২১শে ফেব্রুয়ারি ও ১৯শে মে-র ভাষা আন্দোলন
কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য
পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের তথ্যানুসারে চর্যাপদ থেকে বাংলা ভাষার পদচারণ শুরু। তারপর গঙ্গা-পদ্মা-বরাক দিয়ে বহে গেছে অনেক জল। আমাদের দেশ, সাথে বাঙালী বিভক্ত হয়েছে, কিন্তু প্রাণের ভাষা বাংলা অবিভক্ত রয়ে গেছে গানে,সাহিত্যে, চলচ্চিত্রে, শিল্প কলায়। ১৯৫২ খ্রীষ্টাব্দে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় বাংলা ভাষাকে সরকারী রাজকীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য লাগাতার আন্দোলন শুরু হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারি সরকারী পুলিশ বাহিনী ভাষা আন্দোলনের জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালনায় রক্তাক্ত হয় আন্দোলন। পাঁচ জনের সাথে মৃত্যু হয় আরও অনেকের। কিন্তু পশ্চিম বঙ্গের সাধারণ মানুষের গোচরে এই তথ্য ছিল না। কারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় এই তথ্য স্থান পায়নি সরকারি দাক্ষিণ্যে কোনও অজ্ঞাত কারণে। ঠিক তেমন ভাবেই ১৯৬১ খ্রীষ্টাব্দে তৎকালীন আসাম সরকারের নির্দিষ্ট সরকারি ভাষা সিদ্ধান্তের জেরে শুরু হয় গণ আন্দোলন, সত্যাগ্রহ, প্রতিবাদ। প্রধানতঃ বাংলাভাষী অধ্যুষিত শিলচর ও তার সংলগ্ন এলাকায়। ১৯শে মে তদানীন্তন তারাপুর রেল স্টেশনে বিক্ষোভ শুরু হয়। একটিও রেল টিকিট সেদিন বিক্রি হয়নি। কথা ছিল শেষ ট্রেন চলে যাওয়া অবধি এই বিক্ষোভ চলবে। কিন্তু তার আগেই অপরাহ্নে কাটিগোড়ায় সত্যাগ্রহকারীদের গ্রেফতার করে পুলিশ ভ্যানে পুলিশ তাদের তারাপুরের বিক্ষোভ কারীদের পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল,যখন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে, এবং বন্দী দের নিয়ে পুলিশ পালিয়ে যায়। এর পর ভ্যানে অগ্নি- সংযোগ, তারপর পুলিশ গুলি চালায়। মৃত্যু হয় ৯ জনের, পরে আহত আরও দুজনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছায় ১১ । তার মধ্যে কমলা ভট্টাচার্য নামের ১৬ বছরের এক ছাত্রী কিশোরী কন্যাও ছিলেন। আন্দোলনের গতি প্রকৃতি অন্য রূপ নেয়।
ফলতঃ আইন সংশোধনে বাধ্য হন আসাম সরকার। বরাক উপত্যকায় বাঙালী অধ্যুষিত অঞ্চলে বাংলা ভাষাকে সরকারী ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। এই ঘটনা বিংশশতাব্দীর, কিন্তু চাকরি সূত্রে একবিংশ শতাব্দীতে অর্থাৎ ২০০০ খ্রীষ্টাব্দে শিলচরে গিয়ে এই তথ্য আমি পাই। সামনে ২১শে ফেব্রুয়ারি আসছে। সেটাও আমরা জানতে পেরেছি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাওয়ার পর। বাংলাদেশের একটি চলচ্চিত্র " জীবন থেকে নেওয়া"। উত্তর কোলকাতার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল, এবং চলচ্চিত্রটি আমি দেখেছিলাম। এই চলচ্চিত্রে প্রথম " আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি " গানটি সঙ্গীত আকারে প্রকাশ করা হয়। গীতিকার সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, সুরকার আলতাফ মাহমুদ। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা জহির রায়হান। ৬৯এর পূর্ব পাকিস্তানের গণ আন্দোলনের উপর চলচ্চিত্রটি নির্মিত। চাকরি সূত্রে শিলচর শহরে বরাক নদীর বাঁধের পাশে ভাড়া বাড়িতে একবছর ছিলাম। আর তখনই জানতে পারি ১৯শে মে ১৯৬১ খ্রীস্টাব্দের ভাষা শহীদ দিবসের কথা। আমি বিস্মিত হয়ে যাই পশ্চিম বঙ্গের বাঙালী কে এভাবে অন্ধকারে রাখার কি খুব দরকার ছিল? বাংলায় নভেম্বর বিপ্লব উদযাপিত হলেও, ১লা মে উদযাপিত হলেও ১৯শে মে সেই কৌলীন্য অর্জন করতে পারেনি। তবে আজ মোবাইল, কম্পিউটারের যুগে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী খবরটা জানলেও ২১শে ফেব্রুয়ারির আগ্রহ ১৯শে মে'তে দেখা যায় না। বিশেষতঃ যখন ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ খ্রীস্টাব্দে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জন করে সংযুক্ত রাষ্ট্র সংঘের কাছ থেকে।
•~•~•~•~• সমাপ্ত•~•~•~•~•
(কিছু তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।)
কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য
(Kalyan Kumar Sandilya)
RG-9/1, Raghunathpur,
P. O. Raghunathpur, P. S. Baguiati
Kolkata- 700059,West Bengal
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন