স্যানিটাইজার
কাগজ থেকে মুখ তুলেই বিরক্তিতে ফেটে পড়ে সৌম্য। বিতস্তার একঘেয়েমি চিৎকার কানে আসছে।
কি ব্যাপার?
জোরগলায় চেঁচিয়ে উত্তর দিল- বোঝ না যেন!
- আমি পারব না।রোজ রোজ তোমার মায়ের
আবদার মেটানোর ক্ষমতা আমার নেই।
মোলায়েম স্বরে সৌম্য বলে - আহা হা রাগছ কেন?
বুড়ো মানুষ। বয়েস হয়েছে। তাছাড়া তোমায়
কত ভালবাসেন।
- ভালবাসেন না ছাই। শোনো ওসব ছেঁদো কথা
বলে লাভ নেই।দিন দিন খরচ বেড়ে চলেছে।
সামনের মাসে তিতানকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে।
প্রচুর টাকা লাগবে।তুমি বরং ওনাকে বৃদ্ধাশ্রমে..
থামো...! তোমাকে উনিই পছন্দ করে এনেছিলেন। একটুও কি কর্তব্যবোধ নেই
তোমার?
না নেই।তুমি তোমার মাকে নিয়ে থাকো।আমি
তিতানকে নিয়ে বাপের বাড়ি যাই।যত্তসব
ন্যাকা সেন্টিমেন্ট। ভাল্লাগে না ছাই।
- আজও চিৎকারটা কানে আসতেই সৌম্য
একটা হেস্তনেস্ত করবে ভেবে উঠতে গিয়েই..
পিঠে ভালবাসার পরশে চমকে ওঠে।..মা।মাগো.
খোকা.... আমাকে তুই বৃদ্ধাশ্রমেই রেখে আয়
বাবা।- না বাবা আমার কোনও কষ্ট হবে না।- তুই
বরং সপ্তাহ শেষে একবার আসিস।পারলে
দাদুভাইকে..
পরের রবিবার গোছগাছ করে মাকে দিয়ে এল
সৌম্য।
তিতান সারাদিন কিচ্ছু খায় নি।
ফেরার সময় চোখের জল গোপন করে,খুশির
অভিনয়ে মত্ত হয়ে উঠলেন মা। নিরুপায় সৌম্যের নজর এড়ায় নি সেটা। কিন্তু...
প্রথম প্রথম চারটে রবিবারই আসত সৌম্য।
বিভিন্ন গল্পগুজব করার পর মা জিজ্ঞাসা করতেন - বৌমা এখন খুশি তো খোকা? সে
অপরাধীর মত মুখ নিচু করে থাকত।
তৃতীয়বার তিতান এসেছিল বাবার সাথে।
ঠাম্মির গলা জড়িয়ে কি কান্না তার। ঠাম্মির
সঙ্গে থাকতে চায় সে।
অনেক বুঝিয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে আসে সৌম্য।
পরের রবিবার সৌম্য তিতান, কারও দেখা নেই।
তার পরের রবিবার সৌম্য আসে।মুখটা থমথমে
মায়ের মন সব বুঝে নেয়।
- এভাবেই দিন মাস বছর যায়।
সৌম্যও আগের মত আর আসে না।
ময়লা জমে জমে মন ভারী হয়ে উঠেছে।
মায়ের মৃত্যুর পর, একাকীত্ব আর বোঝা হওয়ার
ভাবনায় ন্যুব্জ সে।
আজ বৃদ্ধাশ্রমের জানালায় খোলা আকাশের
দিকে তাকিয়ে 'স্যানিটাইজার' এর অভাব বোধ
করে সে।যেটা বহুদিন আগে বিতস্তাকে দেওয়া
হয়নি তার।
____________________________________
তন্ময় পালধী। শংকরপুর, হুগলি।
চলভাষ ৯৭৩৪৭৮৯৮৭৭.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন