- বুঝলেন খবরবাবু ? গোঁফেশ্বর দারোগা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন - দেয়ার ইজ নো ফাউল প্লে এ্যাট দ্য পাত্রীজ হাউজ ৷ ভয় দ্যাখানো , এক্সটরশন বা খাদ্যে বিষক্রিয়া টাইপের কোনও ঘটনাই ঘটেনি ৷ ব্যাপারটা তাই আরও জটিল হয়ে উঠলো ৷- আজকের খবরটা পতঞ্জলি শূর মানে থানার খবরবাবুই নিয়ে এসেছেন ৷ বকুলতলার বিনোদবিহারী ব্যানার্জ্জীর মেয়ে সুদর্শনাকে দেখতে গিয়েছিলো হরিমোহন আর ওর বন্ধু ৷ হরিমোহন শিমুলতলার যদুনাথ মুখোপাধ্যায়ের মেজ ছেলে ৷ কলকাতায় চাকরি করে ৷ সুদর্শনাকে যদুনাথবাবুর দারুন পছন্দ ৷ মোটামুটি ঠিক করেছেন ছেলের বৌ করে নিয়ে আসবেন ৷ তবে ছেলে দেখেনি বলে তারিখ ঠিক করতে পারেননি ৷ সেই মেয়ে দেখতে গিয়েই বিপত্তি ৷গোঁফেশ্বর দারোগা সেই কেসের তদন্তে গিয়ে , পাত্রীর বাড়ির জনে জনে জিঙ্গাসা করে , এমন কী পাত্রীর বাড়িতে হরিমোহনকে যে সমস্ত খাবার খেতে দেয়া হয়েছিলো সেগুলো সব খেয়েবুঝতে পারেন যে পাত্রীর বাড়ি সম্পর্কে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছিলো , সবটাই ভুল ৷এদিকে সব্বার মন ভীষন খারাপ ৷ শঙ্কিত যে এতদিন পরে একটা ভালো যোগাযোগ হলো , সেটাতেও একটা টকো খিঁচ বাঁধলো !ওদিকে হরিমোহনের বাড়িতে তখন রীতিমতো ব্যস্ততা ৷ গম্ গম্ করছে ৷ সবাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা শুরু করেছে - নিশ্চয়ই ছেলে কোথাও প্রেম ট্রেম , না হয় কাউকে গোপনে রেজিস্ট্রি করে রেখে এইসব বাহানা শুরু করেছে ৷ হরিমোহনের মেজপিসি রুক্ষ্মিণীদেবী ভীষন ঠোঁটকাটা মহিলা ৷ রাগে দাদাকে বলেই বসলেন - এখন ছেলেটাকে দোষ দিয়ে কী লাভ ? কতবার বলেছি ,ছেলেটার বয়স হচ্ছে একটা মেয়ে দেখে বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা কর ৷ অতো বাছ-বিচার করতে হবে না ৷ শুনেছিস আমার কথা ? এখন বোঝ ঠ্যালা ৷হরিমোহনকে চেপে ধরার আগে বাড়ির সবাইকে জনে জনে জিঙ্গাসা করে জেনে নেন যে , ছেলেটির স্বভাব চরিত্র মোটামুটি ভালো ৷ ইদানিং কালের ছেলেদের মতো মেয়েদের সাথে মেলামেশা বা প্রেম-ভালবাসার খেলা খেলতে মোটেই অভ্যস্ত নয় ৷ বন্ধু-বান্ধবরা যে ওকে এইব্যাপারে ওস্কায়নি , তেমনটা নয় ৷ কিন্তু , হরিমোহন ওসবে মোটেই রাজি হয়নি ৷ বলেছিলো - ওসব ওর দ্বারা হবে না ৷ ও ওর মা এবং বাবাকে এইব্যাপারে ডিফাই করতে পারবে না ৷ কারণ ওরা ওর বিয়ের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেছে ৷ ওদের ওই দ্যাখা-শোনার ব্যাপারে ওর পূর্ণ সমর্থন আছে ৷ছোট বোন জয়িতার বিয়ের পর থেকেই ওরা ওর জন্য মেয়ে দেখা শুরু করেছে ৷ কিন্তু , ওদের এতো খুঁত-খুঁতানি - কেউ মোটা , কেউ রোগা , কেউ অবার সুক্তো রাঁধতে জানে না , ব্রতকথা পড়তে পারে না ৷ কারোও হাতের আঙুলগুলো সুশ্রী নয় ৷ পায়ের পাতাটা ছড়ানো , হাঁটলে শব্দ হয় ৷ এইসবের পরে রয়েছে রাশি নক্ষত্র এবং কুষ্ঠী ঠিকুজি বিচার ৷হরিমোহনের বাবার মেয়ে দেখার এত রকম বাহানা দেখে মেয়েরাই ,শেষের দিকে আর রাজি হচ্ছিলো না দেখাতে বসতে ৷ ও নিজেও বাবা মায়ের এই মানসিকতায় রীতিমতো হতাশ ৷ কিন্তু , বিয়ে সং ক্রান্ত ব্যাপারে ওর মনের অবস্থাটা অনেকটা পেটে খিদে মুখে লাজের মতো ৷ বছর খানেক আগে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে বাড়ির অজান্তেই খবরের কাগজে বিঞ্জাপন দিয়ে গোটা চারেক মেয়ে দেখতে গিয়েছিলো বন্ধু রমেনকে নিয়ে ৷ বাটানগর , কল্যাণী , বসিরহাট আর বারুইপুরে ৷সে মারাত্মক অভিঙ্গতা !বাটানগরে যেই শুনেছিলো ওরা দশ ভাই বোন এবং বাবা কাকাদের যৌথ সংসারে সবাই যৌথভাবে বাস করে ৷ ওরা আর দেরী করেনি ৷ পত্রপাঠ বিদায় করেছিলো ৷ বসিরহাটে মেয়ের কাকা হরিমোহনকে দেখে ভেবেছিলো ছেলের কাকা ৷ তাই বলেছিলো মেয়ের ইচ্ছে একটু ছেলের সাথে একান্তে কথা বলবে ৷ বুঝলেন তো মশাই , আজকাল আর সেই আগের মতো দিন নেই ৷ একবার ছেলেকে একটু পাঠাবার ব্যবস্থা করবেন ৷ব্যাপার দুটো হরিমোহনের খুব খারাপ লেগেছিলো ৷ ঠিক করেছিলো আর মেয়ে দেখতে যাবে না ৷ কিন্তু , রমেন মোটেই ছাড়বার পাত্র নয় ৷ ওর একটা হিল্লে করবে বলে যেন খেঁপে উঠেছিলো ৷ কল্যাণীর মেয়েটা ওর পছন্দ হয়েছিলো ৷ কিন্তু , ওকে ঘরজামাই হয়ে থাকতে হবে শুনে হরিমোহন ব্যাপারটা বাতিল করেছিলো ৷ বারুইপুরে গিয়ে ওরা চরম বিপদে পড়েছিলো ৷ কোনমতে প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলো ৷সেই ফিরে আসার পরে ওরা আজ সুদর্শনাকে দেখতে গিয়েছিলো ৷ সেখানেই হরিমোহন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে ৷- দেয়ার আর সাপ্রেশন অফ সাম মেটেরিয়াল ফ্যাক্টস ৷ গোঁফেশ্বর দারোগা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন - যদুনাথবাবু , আমি কী বললাম বুঝতে পারলেন ? এ্যান্ড দ্যাট হ্যাজ বিন ডান বাই হুম , এটাই এখন আমাকে বের করতে হবে ৷চায়ে ওর বিরাট গোঁফের কিছুটা অংশ ভিজে গেছে ৷ হাত দিয়ে সেটা মুছতে মুছতে গিয়ে দারোগাবাবু গিয়ে হরিমোহনের পাশে বসে জানতে চাইলেন - সকাল বেলায় ওর অসুস্থ হয়ে পড়ার আসল কারনটা ৷ সেই সঙ্গে ভারী গলায় জানিয়ে দিলেন - এ যাবৎ যা এভিডেন্স উঠে এসেছে , তাতে মোটামুটি আপনি বিয়ের ব্যাপারে বাবা মায়ের কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন কেছেন ৷ ভারতীয় দন্ড বিধি অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা যেতেই পারে ৷হরিমোহন নি:শ্চুপ ৷ ঘন ঘন নি:শ্বাস নিচ্ছে ৷- সুদর্শনাকে দেখেই আপনার ভেতরে সেই অন্যায় বোধটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিলো ৷ দারোগাবাবু বলে চলেন - রেজাল্টিং ইউওর সাডেন ইলনেস ৷ ইউ আর গিল্টি ৷ ইউ হ্যাভ চিটেড অল ৷ সুদর্শনাকেও ৷দারোগাবাবুর কথাটা কানে যেতেই হরিমোহন তড়াং করে লাফিয়ে উঠে বসে ৷ অভিমানের সুরে বলে ওঠে - আপনার দেখছি ভালো বিচার ! তথ্য গোপন করলেন বাবা , আর দোষ চাপাচ্ছেন আমার ঘাড়ে ?হরিমোহনেরকথা শুনে উপস্থিত সব্বাই রীতিমতো বিস্মিত ৷হাঁ করে সব তাকিয়ে আছে ৷- বাবা তো একবারের জন্যও বলেননি যে , হরিমোহন বলে চলে - পাত্রী মেয়েটা বেঁটে ৷ লিলিপুটের মতো ৷ পাঁচ ফুট লম্বা ৷ সেখানে আমি প্রায় ছ" ফুট ৷ পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি ৷ আমার ঘাড়ের কাছেও পড়বে না ৷ লোকে দেখে হাসাহাসি করবে না ? আমি তো বিয়ের জন্য কোনও চাপাচাপি করিনি ৷ তাহলে কেন বাবা ওই রকম একটা মেয়েকে পছন্দ করতে গেলেন ? কথা দিয়ে এসেছেন ? আপনিই বলুন না দারোগাবাবু , ওটা কী মানুষের পর্যায়ে পড়ে ? আমার পক্ষে .....হরিমোহন কথা শেষ করতে পারেনি , যদুনাথবাবু হাতের লাঠিটা উঁচিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলেন - হারামজাদা ! এখন আমার ঘাড়ে সব দোষ চাপানো হচ্ছে ৷ তুই রুক্ষ্মিণী আর জয়িতাকে ছোট পরিবারের কথা বলিসনি ? আমি সেই জন্যই বেছে বেছে তোর জন্য ছোট পরিবার দেখছি ৷ আজ তোর একদিন কী আমার একদিন ৷- এ কী ! গোঁফেশ্বর দারোগা আগুয়ান যদুনাথবাবুকে ঠেকাতে গিয়ে লাঠির আঘাতে মেঝেতে চিৎপটাং হয়ে পড়েও বলে চলেন - পতঞ্জলিবাবু ? যদুনাথবাবুকে ধরুন ৷ স্টপ হিম ৷ বুঝিয়ে বলুন , পুলিশের সামনে কাউকে মারতে উদ্যত হওয়া গুরুতর অপরাধ ৷ হী উইল বী এ্যারেসস্টেড ৷সবাই মিলে মুখার্জীবাবুকে নিরস্ত্র করে দেখেন গোঁফেশ্বর দারোগা মেঝেতে পড়ে কাতড়াচ্ছেন ৷ চশমাটা পড়ে ভেঙে গিয়েছে ৷ কপাল ফেটে রক্ত বেরুচ্ছে ৷মহাফাঁপড়ে পড়েছেন গোঁফেশ্বর দারোগা ৷একটা নতুন ধরনের কেসের রহস্য উদঘাটন করতে এসে যে এইভাবে ফেঁসে যাবে , সেটা ও কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি ৷ উল্টো যদুনাথবাবুর অভিমান , ওনার স্ত্রী সৌদামিনী দেবীর চোখের জল , বিনোদবিহারী ব্যানার্জ্জীর আশঙ্কা , সুদর্শনার হতাশা আর হরিমোহনের চাহিদা ওকে দারুন নস্টালজিক করে তুলেছে ৷এদের সুরাহার জন্য একটা কিছু করা দরকার ৷পুলিশের কাজ দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন ৷ এখানে তো কেউই দুষ্ট লোক নয় ৷ সব্বাইকে সুষ্টু বিচার দেয়া দরকার ৷- এইটুকু ঝামেলাতে ভেঙে পড়লে চলবে ? সো লং গোঁফেশ্বর দারোগা ইজ হিয়ার , ডোন্ট টিয়ার এ্যন্ড নো ফিয়ার ৷ হরিমোহনের দিকে তাকিয়ে জানতে চায় - মেয়েটাকে পছন্দ না হওয়ার কারণ কী শুধুই বেঁটে , না অন্য কিছু ? বী ফ্র্যাঙ্ক ৷হরিমোহন মাথা নীচু করে নির্বাক ৷- মনে হচ্ছে সিজফায়ার হয়েছে ৷ দারোগা তার স্বভাবসিদ্ধ হাসি তুলে বললেন - পাত্রী আরোও ছয় ইঞ্চি উঁচু হলেই তো রাজি ?হরিমোহন আর নির্বাক থাকতে পারলো না ৷ হেসে নাড়ালো ৷- ভেরি গুড ৷ গোঁফেশ্বর দারোগা উঠে দাঁড়িয়ে টুপিটা মাথায় দিয়ে বললেন - মাস্টারমশাই? আমি তাহলে আসি ৷ যাবার আগে একটা কথা বলে যাই , আপনারা আমাকে নেমন্তন্ন করেন বা না করেন ,বিয়ের দিন আমি কিন্তু আসবোই৷ নেমন্তন্ন খেতে নয় ৷ সুদর্শনাকে এক জোড়া ছয় ইঞ্চি পেনসিল হিলের জুতো গিফ্ট দেবার জন্য ৷ থ্যাঙ্ক ইউ অল ৷-----------------ঠিকানাঃপ্রণবকুমার চক্রবর্তী৩৭/১ ,স্বামী শিবানন্দ রোডচৌধুরীপাড়াবারাসাতকোলকাতা - ৭০০১২৪মোবাইল নম্বর - ৮৭৭৭৬৮৫৯৯২হোয়াটস অ্যাপ নম্বর - ৯৪৩৩০২৮৬৮৫Email id : pranabkr1948@gmail.com
মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১
Home
৪৪তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪২৮ অক্টোবর ২০২১
রম্যরচনা
রম্যরচনা ।। ছোট পরিবারের জন্য ।। প্রণবকুমার চক্রবর্তী
রম্যরচনা ।। ছোট পরিবারের জন্য ।। প্রণবকুমার চক্রবর্তী
Tags
# ৪৪তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪২৮ অক্টোবর ২০২১
# রম্যরচনা

প্রসঙ্গ : নবপ্রভাত পরিবার
রম্যরচনা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
'নবপ্রভাত সাহিত্য পরিবার'
* 'নবপ্রভাত' মাসিক ব্লগ-ম্যাগাজিন সাহিত্যের সমস্ত শাখার লেখাই প্রকাশ করে। গোষ্ঠীর ছুঁৎমার্গ নেই।
* মুদ্রিত নবপ্রভাত বছরে ১/২ বার প্রকাশিত হয়।
* নবপ্রভাত প্রকাশনী সুনামের সঙ্গে তার পথ চলা জারি রেখেছে।
* সাধারণ সম্পাদকঃ নিরাশাহরণ নস্কর। প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬।
* আমাদের পরিবারের অন্য দুটি মাসিক ব্লগজিন— ১) কথাকাহিনি (সমস্ত রকম গদ্য প্রকাশিত হয়। সম্পাদকঃ শ্রী বিশ্বনাথ প্রামাণিক) এবং ২) কিশলয় (শিশুকিশোর উপযোগী আঁকা-লেখা প্রকাশিত হয়। যুগ্ম সম্পাদকঃ শ্রী প্রিয়ব্রত দত্ত ও শ্রী কার্তিক চন্দ্র পাল)। * সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্য—শ্রী লক্ষ্মণ চন্দ্র নস্কর, জগবন্ধু হালদার, অরবিন্দ পুরকাইত, চন্দন মিত্র, পরিতোষ মণ্ডল প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন