ভুয়ো
গ্রামের প্রবীণ মাস্টারমশাই প্রণববাবুর শিক্ষক দিবসের সকালটা একটু অন্য রকম
ব্যস্ততার মধ্যেই কাটে। আর কাটবে নাই বা কেন ? এই ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তো
তিনি কম ছাত্রছাত্রীর বৈতরণী পার করলেন না।আজ তারা নিজ নিজ জগতে প্রতিষ্ঠা
পেয়েছে।তাই আজকের দিনে তারা তাদের প্রিয় স্যার এর খোঁজ খবর নেবে, তার আশীর্বাদ
ধন্য হতে চাইবে এতো খুব সহজ কথা।পূর্ণপরিতৃপ্ত প্রণব বাবুও পরমেশ্বর এর কাছে
তার প্রাণাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান আত্মজ স্বরূপ ছাত্রছাত্রীদের সুভাশুভ কামনা
করেন।মনে মনে ভাবেন, আর তো মাত্র কয়েকটা দিন তারপর তিনিও যে প্রাক্তন ।
সকালের ব্যস্ততা কাটিয়ে, কোনো রকমে স্নান- খাওয়া সেরে ,সাদা ধূতির উপর
পাঞ্জাবীটা চাপিয়ে প্রণব বাবু যথাসময়ে স্কুল এ হাজির হন। সমবেত
ছাত্রছাত্রীদের প্রণামের পালা চুকলে, দোতলায় হেডস্যার এর ঘরে এসে জানতে পারেন,
D.I. অফিস থেকে এক কমবয়সী অফিসার এসেছেন, তার অবসর কালীন কাগজপত্র নিয়ে কথা
বলতে।হেড স্যার পরিচয় করিয়ে দিতেই অফিসার বলে ওঠেন "প্রণব বাবু আপনার B.ED
degree টা তো দেখছি বৈধ নয় , কারণ আপনি যে কলেজ হতে B.ED করেছিলেন তার তো
NCTE এর অনুমোদন নেই ,আপনি যে কি ভাবে ফাঁকি দিয়ে এত বছর শিক্ষকতা করছেন তা
ভাবতে বেশ অবাক লাগছে ।আপনাদের মত কিছু লোকের জন্যই আজ শিক্ষক সমাজ কলুষিত
হচ্ছে।আপনার লজ্জা হওয়া উচিত "।
প্রণব বাবু জীবনে এত অপমানিত আগে কখনো হন নি। গলা ঝেড়ে ছোকরা অফিসার টা আরও
কিছু বলতে যাচ্ছিল, প্রণব বাবু তাকে বিন্দুমাত্র আমল না দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে
দাঁড়ান। একনজর হঠাৎ ভীষণ কাজে ব্যস্ত হেড স্যার এর দিকে চেয়ে,ঘরের বাইরে
বেরিয়ে আসেন।ধীর পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় শুনতে পান শিক্ষক দিবস উৎযাপন মঞ্চ
হতে ভেসে আসছে " আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে....
===============================
সন্তু চ্যাটার্জি
আসানসোল
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন