
চোর সিরিজ
দেবাশীষ সরখেল
চুরি হয়ে গেছে রাজ কোষে ।
যদিও কী চুরি কেমন চুরি কোন সময় --- এসব প্রশ্ন অবান্তর ।
চুরি হয়ে গেছে সেইটাই বড় কথা।
তাছাড়া রাজার কোষাগারে বিবেক রয়েছে , বুদ্ধি রয়েছে জ্ঞান আছে , স্বাস্থ্যের সারথী রয়েছে , আছে রাশি রাশি খাদ্য পশুর ও মানুষের ।আছে রত্নোদধী রত্নসাগর
রত্ন কুট ।
সব চুরি হয়ে গেছে রাজকোষে ।
মন্ত্রী সান্ত্রী সিপাই বরকন্দাজ সকলে ছুটলেন ।
বিলম্ব দেখে অবশেষে বেরিয়ে পড়লেন রাজা ।
সাত ঘোড়ার গাড়ি হাঁকিয়ে চলল তস্করের অনুসন্ধান ।
খোঁজ খোঁজ খোঁজ । অনুসন্ধানের দাপটে কেঁপে উঠল নদী পাহাড় গ্রামগঞ্জ ।
অবশেষে রাজাকেই ধরে নিয়ে আসলেন এক চন্ডালমার্কা কবি ।
সকলে হই হই করে উঠলো ।
এ আবার কী তামাশা ? যার ঘরে চুরি হলো, সেই হয়ে গেল চোর ?
রাজার বশংবদ কেউ মানতে চাইলেন না । প্রায় সকলে বললেন, এই চালচুলোহীন,ক্ষ্যাপাটে মতলববাজ কবিকে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করা হোক ?
কবি ও মৃদু হেসে প্রস্তুত ।
অকস্মাৎ গোল বাঁধলো চারিদিকে।
আকাশে উঠল ঘন কৃষ্ণ মেঘ, গাছেরা মাথা দোলাতে লাগলো ।হাজার হাজার পাখি রাজপ্রাসাদ ঘিরে ফেলল ।
জন্তু হিংস্র সর্পকুল ঘন ঘন হুংকার ছাড়তে লাগলো,ফণা নারতে লাগলো ।
কবি স্মিত হেসে বললেন, দেখলে তো আমাকে বন্দী করা যায় না ?
যেদিকে স্রোত সেদিকে মানুষ ।
ভোল পাল্টাতে সময় লাগলো না ।
রাজা নিক্ষিপ্ত হলেন কারাগারে । কেউ আর চুরির স্বরূপ জানতে চাইল না ।
যে কবিকে চোর সাব্যস্ত করার চক্রান্ত চলছিল দেশে , অবশেষে পর্দা ফাঁস । তিনি হয়ে গেলেন রাজা ।
এই গাঁজাখুরি নোটে গাছটির এখানেই মুড়নোর কথা ছিল কিন্তু তা হবার নয়।
কবি বললেন ,আমি যখন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি আকাশও আনন্দে থাকে , পাখিদের কলকাকলি নদীর স্রোতকে স্বাভাবিক করে ।আমার কাজ ওইসব।
তবে আমার ছবি সিংহাসনে রাখতে পারো ।
সেই নাঙ্গা ভুখা কবিও যে রাজনীতিবিদ জনতা বুঝলেন । মুদ্রায় ছাপা হতে থাকলো তার ছবি ।সিংহাসনে আসীন হলেন কবি ।
না কবি নয় , শুধুই তার একটি প্রতিকৃতি ।
সেই থেকে ধন্য রাজা ।
প্রতিবছর মাঘে মেঘে কর্ষণ শুরু হয় । প্রতিবছর নিয়ম মেনে বর্ষা নামে ।
ময়ূরেরা অরণ্যে কলাপ মেলে সুসংবাদ তুলে ধরে।
ধরায় ধ্বনিত হতে থাকলো, ধন্য চোর ধন্য দেশ , ধন্য প্রকৃতি ।
--------+----------
দেবাশীষ সরখেল
রঘুনাথপুর
পুরুলিয়া
সূচক ৭২৩১৩৩
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন