রথীনবাবু, ব্যথিতকে ব্যথা দিতে নেই। আমরা সব মুখপোড়া হনুমান। বিয়ের পর মুখ পুড়িয়ে কেউ কারো দিকে তাকাতে পারি না। এই তো সেদিন এক ভদ্রলোককে দেখলাম, মুখটা কালো করে বাজারে যাচ্ছেন। জানতে চাইলাম, কি ঘোষদা শরীরটা খারাপ নাকি?
পঞ্চাশ পেরোলেই চিন্তার বিষয়। পেটে ব্যথা তবু ওষুধ বলা যাবে, বুকে ব্যথার কি বলব? আমরা আবার একটু ডাক্তারি না করতে পারলে অস্বস্তি ভোগ করি। পেটে ব্যথা, মাথা ব্যথা , পিঠে ব্যথা, ঠ্যাঙ পর্যন্ত টোটকা টাটকাতে চলত। সরকারদা তো উঁচিয়ে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে এ্যালোপ্যাথি। ঝরঝর করে কত ওষুধ বলে যাবেন। আমার ওই তেলাকুচো , থানকুনি, আকন্দ,থোড়,মোচাতে আর চলে ? আমি ইদানীং আরনিকা, নার্স, পালসেটিলা, ফসফরাস, সালফার, ইপিকাক চালাচ্ছি। নাহলে প্রেস্টিজ থাকে না। সবাই সব জানে,আমি মশাই কিচ্ছু জানি না।ঘোষদাটা কেমন বেরসিক দেখুন, খেঁকিয়ে উঠবে না? বললেন, পরের পিছনে কাঠি না দিলে বুঝি আপনার চলে না?
দুস্ এ দেখি উল্টো বুঝলি রাম! কাঠি দেব কেন? যদি ভেঙে যায় ? এই প্রকাশ্য রাস্তায় - ছিঃ ছিঃ, ঘোষদার যত বয়স হচ্ছে, জ্ঞান গম্মি লোপ পাচ্ছে। আমি আর কথা বাড়ালাম না। অন্যায় করেছি, মুখে বোকা বোকা হাসি টেনে দাঁড়িয়ে রইলাম। এটা আমি বিয়ের পর শিখেছি। মাত্র বছর খানেক, তাও নয়। মৃদু মন্দ চলত যখন, ভাবতাম প্রেম জমছে। যে বয়সে বিয়ে করেছি দাদা , তখন কারো কি কিছু পাকতে বাকি ছিল? রস শুকিয়ে খরখরি । "কি যে করো না? "কবে উবে গিয়ে ঝরে পড়ছে " তোমরা কি ধাতুর মানুষ বুঝি না। " তারপর "সরো, সরো, সব কুড়ের ঝাড় ", " মাথায় কি আছে ?"সেখান থেকে চোদ্দো পুরুষ, বংশ,আর সহ্য হয়?
প্রথম প্রথম রাগ করলে, তবু মাখনের টাচ পড়ত। বছর দুয়েকের পর থেকে সেসব উঠে গেছে। খাবে খাবে, না খাবে নাই খাবে। সাধাসাধির দিন শেষ। ঘরে খাবার ঢাকা দেওয়া বন্ধ হয়ে রান্নাঘরে, রান্নাঘরেও ঢাকা পড়ে না! সেই থেকে আর রাগ করি না।
বিপদটা বাঁধে মাসের শেষের দিকে। সরকারি চাকুরেদের কপালে কি ঘটে কে জানে! আমাদের বেসরকারি, কামাই হলে তো কাটবে, এমনিতে মাসে তিনবার। চুরি করে পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় তো গৃহিণীর হাত থেকে পার পাওয়া খুব শক্ত। ঠিক মাল বের করে নেবে! বুদ্ধি করে টাকার দায়িত্বটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। মাইনের টাকা তো দুধ নয়! তবু ফাঁদে ফেলে পকেট ফাঁক করবেই। সত্যি বলছি, বাজারে গেলে একটু ঝাড়ি। আপনি বলুন, চা-টা, তেলেভাজাটা, ঝালমুড়ি খেতে তো ইচ্ছে করে? কোনো কোনোদিন ইচ্ছে তো করে, বন্ধুদের সঙ্গে একটু চা খাই। পান করা, মাছ ধরা সব কবে ছেড়ে দিয়েছি। সখ করে বেড়ানো, সেও উঠে গেছে। যেখানেই যাও, হেডমিস্ট্রেস সঙ্গে নিতেই হবে। বেসামাল হওয়া যাবে না। ঘর বার একাকার। তা বাজার থেকে বাড়ি ফিরলে মাথা গরম । হিসাবে না মিললে সেই যে বকবকানি শুরু হল ,রাতে শোয়া পর্যন্ত। মাঝে মাঝে মেঝেতে শুয়ে দেখেছি, বেকার। নিজেকে কষ্ট দেওয়া। আর ছেলে বা মেয়ে একটা কিছু হয়ে যাবার পর দয়া মায়া বলে কিছু অবশিষ্ট থাকে না।
সকালে ঘুম থেকে ওঠা দিয়ে হুকুম শুরু, যতক্ষণ বাড়ি আছি চলছে। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে আবার শুরু ঘুম পর্যন্ত। মাঝে মাঝে রাতেও খাটতে হয়। বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না, "আমার একার সংসার? " নয়তো "তখন বুঝে বে করা উচিত ছিল। আমাকে বাঁদি করে আনোনি ! "
এতো সবের পরেও একটু খোলামেলা বাঁচতে ইচ্ছে করে। সারাক্ষণ কৈফিয়ত, সারাক্ষণ চোখের সামনে থাকো, এ যেন বন্দী কারাগার। মানুষের সঙ্গে দুটো কথা বলে একটু ভুলে থাকতে চাই। কিন্তু কাকে বলব? তারও ঘা দগদগে। কেউ দেখায়, কেউ দেখায় না। কেউ শুনে মজা পায়। এর থেকে ঘা কতক চেলা কাঠ পাছায় পড়লে ভালো ছিল - তবুও বউ মন্দ নয়। হাজার হোক স্ত্রী পরম দেবী তো!
******************************
অংশুদেব, গ্রাম + পোস্ট:- চম্পাহাটি, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পিন ৭৪৩৩৩০
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন