Featured Post
মুক্তভাবনা ।। আব্দুস সালাম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
শব্দ জাল চিত্ত বিভ্রমের কারণ
""শব্দ জাফলং মহারণ্যং চিত্ত বিভ্রমকারণম""
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু কিছু শব্দ আমরা ব্যাবহার করি যার প্রকৃত এবং বস্তুনিষ্ট নির্দেশনা নেই।নানা রকম শব্দ আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যা স্থান কাল পাত্র হিসেবে সংজ্ঞা বদলায়। উইলিয়াম এম্প্ সনের ভাষায় এগুলো কমপ্লেক্স ওয়ার্ড।এই শব্দ গুলো সমাজে নানা রকম অর্থ নিয়ে বিচরণ করে। আধুনিক বিবেচনায় এরকম শব্দ গুলোর অর্থ নির্মাণ সাপেক্ষ।প্রত্যেক সমাজে বা গোষ্ঠীতে এই রকম কমপ্লেক্স শব্দবন্ধ এমন ভিন্নতর তাৎপর্য নির্মাণ করে যা তাদের অজ্ঞাত সারে চাউর হয়ে যায়। এগুলোর এমন মোহ আছে যা সমাজ কে সংঘবদ্ধ রাখতে সাহায্য করে। আবার এও দেখা যায় কখনো সখনো ডিসকানেক্ট ও করে বসে। নতুন ভাবে শব্দের বিনির্মাণ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ঐ শব্দটা ব্যবচ্ছেদ হয়ে আবার নতুন রূপে সমাজে চলতে থাকে।
জীবন , ধর্ম, রাজনীতি, ও মানবিকতা এই রকম কিছু দৃষ্টান্তমূলক শব্দ যা আমাদের সমাজে দাপটের সাথে বিচরণ করে । এগুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকলে মানসিক জগৎকে আমাদের বিপর্যস্ত করে তোলে। এগুলো সম্পর্কে আমাদের ভাবতে হয় আবার ভাবাতেও থাকে। এটাই জীবনের ধর্ম।
পৃথিবীর বিচিত্র ভাবনার অধিকারী জীবকূল।আর এই জীবকূলের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় জীব হলো মানবকূল । মানুষ হলো ভাষা বিশিষ্ট জীব।আর ভাষাকে আশ্রয় করে চিন্তা ভাবনা, সুখদুঃখের আদান প্রদান, কামনা বাসনা।এর ফলে মানব জীবনে এসে পড়ে ন্যায় অন্যায় বোধ। এগুলো একটি উচ্চারিত হলে অপরটি মনে অনুরোরন তোলে।
এমনই একটি শব্দ মানবিক।
মানবিক শব্দটি বড্ডো বেশি গোলমেলে শব্দ। মানুষের সাথে মানবিকতার একটি গোলমেলে রূপ আমাদের অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করে। চন্ডিদাস যখন বলেন "সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই"__তখন এটি মানুষের কোন দিক? আবার ভূপেন হাজারিকা গেয়ে ওঠেন" মানুষ মানুষের জন্য একটু সহানুভূতি কি দিতে পারেনা"এটাই বা মানুষের কোন দিক ?
সমাজে যখন সব অদ্ভুত কান্ডকারখানা চলে তখন তাকে আমরা অমানবিক আখ্যা দিই। দেখুন তো এই সব ঘৃণ্যকাজ গুলো তো মানুষই করে। আবার এও দেখি বেশি মানুষের প্রাণের বিনিময়ে অল্প মানুষের প্রাণ যাওয়া কোন ঘৃণার কাজই নয়। আবার ধর্মের দোহাই দিয়ে নরবলির ব্যবস্থ্য করি। এটা যে কেমন মানবিকতা বোধ তা আমাদের মাথায় আসে না ।
আরও একটি শব্দ ধর্ম।
ধর্ম এটা আবার আরও গোলমেলে শব্দ। ধর্মের বিভিন্ন রূপ আমাদের চোখে বিভিন্ন ভাবে ধরা দেয়। ধর্মকে যখন আমরা সাধারণ ভাবে উচ্চারণ করি তখন আলাদা মানে আর যখন ধর্মকে রাজনীতির সাথে মিলিয়ে দিই তখন আলাদা মানে। ধর্ম কে যখন আমারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপে দেখি তখন আমরা আস্বস্ত হই।
বিশ্বাস হলো ধর্মের মূল মন্ত্র।আর এই বিশ্বাস মূলত পরকালের । পরকালের বিশ্বাস হলো ইহজাগতিক পাপপূণ্যের বিচার একজন করবেন তিনি সর্বময় কর্তা।আর তিনিই হলেন ঈশ্বর। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে তিনিই একক সর্বশক্তিমান,সর্বজ্ঞ, সর্বত্র বিরাজমান,বিশ্ব নিয়ন্তা,দন্ডমুন্ডের হর্তাকর্তা বিধাতা।
প্রাচীন যুগে দেবদেবীগণ নাকি ছিলেন হর্তাকর্তা বিধাতা। দেবদেবীদের ভিতরে ও ছিল দ্বন্দ্ববিদ্বেষ। এখন ও আছে।এই দেবদেবীদের কট্টর উপাসকদের চলতো রেষারেষি । এরফলে সংগঠিত হয়েছে বহু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের ধর্মোন্মাদেরা নেমেছে রাস্তায়। অবলীলায় রক্ত গঙ্গা বইয়ে দিয়েছে। সর্বহারা হয়েছে মা, ছেলে, স্ত্রী।
লৌকিক জীবনে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের একটা প্রভাব আমরা লক্ষ্য করি যেমন ইসলাম , বৌদ্ধ, জৈন হিন্দু খ্রীষ্টান ইহুদী ইত্যাদি। সব ধর্মের মূল কথা হলো শান্তি। তবে সব ধর্মের কিছু কট্টর পন্থী অবুঝ গোঁয়ার লোককে আমরা দেখি যারা কিছু না বুঝে বাহ্যিক তত্ত্ব খাড়া করে বিবাদ বিসসংবাদে লিপ্ত হয় ।আর তখনই ধর্ম শব্দটি কলঙ্কিত হতে থাকে। খুন যখম রাহাজানি প্রভৃতি এমনতর ঘৃণ্য কান্ডকারখানা তো মানুষই সংগঠিত করছে ।হাইরে মানুষ। মানুষ বোঝে না__""_হাইরে মানুষ
রঙিন ফানুস
দম ফুরালে ঠুস""।
আরও একটি শব্দ রাজনীতি ।
রাজনীতি ।। রাজনীতি একটি ধ্বীক্কার জনিত শব্দ। রাজনীতি মানে আমরা বুঝি কূটিল , অসদাচরণ, শঠতা , ক্ষমতা লোভীদের আখড়া, দলাদলি , রেষারেষি, ছলাকলার বিচিত্র রূপ। politicএটি গ্রীক ভাষা ।এখান থেকেই রাজনীতি কথাটা চালু হয়েছে। রাজনীতি কে যখন আমরা মানুষের অতি প্রয়োজনীয় হিসেবে দেখি তখন আমরা আ্যারিষ্টটলের সাথে একমত হই।"আনথ্রপন পলিটিকন জুঅন"।
পলিস শব্দের পরিভাষা হলো পল্লী আর মানুষ পল্লীবাসী জীব।ব্যাপক অর্থে গ্রাম শহর গঞ্জ প্রভৃতি যৌথ বসবাসের স্থান। তাই সমাজে বসবাস করতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন সবাইকে মেনে চলতে হয়। কেননা নিয়ম শৃঙ্খলা বিহীন সমাজ মানুষের ক্ষতি ছাড়া লাভ করতে পারে না। বহুজনের সাথে নিজের স্বত্তি বিস্তারিত করাটাও একপ্রকার শিল্প ""the art of leaving in a police""। জ্ঞান ও কর্মনিপুনতা মিলে মিশে রাজনীতির ব্যাপকতা পরিলক্ষিত হয়। Politicsহলো মানব জীবনের ধর্ম। এটা কে বাদ দিলে মানুষের মনুষ্যত্ব থাকে না।
রাজনীতি যে রাজার নীতি এটার লিখিত রূপ দিয়েছিলেন কৌটিল্য। সম্ভবত খ্রীষ্ট পূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে। তিনি ছিলেন চন্দ্র গুপ্ত মৌর্য র প্রধানমন্ত্রী । অধুনা পৃথিবীর ইটালীর প্রখ্যাত দার্শনিক ম্যাকিয়াভেলি।তাঁর জন্ম ইটালীর ফ্লোরেন্স শহরে ১৫১৩ খ্রীষ্টাব্দে । ম্যাকিয়াভেলি রাজনীতির একটা লিখিত রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে ছিলেন ষোড়শ শতাব্দীতে। এদের কিন্তু রাজনীতি নিয়ে খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না। বরং এদের কাছে আমরা অনেক ভালো ভালো কথা শুনতে পাই।এই দুই মহান ব্যক্তিত্ব ধর্মের অনুশাসনের বাইরে স্বচ্ছ দৃষ্টিতে জনহীতকর উদ্দেশ্য সংগঠিত হতে পারে, এই নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। এতে দেখা গেল এগুলো মানবিক সততা ও ন্যায় বিচারের সাথে অসংগতিপূর্ণ।এই কৌটিল্য কে তদানীন্তন সমাজ নিন্দা ঝড়ে পর্যুদস্ত করে দিয়েছিল।বানভট্ট ও কৌটিল্যকে নৃশংস ও নির্লজ্জ বলতে দ্বিধা করেন নি।অন্যদিকে ম্যাকিয়াভেলীকেও কম সমালোচনার পাল্লায় পড়তে হয়নি। তবে রাজনীতির কদর্য রূপ যা তারা তুলে ধরেছিলেন আজ তা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে আধুনিক পৃথিবীতে। তাঁরা বলেছিলেন রাজহত্যা একদিন মিথ্যা রাজধর্মের বাহন হবে।আর এটা তখন স্বীকৃতি ও পেয়েছিল।যা তারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন।
জটিল আরও একটি শব্দ ধর্ম ।
ধর্ম শব্দের সাথে ধৃ ধাতুর একটা গাঢ় সম্পর্ক আছে। ধৃ মানে ধারণ করা। তাই ধর্ম হলো সেই সকল কর্মসূচি যা মনুষ্য সমাজ ধারণ করে বেঁচে থাকে। এবং সমাজ কে শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে রাখতে সাহায্য করে। মানুষের প্রারম্ভিক কাল থেকে ধর্ম বিশ্বাস সমাজ কে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সাহায্য করেছে। আর ধর্ম বিশ্বাস হলো সামাজিক ঐক্য বজায় রাখার নিয়ম। এটা অতীব জটিল প্রক্রিয়া। সমাজ ভয়, লোক ভয়,রাজ ভয় যেমন মানুষ কে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে বাধ্যতামূলক তেমনি পরলৌকিক ভয় ও মানুষ কে সমাজ বদ্ধ রাখতে সাহায্য করে। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের একটা নিকৃষ্ট দিক আছে।যা মানুষকে সাম্প্রদায়িক করে তোলে। যখন এক মানবগোষ্ঠী অন্য মানবগোষ্ঠী দ্বারা স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় ভোগে তখনই বিরোধের সূত্রপাত হয়। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম তখন নিজস্বতা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠে। নিজস্ব রূপ চিহ্নিত করতে তৎপর হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক নেতাদের উস্কানি মূলক বিবৃতিতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।তারা স্বধর্ম ও প্রদর্শণ এই কথা গুলো তাদের মগজে ঢুকিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠে।তারা তখন মজা লুটতে মজার ঘুটি খেলতে থাকে। নেতার উস্কানিতে সাধারণ মানুষ একে অপরের বিরুদ্ধে চড়াও হয় । রক্তাক্ত করে নিজেদের উঠোন।
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম তখন মানুষের মানবিক গুণাবলীকে আস্তে আস্তে অধর্মের চোরাবালিতে নিমজ্জিত করে। ধর্ম করতে গিয়ে অধর্মের বলি হয় সাধারণ মানুষ। নরকের যাত্রা পথ পরিস্কার হয়।প্রত্যেক প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম সারা পৃথিবীতে বহন করে নিয়ে চলছে বিভেদের বীজ। আমরা দেখেছি এবং আজকের দিনে ও দেখছি একই ধর্মের মানুষ সামান্যতম মতভেদের জন্য নিজেদের ভিতর খুনোখুনি মারামারিতে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম চিরকাল অসহিষ্ণু। আল্লাহ বা ঈশ্বরের প্রেরিত দূতগণ চির কাল শান্তির বাণী বহন করে নিয়ে এসেছেন। সবসময় তারা চেষ্টা করেছেন সৌভাতৃত্ব বজায় রাখতে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা কিছুতেই সব মানুষের মিলে মিশে থাকা পছন্দ করে না। বিভেদের রাজনীতি না করলে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ হবে না। তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে ও দাঙ্গা বাঁধায়।এ দাঙ্গা কেবল হিন্দু মুসলমান এর দাঙ্গা নয়, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ,ইহুদী ,খৃষ্টান,সিয়াসুন্নী, হীন যান মহাযান, শাক্ত বৈষ্ণব সবাই এই মহান খেলায় জড়িত। তাই ধর্ম শব্দ টি বড্ডো বেশি গোলমেলে ও জটিল।এর স্বরূপ বোঝা ভীষণ দায়।
পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই রাজশক্তি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের আশ্রযে পালিত হয়। তখন ধর্মকে রক্ষার দায়িত্ব এসে পড়ে রাষ্ট্রের উপর। ধর্ম রাজাকে ব্যবহার করে। তথাকথিত ধর্মোন্মাদেরা রাজাদের আনুকূল্য পাওয়ার আশায় সাধারণ মানুষ কে বোঝাতে শুরু করে রাজারা হলো গিয়ে ঈশ্বরের প্রতিভূ। অতএব রাজার আদেশ পালন করা প্রজাদের একান্ত কর্তব্য। পৃথিবী প্রধান প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম গুলো
প্রত্যক্ষভাবে কোন না কোন রাষ্ট্রের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আর তথাকথিত ধর্মোন্মাদেরা ধর্ম রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করে ওধর্ম রাষ্ট্র কামনা করে।
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সাথে রাজশক্তির বিচ্ছেদের প্রয়াস শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসিতে। ফরাসি বিপ্লবের চিন্তা নায়কেরা মনে করেছিলেন রাজতন্ত্রের অনাচার এবং নৃশংসতা মানুষের জীবন কে অতীষ্ট করে তুলেছে। তাই তারা মনে করেছিলেন নৃশংসতা মুক্তির একমাত্র পথ হলো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মবিশ্বাসের উপর আঘাত হেনে মঠ মন্দির গির্জা থেকে বিশাল সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে নাও । তথাকথিত মাতাব্বর ধর্মগুরুদের প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে সাধারণ মানুষ কে।১৮৪৮সালে কমিউনিস্ট ম্যানিফেষ্টো স্পষ্ট করে সে কথা বলে দিয়েছিল।
বিপ্লবী দলের প্রথম ঘোষণা ছিল ক) রাষ্ট্র কে ধর্মীয় অনুশাসন থেকে মুক্ত করতে হবে। খ) রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কোন অর্থ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের কোন প্রতিষ্ঠান কে দেওয়া হবে না। গ) ধর্ম বিশ্বাস মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই সরকার কেন এর দায় ভার নিবে? বুর্জোয়া বিপ্লবী দলের মূল কথা ছিল রাষ্ট্রের চোখে সবাই সমান। একটা রাষ্ট্রের ভিতরে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুশাসন আচার আচরণের লোক বাস করে । তাই বিপ্লবী দলের লোকজন ভেবে ছিল সেকুলারিজমের বা ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা । প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম সমাজ কে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করেছিল ঠিকই কিন্তু ধর্ম গুরুর সহযোগিতায় ধর্ম জনসমাজ কে বিভক্ত করতে ছাড়েনি । জনসমাজের ঐক্যের ভিত্তিতে ফাটল ধরাতে ও ছাড়েনি। আমাদের ভারতবর্ষই তার জ্বাজল্য প্রমাণ।
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম ছিল সমাজবন্ধনের অন্যতম প্রধান উপায়। তাই ধর্ম শুধুমাত্র ইহলোকের সাথে পরলোকের সম্পর্কে বিবেচনা করেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেনি।মানুষে সম্পর্কের ব্যাপারেও অনেক বিধি নিষেধ রচনা করেছে।
ধর্মীয় রাষ্ট্রের যারা স্বপন যারা দেখেন তারা হিন্দুই হোন আর মুসলিমই হোন এখনকার বিশ্বায়নের যুগে ধর্মীয় সকল কথা মেনে চলা সম্ভব নয় ।অনেকেই হইতো আমাকে আপনারা মৌলবাদীর তকমা দিয়ে দিবেন।তবুও বলতে বাধ্যহচ্ছি যে,হিন্দু রাষ্ট , যারা গঠন করতে স্বপ্ন দেখেন তাদের উদ্দেশ্য বলি হিন্দু ধর্মে এতো জগাখিচুড়ী ব্যাপার আছে যা হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে অতীব মারাত্মক। যদি বেদের কথামতো রাষ্ট্রের সংবিধান রচনা করা হয় তবে বৈশ্য ও শুদ্রগণের অত্যাচারিত হওয়া ছাড়া আর কোন গত্যান্তর থাকবে না। চিরকাল তাদের শোষন ও অত্যাচারে স্বীকার হতে হবে। তথাকথিত হিন্দু রাষ্ট্র নেতা গণ তাদের ধর্মের সুড়সুড়ি দেন ভোটের ডংকা বাজলে। অনেক ভ্রান্ত ভাষণে তাদের উজ্জীবিত করেন ও উত্তপ্ত করেন অন্য ধর্মের প্রতি।অন্য ধর্মের নামে অযথা মিথ্যা কলঙ্কের তিলক এঁকে দেন সুচতুর ভাবে। হিন্দু রাষ্ট্র গঠিত হলে আবার সতিদাহ, বহু বিবাহ , নরবলির মতো কঠিন অজনহীতকর প্রথার প্রচলন করতে হবে। শুদ্রদের বেদ পাঠ করলে মৃত্যু দন্ড হবে। অতএব তথাকথিত হিন্দু রাষ্ট্র গঠিত হলে ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বাদ দিয়ে অন্য সকল সম্প্রদায়কে আবার ফিরে যেতে প্রাগৈতিহাসিক যুগে। যে সকল আত্যাচারের পাঁচিল টপকে আজ এখানে ওঁরা এসেছে তাদের অস্তিত্ব আবার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। দীর্ঘ সময় সংগ্রামের অস্তিত্ব আবার বিলীন হবে। ফিরে যেতে হবে বৈদিক যুগে।
অপরদিকে ইসলাম রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ওএকই কথা খাটে। ইসলামী রাষ্ট্র গঠিত হলে ব্যাঙ্ক ব্যাবস্থা ভেঙে পড়বে। আন্তর্জাতিক কর্পোরেশন ব্যাবস্থার অস্তিত্ব বিলীন হবে। ভেঙে পড়বে দেশের অর্থনীতি।ব্যাহত হবে দেশের উন্নয়ন। তাই সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতার সংবিধান মেনে দেশ শাসন পরিচালনা করা। এতে শ্যাম ও কূল দুটো ই বজায় থাকবে।
এখন প্রশ্ন জাগে আবার কি তারা ফিরে যাবে সেই ক্রীতদাসের যুগে। সুতরাং ভারতের মতো বিশাল জনবহুল দেশে বেকার সমস্যা,ব্যাঙ্কের সমস্যা , আন্তর্জাতিক কর্পোরেশন এর মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ, পরামর্শ ও সমাধান কিভাবে দিবে বেদ , মনুসংহিতা ,ও পরাশর সংহিতা । তবে যে কোনো দেশের ধর্মোন্মাদেরা কিছু দিনের জন্য ধর্ম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে মাত্র।তারা দেশের অনেক ক্ষতি, জাতির ক্ষতি করে টিকে থাকতে চেষ্টা করে মাত্র। দেশের তাতে লোকসান ছাড়া লাভ কিছু হয়না । যেমন আমাদের সরকার তিনশো পঁচাশি কোটি টাকা খরচ করে রামের সুবিশাল মূর্তি তৈরি করে দিচ্ছেন, পূজা করার জন্য।তাতে দেশের জনগণের কি উন্নয়ন হলো ? লক্ষ্ লক্ষ্ টাকা এতে জড়িত নেতা মন্ত্রী ট্রাস্ট এর হাতে চলে গেল। সাধারণ মানুষ ধর্মের আফিম সেবন করে বসে বসে ধর্ম বাবা দের কীর্তি অনুধাবন করতে লাগলো।কারো খেয়াল যাতে না থাকে তার জন্য উস্কানি মূলক বিভেদের রাজনীতি করে দেশকে দেউলিয়া পথে নিয়ে যাচ্ছে। বহু মানুষ কে জীবনের হুমকি দিয়ে তেজ দেখাতে পারে মাত্র ।এই নিয়ে দেশে স্থায়ী শাসন চলতে পারে না।
ধর্ম নিরপেক্ষতার পথই দেশের উন্নয়ন এর পথ , বিকাশের পথ। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম চিরকাল ই মানবতা বিরোধী ও পরলৌকিক কল্পনা মিশ্রিত অমানবিকতার পথ।
আবার এ কথা ও ঠিক যে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম মানবতা বিরোধী হলেও ধর্ম হীন রাজনীতি আরও অমানবিক।যে রাজনীতি তে ন্যায় বিচার নেই, যে রাজনীতি বহুজনের হিত সাধন করে না,যে রাজনীতি দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যায় না , সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায় না, তাৎক্ষণিক কার্য সিদ্ধির তাড়নায় চালিত হয় সে রাজনীতি ধর্ম হীন ও অমানবিক।
ঈশ্বর যে বিশ্বাস করেনা, পরলোকের অস্তিত্ব বিশ্বাস করেনা তারা শুধু ইন্দ্রিয় বৃত্তির চরিতার্থ করে মাত্র। ধর্ম সম্পর্কে কাল মার্ক্সের বিখ্যাত উক্তি হলো" ধর্ম জনগণের আফিম "। মার্ক্স লিখেছেন ধর্মীয় যন্ত্রণা হচ্ছে বাস্তব যন্ত্রণার অভিব্যক্তি এবং বাস্তব দুর্দশার প্রতিবাদ। ধর্ম হলো নিপীড়িত জনগণের দীর্ঘশ্বাস ও হৃদয় হীন জগতের হৃদয়। শাসকগোষ্ঠী জনসাধারণ কে এই আফিম খেলায়। জনসাধারণ ও এই আফিম স্বেচ্ছায় গলঃধকরণ করে। বিচক্ষণ শাসকগোষ্ঠী জনসাধারণের বিক্ষোভ কে শান্ত করে ঘুম পাড়ানোর জন্য এই মোক্ষম অস্ত্র ব্যবহার করে। অজান্তে এই সকল জনগণ ধর্মীয় আফিম খুঁজে বেড়ায়। দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে স্বপ্নের ঘোরে এই আফিম গিলবার জন্য ছুটে বেড়ায়। যেমন মানুষ সাধারণত দুঃখ দুর্দশা ভুল বার জন্য স্বেচ্ছায় মদ্ আফিম গাঁজা খায়। মন্দির মসজিদ গির্জা , ঠাকুরের থান, আখড়া ,পীরস্থান মাজারে গিয়ে মাথা ঠোঁকে। ফকির সাধু বাবার আখড়ায় শাখা, সিঁদুর,তাবিজ , মাদুলি খুঁজে বেড়ায়। বাস্তব জীবনের যন্ত্রণা,অত্যাচার ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ধর্ম বিশ্বাস কে মানুষ আঁকড়ে ধরে। বাস্তব জীবনের নৃশংসতা অত্যাচার অনাচারের প্রতিবাদ যখন মুখ থুবড়ে পড়ে তখন মানুষ ধর্মের কথা শুনে মনকে শান্তনা দেয়। কাল্পনিক সুখের জগতে তখন সে ঘুরে বেড়ায়।
আর এই সুযোগে সুচতুর নেতারা ধর্মের সুড়সুড়ি দিতে আরম্ভ করে।
ধর্মের নামে মানুষ জীবন যন্ত্রণা কে ফুল দিয়ে সাজিয়ে সুখের বাসর রচনা করে। অথচ সেই ফুলের নীচে পড়ে থাকে ছেঁড়া নকশিকাঁথার উলঙ্গ উচ্ছাস। বেরিয়ে পড়ে শাসক ও শোষণের উলঙ্গ চেহারা। তাই আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে ধর্ম নামক শব্দটি অতীব জটিল একটা শব্দ যা মানুষ কে বিভ্রান্ত করে বারবার।
তাই ধর্ম, রাজনীতি ও জীবন এই শব্দগুলো বড্ড জটিল, যা মানুষকে চিরকাল বিভ্রান্ত করে চলেছে।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
*বক্তব্যের দায় একান্তভাবে লেখকের, আমরা প্রকাশকমাত্র। -- নবপ্রভাত।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন