
মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা
প্রদীপ কুমার দে
খেয়েছি মায়ের ভালবাসার দুধ
ভাষাতেও যে সেই স্নেহধন্য মা
মানুষের দেওয়া আসল সহ সুদ
অফেরতযোগ্য তাই মা আর ভাষা
এইসব পোস্ট অনেকেই পছন্দ করে না কিন্তু আমি জানি আমার দেখা আর উপলব্ধ অভিজ্ঞতা অনেককেই একবার ভাবাবে।
দেশের সাহিত্য শিল্পকলা এই বিষয়গুলো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগে চুড়ান্ত রূপরেখা পায় না, বিষয়টিতে সরকারের দৃষ্টিনিক্ষেপ এবং এক সুষ্ঠ পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যদিও সব ব্যবস্থাই অটুট, অর্থবরাদ্দও আছে। কিন্তু তা কতিপয় গুনীদের (?) ঘিরেই আবদ্ধ।
কিশোর কিশোরী যারা এই বিষয় নিয়ে কাজ করে তাদের জন্য কোন পরিকল্পনা থাকে না। যারা নিজেদের নাম সরকারি খাতায় নথিভুক্ত করতে পারেনি অথচ অক্লান্ত পরিশ্রমে শিল্পের নানান দিকে কাজ করে চলেছেন সে সাহিত্যিক হোক অথবা কবি অথবা শিল্পী অথবা অভিনেতা অথবা পরিচালক, খোঁজ নিলে দেখা যাবে তারা বিনিময়ে কিছুই পায় না। অনেকে খাদ্যানুসন্ধানে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে তাদের শিল্পস্বত্বা অনেক সময় লোপ পেয়ে যায়। বাহ্যিক পরিবেশ তাকে নিয়ে কটুক্তি ও করতে ছাড়ে না, স্বাভাবিকভাবেই সাধারণের মনে এই প্রশ্ন আসবেই। অধিকাংশ শিল্পীই কিন্তু সব মেনেই তার স্বত্বা ত্যাগ করতে বিমুখই থাকে।
শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি দেশকে এক অন্যমাত্রায় উন্নত করে এটা সবাই জানে। কিন্তু সর্বাপেক্ষা সুস্থ কোন পরিকল্পনা আমদের এই দেশেে বুঝিবা একেবারেই অসম্ভব।
বহুদিন আগে একজন সাহিত্যিক দুঃখ করে জানিয়েছিলেন তারা এ বিষয়ে অনেক প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষভাগে কার্যতঃ তা বিফলে মাথা কুটে মরে।
পূর্বসূরীরা যা করে গেছেন যেমন রবীন্দ্রনাথ ,বঙ্কিমচন্দ্র ,শরৎচন্দ্র প্রভৃতি মহামানুষেরা যে অবদান রেখে গেছেন সাহিত্যের ইতিহাসে তা আমরা সকলেই অবগত আছি।
এরপরও সাহিত্য চলেছে তারই পথে।
বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিক ,কবি রা কাজ করেছেন এবং করে চলেছেন।বর্তমান যুগ, বর্তমান প্রজন্ম এগুলো গ্রহন করছে তো?
এই প্রশ্ন তা আমার মনে বার বার আসছে। কেনো জানিনা মনে হচ্ছে সবাই ভালো করে মন থেকে নিচ্ছে না। যারা সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত তাদের কথা আলাদা। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, নানান আমোদ প্রমোদ এখনকার যুব সমাজকে প্রলোভিত করছে। বই কতোজনে পড়ে কতোজনে মন দিয়ে কেনে?
বার বার বলছি কিছু ব্যক্তি এখনো আছে আমার মতো।যা আবার অন্যের চোখে backdated .
আগে বই বিক্রি এবং পড়ার রেওয়াজ যেটা ছিলো সেটা আর দেখি না। আমি নিজে আগে লিখে বইয়ের যে সাড়া পেতুম এখন তার সিকি ভাগ ও পাই না। বিনামুল্যে দান করলেও আলমারিতে সাজানো থাকে। কেমন লাগলো? জিজ্ঞাসা করলে 'খুব ভালো লিখেছেন ' বলে কায়দা করে। যতোই হোক লেখক হওয়ার সুবাদে লোকের মনের কথা কিছুটা হলে ও বুঝতে পারি। আর তাতেই খারাপ লাগে। গুরুজনেরাও ছোটদের আর বই দেয় না।কারণ সেই একই কথা বাস্তব যুগে এর কোনো অর্থনৈতিক মুল্য নেই।
অনেক কথা বলে ফেললাম। বার বার মনে আসে তাই বাধ্য হলাম শেয়ার করতে। ভুল হলে নিজ গুনে মাফ করবেন।
আর যদি সামান্যও ঠিক বলে মনে হয় তবে আসুন কিছু করি যাতে নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারি।
সেদিন স্থানীয় কবিতা উৎসব আর বইমেলায় মুচকি হেসে সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েটি তার কাঁধে তোলা একহাতে ধরা বাবার লেখা কিছু বই নিয়ে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছিল। আমি ওকে ডেকে জিজ্ঞাসা করায় ও যা বলতে চাইছিল তা আমার জানাই ছিল তাই আমিও মুচকি হেসে পরিচয়টা ওকে দিয়েই দিলাম। সলজ্জ হাসিতে ওর মিষ্টি মুখটা চনমনে হয়ে উঠলো। আমি আমার ঝুলি থেকে বার করে একটি বই উপহার দিলাম, বললাম বাবাকে বলো।
বই উৎসবে কবিতা পাঠ করে ডায়াস থেকে সবে নেমেছি দেখি মেয়েটি বই হাতে ফেরি করছে। মেয়েটির বাবা ও মা নাট্যকার এবং প্রখ্যাত লেখক, লেখিকা। মেয়েটিও এই জগতে কাজ করছে। শুধু যার জন্য আমার এই লেখা তাহল, যে একেবারে এই নতুন প্রজন্মের একটি মেয়েকে দেখলাম যে বাংলায় এমএ করে সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাইছে।
জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
আচ্ছা তুমি টেবিল নিলে না কেন? বইবিক্রির জন্য টেবিল তো আছে ?
-- না দাদা, কেউ যেতো না, কেউ দেখতো না, এ বরং ভালো, আমি ঘুরেফিরে সবার কাছে চলে যেতে পারছি।
ভালো কথা। এগিয়ে যাও!
শাবাশ সূচনা ! শাবাশ!
---------
PRADIP KUMAR DEY
Birati Housing Estate
LIG - 9
M.B.ROAD.
NIMTA
KOLKATA - 700 049
West Bengal
INDIA
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন