Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ছবি
  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

ধারাবাহিক ।। সাহিত্যে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন (চতুর্থ পর্ব) ।। রণেশ রায়

সাহিত্যে  সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন

(চতুর্থ ভাগ)

রণেশ রায়


এবার আমরা সমসাময়িক কালে ঢুকব। কালক্রমে আর্থসামাজিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে ভাবনা চিন্তার পরিবর্তন ঘটে, সাহিত্যের জগতে এক পরিবর্তন আসে। সমাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের আকর্ষন বাড়ে।সাহিত্যের জগতে তার প্রভাব পড়ে। এই সময়কালে লেখা কবিতাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে  কবিতার বিষয়বস্ত ছন্দের ধরণ শব্দচয়ন সবেতেই এক পরিবর্তন এসেছে যা বর্তমান জীবন যাপনের সঙ্গে জড়িত। সাধারণ মানুষ, তার আবেগ, অধিকার বোধ, তার জন্য লড়াই কবিতার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। কবিতার আঙ্গিকে পরিবর্তন এসেছে। 

ছন্দের বিন্যাসে পরিবর্তন এসেছে। প্রকৃতিকে রক্ষা করার ভাবনা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। নারী স্বাধীনতার প্রশ্ন সামনের সারিতে এসেছে। নারী স্বাধীনতাকে কেন্দ্র করে নিকিতা গীলের কবিতা আমাদের লেখায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বেরটলট ব্রেট (Bertolt Brecht) বা ভারভারা রাওয়ের কবিতায় সমাজ পরিবর্তনের দাবি মুখর হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকৃতি বা প্রেম নিয়ে কবিতা আমাদের এই প্রচেষ্টায় জায়গা পেয়েছে। এখানে কবিতাগুলোতে মানুষের জীবনবোধ পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট।


বিশ্ব সাহিত্য জগতে আর্থ সামাজিক ক্ষত্রে শিল্প বিপ্লব ও আরও নিদৃষ্ট করে ফরাসি বিপ্লব তথা রেনেসাঁসের পরবর্তী যুগকে আধুনিক যুগ বলা হয়। ইউরোপে রোমান্টিক ও রোমান্টিক পরবর্তী ভিক্টরিয়া যুগের প্রবর্তন ঘটে এই সময়ে। সেটা ধরে ভারতের সাহিত্যে উপনিবেশকালিন সময় থেকে আধুনিক যুগ শুরু হয় যার প্রত্যক্ষ কসল মাইকেল মধুসূদন দত্ত যিনি পশ্চিমী জগতের সাহিত্য ধারা অনুসরণ করে সনেটের ও অমিত্রাক্ষর  ছন্দের প্রবর্তন করেন বাংলায়। তাই তাঁকে ধরে ভারতের সাহিত্যে আদি আধুনিক যুগের সূচনা বলা যায়। পরে রবীন্দ্রনাথের লিরিক ধর্মী প্রেম পূজা সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা বাংলায় পরবর্তী আধুনিক যুগের প্রবর্তন  করে যার সময়কাল ১৯৩০-৭০ বলে উল্লেখ করা হয়।


কবিতায় আদিআধুনিক যুগ পরবর্তী যে আধুনিক যুগের কথা বলা হয় তার সূচনা উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে যখন পুঁজিবাদ একচেটিয়া পুঁজিবাদের যুগে প্রবেশ করে। এর সঙ্গে পুঁজিবাদের  আগ্রাসী চিন্তা ভাবনার সমালোচনা কালের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। উগ্র আত্মকেন্দ্রিকতার সমালোচনা শুরু হয়। এই সময়কালের কিছু কিছু কবি রোমান্টিক যুগের ভাববাদে ফিরে যান যেখানে মানুষের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা স্বীকার করা হয়। মানুষকে সামাজিক জীব বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ঈশ্বরবাদ যুক্ত হয় মানবিকতাবাদের ভাবনায়। এই প্রসঙ্গে আমরা রবীন্দ্রনাথ, খালিল জিবরানের মত কবির কথা উল্লেখ করতে পাড়ি। এই যুগে পুঁজিবাদী ভাবনার বিরুদ্ধে মার্কসবাদী ভাবনাও বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দর্শনের জগতে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ এক বিপ্লবী পরিবর্তন আনে যার ব্যাপক প্রভাব পরে শিল্প সাহিত্যে। এরই সঙ্গে নারীবাদী আন্দোলন ইউরোপিয় সমাজে দুর্বার হয়ে ওঠে। নিকিতা গিলের মত নারীবাদী কবি এরই ফসল। আর মার্কসবাদী লেখক হিসেবে আমরা বেছে নিয়েছি  বার্তল ব্রেকট (BERTOLT BRECHT)  পেবলু নেরুদা    ও ভারতের ভারবারা রাওকে। তাদের কয়েকটা কবিতার অনুবাদ বইটাতে রেখেছি । এছাড়া আছেন দুচারজন আজকের কবির কবিতা যাদের পরিচয় এখনও খুবই সীমিত। কিন্তু কবিতাগুলো উচ্চ মানের বলে আমার মনে হয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে সময়কাল ধরে সবসময় কবির সঠিক পরিচয় পাওয়া যায় না। যেমন সময়ের দিক থেকে কেউ জন্মকাল ধরে ভিক্টরিয়া যুগের মানুষ হতে পারেন কিন্তু তাঁর কাব্যে তিনি রোমান্টিক ভাবনায় আপ্লুত থাকতে পারেন। যেমন আমাদের খালিল জিবরান। তাই কবিতা দিয়ে তাঁকে কোন গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হবে তা ঠিক করাই শ্রেয়।



আধুনিকোত্তর যুগ


আধুনিকোত্তর যুগে কবিরা বাংলা কবিতায় নতুন ধারণা, নতুন শৈলী এবং নতুন বিষয়বস্তু প্রবর্তন করেছেন। তাঁরা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলিকে তাঁদের কবিতায় প্রতিফলিত করেছেন।


আধুনিকোত্তর যুগ (পোস্টমডার্ন যুগ) হল আধুনিক যুগের পরবর্তী সময়কাল, যা প্রায় ১৯৭০-এর দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে। এই যুগের বৈশিষ্ট্য হল:


আধুনিকোত্তর সাহিত্য যে বিষয়গুলোকে  বেষ্টন করে থাকে সেগুলো হলো :


১. আধুনিকতা ধারণার সমালোচনা এবং নতুন ধারণার প্রবর্তন।

২.  প্রতিষ্ঠিত ধারণা ও কাঠামোর সমালোচনা।

৩. উপনিবেশবাদের সমালোচনা এবং উপনিবেশিত সমাজের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন।

৪. ফেমিনিজম: নারীবাদী চিন্তাধারা ও আন্দোলন

৫. পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন 

৫. ডিজিটাল যুগ: তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ এবং ডিজিটাল মিডিয়ার প্রভাব।


আধুনিকোত্তর যুগের বাংলা কবিতার লেখকগণের মধ্যে রয়েছেন:


১. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

২. শক্তি চট্টোপাধ্যায়

৩. জয় গোস্বামী

৪. সমর সেন

৫. শঙ্খ ঘোষ প্রমুখ।



ওপরের আলোচনা প্রসঙ্গে আধুনিক কবিতা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করে নেওয়া দরকার। পূজা প্রেম প্রকৃতি নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা বাংলা সাহিত্যকে পৃথিবীর দুয়ারে একটা বিশেষ উচ্চতায় তুলে ধরে। পশ্চিমী ঘরানার প্রভাব ছিল তাতে। পরে রবীন্দ্র আঙ্গিক ভেঙে তৈরী হয় আধুনিক ও আধুনিকোত্তর কবিতার নতুন ঘরানা। আজকের আধুনিক ও আধুনিকোত্তর কবিতায় বলনে বিস্তার নেই, যেন এক খন্ড মুহূর্তের চমকপ্রদ উপস্থাপন। খুলে বলা নয়। যেন নীরব স্থির চিত্র পরিবেশিত হয়। এক মননের অনুভূতির বিমূর্ত উপস্থাপন। কম বলেও অনেক বলা। আমরা জীবনানন্দের কবিতায় এক ধরনের ঝটকা উপস্থাপন পাই যেখানে তাঁর অনুভূতিকে বুঝে নিতে হয়, বুঝিয়ে দেওয়ার দায় থাকে না কবির। জীবানন্দ দাশের কবিতার একটা কথা 'আজ পৃথিবীর গভীর অসুখ' এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।কোন বিস্তৃত বিবরণ নেই কিন্তু এর মধ্যে কত গভীর কথা বলে দেওয়া। বা 'ঘোড়া' কবিতায় , '' আমরা যাইনি মরে---- তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়'' কবির ইঙ্গিতে বুঝে নিতে হয় তাঁর ভাবনা।প্রকাশের ভাবটা বিমূর্ত কিন্তু মূর্ত হয়ে ওঠে জীবন ভাবনা। জীবনানন্দের অধিকাংশ কবিতায় দেখা যায় তাঁর মানসপটে যেন তিনি চিত্র শিল্পী। তাঁর কবিতা ছবি হয়ে প্রানবন্ত হয়ে ওঠে। কবিমানস থেকে পাঠক মানসে রূপান্তরিত হয় সে ছবি। যেন একটা মুহূর্তের আচমকা ছবি। পড়েই মনে হয় সেগুলির চিত্রকলায় রূপান্তর করার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। যেমন, "কচি লেবু পাতার মত নরম সবুজ আলোয়/ পৃথিবী ভরে গিয়েছে এই ভোরের বেলা;/ কাঁচা বাতাবির মত সবুজ ঘাস — তেমনি সুঘ্রাণ— / হরিণেরা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে!" "মুখ তার অন্ধকার বিদিশার নিশা" (ঘাস, বনলতা সেন)। এই লাইনগুলির জন্মই হয়েছে শিল্পীর কবি মানসে স্থান পাবার জন্য। জীবনানন্দর কবিতার ওপর অনেক বিখ্যাত চিত্রশিল্পীই ছবির সিরিজ এঁকেছেন বলে জানা যায়।


জীবনানন্দের কবিতা অবলম্বনে পরাবাস্তুবাদের (surrealism) দর্শন নিয়ে কয়েকটা কথা বলে নেওয়া যেতে পারে। যে বাস্তবকে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অবলোকন করা হয় তাকে মনোলোকে কল্পরূপের সাহায্যে কথামালায় নান্দনিক রূপ দেওয়া হয় তাকে এক কথায় পরাবাস্তববাদ বলা চলে। পরাবাস্তুবাদিরা মনে করেন সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতায় বাস্তবকে চাঁচাছোলা ভাবে উলংগ করে তুলে ধরার মধ্যে শিল্পগুণ থাকে না। তাকে নানা রকম মূর্ত বিমূর্ত উপমায় সাহিত্যিকের মনোজগতে কল্পকথায় সাজিয়ে তুলে পরিবেশন করতে হয় যাতে তা নান্দনিক হয়ে ওঠে। অর্থাৎ বস্তুজগতের প্রতিফলন ঘটে সাহিত্যিকের মনোলোকে যা কল্পকথায় সেজে ওঠে নানা ধরনের উপমা রূপকের সাহায্যে। এতে মানুষের অবচেতন মনে যে একটা কল্পজগত তাকে বাস্তব জগৎ থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সাহিত্য বিশেষ করে কবিতা নেহাত অন্তর্মুখী এক বিমূর্ত শিল্প কর্ম হয়ে ওঠে বলে  পরাবাস্তুবাদের সমালোচনা করা হয়।বাংলা কাব্য সাহিত্যে জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতার আঙ্গিকে পরাবাস্তুবাদের দর্শনের রূপকার। এছাড়া আবদুল মান্নান সৈয়দ, সমীর রায়চৌধুরী, রবীন্দ্র গুহ, সিকদার আমিনুল হক প্রমুখ কবিগণের কবিতায় পরাবাস্তববাদিতার দর্শনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই সময় কবিতার ছন্দ বিন্যাসে এক পরিবর্তন আসে। মিল ছন্দের সঙ্গে অমিল ছন্দের এক মেলবন্ধন ঘটে। বদল ঘটে সনাতনী লিরিক ধর্মীয় ছন্দে। গদ্য কবিতা বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

 

তবে এটাও মনে রাখতে হয় আধুনিক কবিতার শেষ পর্যায়ে আর আধুনিকোত্তর যুগে কবিতাকে নেহাতই ভৌত জগৎ সমাজ বর্জিত এক বিমূর্ত অনুভূতির  উপস্থাপন বলে অনেকে দেখেন যার সঙ্গে জীবনের বাস্তবতার মিল থাকে না। কবিতার ভেতরে তাৎপর্য স্পষ্ট থাকে না। হয়ে ওঠে দুরুহ যা আমজনতার দুয়ারে পৌঁছোয় না, শিক্ষিত সমাজে যা বিমূর্ত আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। অনেক সময় কবিতায় ছন্দ লয় গুরুত্ব পায় না। এই ধরনের কবিতায় সাহিত্যিকের জীবনবোধ সমাজের প্রতি তাঁর কর্তব্য বোধকে অস্বীকার করা হয়। এরই মধ্যে আমরা শঙ্খ ঘোষ নীরেন চক্রবর্তী বা বীরেন চট্টোপাধ্যায়কে পাই যাঁরা আধুনিক কবিতার আঙ্গিকে সমাজের নিপীড়ন শোষণ তার থেকে মুক্তির পথ খুঁজেছেন। এছাড়া আছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় সুনীল গাঙ্গুলী যারা দুয়ের মধ্যে মিল ঘটাতে চেয়েছেন। তবে কবিতার আঙ্গিক তার ছন্দের ধরন বিষয় বস্তু নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বিবর্তন ঘটে চলেছে।





নিচের কবিতাটা কবি বার্থল ব্রেকত সোভিয়েত বিপ্লবের সমাজতান্ত্রিক নেতা লেনিন স্মরণে লেখেন।


 BERTOLT BRECHT( 1898-1956)

 *The Unconquerable Inscription*_কবিতাটার ভাষান্তর ভাবানুবাদ


অমর সে লিপি


মহাযুদ্ধের ভয়ঙ্কর সেই দিনগুলি,

ইতালির সান কারলোর জেলের

এক খুপরি,

অগুনতি সৈনিক, সঙ্গে মদ

মাতাল চোর

উপচে পড়া ভিড়।

ধীর পদক্ষেপে এক সাম্যবাদী

সৈনিক

হাতে পেন্সিল তার,

দেওয়ালে সযত্নে লিখে দেয়:

"বিপ্লব জিন্দাবাদ

 মহান লেনিন দীর্ঘজীবী হোন"।


রাত কাটতেই

আলো আঁধার সেই খুপরিতে

ফুটে ওঠে সে লিপি,

ভয়ে চমকে ওঠেন জেলার

সাহেব,

কার এত স্পর্ধা!

এক বালতি চুন দিয়ে পাঠান

এক রঙ মিস্ত্রীকে

আদেশ দেন, " মুছে ফেল এ

ভয়ংকর লেখা"।

মিস্ত্রি অক্ষরগুলোর ওপর

বুলিয়ে দেয় চুন,

কিন্তু কথাগুলো জ্বলজ্বল করে

ভেসে ওঠে,

ওপরে দেওয়ালে লেখা আরো

স্পষ্ট হয়ে উচ্চারিত হয়,

"বিপ্লব জিন্দাবাদ

দীর্ঘজীবী হও প্রিয় নেতা

লেনিন"।


কি স্পর্ধা! পাঠানো হল

আরেকজনকে,

সে মোটা বুরুশ দিয়ে পুরো

দেওয়াল চুন করে দিল,

তখনই যেন উবে মিলিয়ে যায়

অক্ষরগুলো;

ভোর হতেই সূর্যের কিরণে হেসে

ওঠে সে লিপি, 

"বিপ্লব জিন্দাবাদ

কমরেড লেনিন দীর্ঘজীবী হও"।


ক্ষেপে ওঠেন জেলার

পাঠান এক অভিজ্ঞ

খোদাইকরকে, গর্জে ওঠেন,

"জাহান্নামে পাঠাও একে, কেটে

সাফ করে দাও!"

মিস্ত্রি তাঁর আদেশে কেটে

ফেলেন অক্ষরগুলো,

খুপরির দেওয়াল লিপিহীন

রক্ত ঝরে,

কিন্তু কিছু পরে দেখা গেল

রক্তকরবী ফুটে ওঠে পাষানে

দেওয়ালের বুকে  গভীর প্রত্যয়ে

উচ্চারিত হয়,

"বিপ্লব জিন্দাবাদ

কমরেড লেনিন দীর্ঘজীবী হও''।


সৈনিক বলে ওঠেন,

এবার দেওয়ালটাই ভেঙে ফেল!

দেখ তো মুছতে পারো কিনা

সে যে খোদাই হয়ে আছে হৃদয়ে।


আজও আমার হৃদয় গহনে

জ্বলে সে বহ্নি অহরহ

নিশান হাতে বয়ে চলি সে বার্তা

" বিপ্লব জিন্দাবাদ"

কমরেড লেনিন বেঁচে আছ

আজও চেতনায় আমার।





আজকের আধুনিকোত্তর দুনিয়ায় নারীবাদী আন্দোলন নিয়ে কবি নিকিতা গিলের কলমে বিদ্রোহের সুর, কলমে যেন রক্ত ঝরে। তার ক্ষুরধার লেখায় নারীদের পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। নারীর মধ্যেকার সুপ্ত শক্তির কথা বলা হয়।


Girls OF THE WILD,

 Nikita Gill, ভাবানুবাদ



বন্য সে মেয়ে


ওরা তোমায় বলবে না

বলবে না লাল পরীর সে গল্প

বিপদে যে মেয়ে ডরে না,

সে যে যুদ্ধের সাজে

হয়ে ওঠে ভয়ংকরী দূষমনের কাছে,

করে না সে ভয়, করে নেয় জয়।


ওরা তোমায় শোনাবে গল্পে

কত শান্ত স্নিগ্ধ সুন্দর হয় মেয়েরা

কোন পাপ তারা করে না

কত নিষ্পাপ তারা 

পাপ তাদের স্পর্শ করে না।


শত্রুর বুকে যে ত্রাস ,

সেই লাল পরীর গল্প ওরা বলে না

তার মধ্যে এক ভয়ঙ্কর পশুর বাস,

সে মেয়ে জানে কখন কি করতে হয়।

আমি জানি তাদের এ ভাবনা,

তুমি জান লাল পরীর কথা

সেটা ওরা চায় না।





The Ocean You, 

Nikita Gill ভাবানুবাদ



তুমি যে সমুদ্র 


কেন অল্পেতে ভেঙে পড়?

জেনো, তুমি ভাঙতে পার না 

তুমি যে সাগর, সাগরকে কি ভাঙ্গা যায় ?

প্রিয়তমা, তুমি ভেঙে চল

কাঁচের দুয়ার তুমি ভেঙে ফেল, 

সে ঠেলে দেয় তোমাকে পেছনে, 

সে প্রাচীর ভেঙে 

তুমি তোমার গভীরে আলোর সন্ধানে 

নিজেকে খুঁজে পাও 

দুরন্ত ঢেউএর মাঝে,

গড়ে তোলো প্রবালের স্বচ্ছতায়,

সমুদ্র শৈবালে, চাঁদের জ্যোৎস্নায়,

আলোকিত বালুতটে;

রেখো না নিজেকে বন্দী 

কাঁচের অন্তরালে।

ভাঙ ভেঙে ফেল 

টুকরো টুকরো কর সে দুয়ার 

সে যে তোমার কারাগার, 

হয়ে ওঠো সমুদ্র এক 

নিজের গরবে গরব তোমার ।




জীবন যুদ্ধে মানুষ লড়াকু সৈনিক আবার একই সঙ্গে কোমল হৃদয়, সৌন্দর্যের পূজারী। সে যখন রুটি রুজির জন্য লড়াই করে তখনও সৌন্দর্য তার হৃদয়ে দোলা খায়। যার জন্য সে চরম বিপদে সর্বস্ব হারিয়েও হাসির সৌন্দর্যকে ভোলে না, তাকে ছাড়তে চায় না। সেদিক থেকে কবি রোমান্টিক। হাসিকে ধরে রাখতে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে সে প্রস্তুত কারণ কবি মনে করেন জীবনের কল্যাণের, সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি হাসি। এই জীবন বোধটাই প্রতিভাত হয়েছে পাবলো নেরুদার নিচের কবিতায়।কবির কল্পনায় হাসি হল গোলাপ যাকে পেতে গেলে কাঁটায় ক্ষত বিক্ষত হতে হয় কারণ কাঁটার শয্যায় গোলাপ ফোটে।


Come With Me, I Said, And No One Knew

 (VII)পাবলো নেরুদার কবিতার( 1904-'73) ভাবানুবাদ





পাবল নেরুদার Your Laughter কবিতা অবলম্বনে


তোমার হাসি 



যদি চাও আমার থেকে ছিনিয়ে নাও, 

ছিনিয়ে নাও রুটি তাড়িয়ে নাও বাতাস 

কিন্তু তোমার মুখের হাসি 

কেড়  না কেড় না তা, অম্লান হয়ে থাক।



শরতের সমুদ্র বুকে তোমার হাসি 

ঝর্নার ফেনিল উচ্ছাসে উপচে পড়ে

সে যেন ফুলের প্রস্ফুটন আমার হৃদয় কাননে 

আমি অপেক্ষায় তোমার সে হাসির জন্যে 

সেই নীলাভ ফুল, 

সে গোলাপ ফুটে ওঠে রক্তিম পৃথিবীর  বুকে।


কণ্টকাকীর্ণ সে গোলাপ 

যা উপহার দিয়েছ তুমি 

নিও না নিও না  তা ছিনিয়ে;

জলপ্রপাত, হঠাৎ আনন্দ উচ্ছাস তার, 

ত্বরিতে যে রূপালী ঢেউ 

জন্ম যার তোমার হৃদয়ে 

জ্বলে যেন সন্ধ্যার প্রদীপ হয়ে।


তিক্ত সে আমার লড়াই শেষে 

ক্লান্ত তন্দ্রামগ্ন চোখে ফিরি আমি 

কোন পরিবর্তন দেখি না এ জগতে,

কিন্তু তোমার মুখে যখন হাসি ফোটে

আকাশপারে সে আমায় খোঁজে 

আমি পৌঁছে যাই আমার জীবন দুয়ারে ।


আমার প্রেম যখন আঁধারে দিশাহারা

কিন্তু অধরে তোমার হাসির ফোয়ারা 

তুমি যদি হঠাৎ দেখ 

আমার রক্ত ঝরে পথের পাথরে 

হাসি যেন থাকে তোমার মুখে 

কারণ আমার হাতে তোমার হাসি

মুক্ত তলোয়ার হয়ে ওঠে।


তুমি হাস, হাস তুমি দিনে রাতে 

রাতের জ্যোৎস্নায় কোন এক দ্বীপে পথের বাঁকে,

মলিন ছেলেটি বাজায় বাঁশি 

সে  তোমাকে ভালোবাসে 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত