এক শিক্ষকের কাছে
পাঠাচ্ছি ৷ভালো হবে ৷ভালো রেজাল্ট করতে পারবে ৷
    আমি তো নাছোড়বান্দা ৷বললাম,
----স্যার,যদি  আপনার অসুবিধা না হয় তো আপনার কাছেই পড়ব ৷কলেজের পঠনপাঠন স্যারের সেদিন শেষ হয়েছিল ৷
উনি বললেন তোমার খুব তাড়া নেই তো?
আমি বললাম না স্যার ৷
এরপর সেদিন এ.মিত্র কে অনুসরণ করে এগিয়ে চললুম ৷স্যার বলতে বলতে যাচ্ছিলেন বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করছো ,অনেক অনেক বেশি তোমাকে পড়তে খেয়াল রেখো ৷
কথা বলতে বলতে উনি সেদিন আমাকে ওনার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন ৷
যেখানে আমার সহপাঠীরা অন্যান্য অধ্যাপক -দের কাছে পড়তো ৪০০টাকা ফিজ দিয়ে ৷জানি না কেন স্যার সেদিন আমাকে বললেন তোমাকে দিতে হবে না ৷টানা তিন বছর আমাকে অতি স্নেহে উনি পড়িয়েছেন ৷ শুধু আমাকে নয় ৷ আমার আগের ব্যাচের একটি ছেলে গরীব কিন্তু মেধাবী ৷পরিতোষ মন্ডল এ.মিত্র ওকে ও বিনা বেতনে পড়িয়েছেন ৷আজ ছেলেটা এক কলেজের অধ্যাপক ৷ওনার বাড়িতে আসার সময় এক ছাত্রী হঠাৎ রাস্তায় পড়ে গিয়ে পা কেটে যাওয়ায় ফোন করে বাড়িতেই ডাক্তার ডেকে আনেন ৷যতবার ওনার বাড়িতে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রী প্রয়োজনে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত ৷
       স্যার বলতেন,ফেরার সময় সবাই মিলে ভালো করে খাওয়া দাওয়া করেই ফিরবে ৷ পকেট থেকে উনি বের করে দিতেন অনেক টাকা ৷
       উনি সেদিন আমাদের পাশে ছিলেন বলেই
আজ আমরা কেউ স্কুলের শিক্ষক কিংবা কেউ কলেজের অধ্যাপক ৷প্রফেসর অরিজিৎ মিত্র আজ ও প্রতি পদে পদে আমাকে উজ্জীবিত করে থাকেন ৷তিনি আমার ধ্রুবতারা ৷আমার জীবন পথের দিশারী ৷
 
----------------------------------------  

 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল