Featured Post

কবিতা ।। ঘরে ফেরা ।। বিপ্লব নসিপুরী

ঘরে ফেরা বিপ্লব নসিপুরী  বাতাসের গায়ে তাপের ছোঁয়া  রঙের তুলি শাখে বিষাদ মনে বিবাগী ঢেউ আছড়ে পড়ে ক্ষোভে।  নয়ন তীরে অশ্রুনদী  দুকূল ভাঙে স্রোতে ভিটে মাটি দোর কেড়েছে গোটা পরিবার কাঁধে। আকাশটা আজ ছাদ হয়েছে মাটির স্নেহ ঘর পরিচয়হীন মানুষের দল সবার একই স্বর। বছর শেষে নতুন বছর দিচ্ছে হাতছানি  ক্ষোভের বাষ্প বিষাদ কষ্ট  উবে যাবে কী জানি? অসম্মানের বিষফলা তীর বিঁধেছে ওদের বুকে এমন মলম কোথায় আছে স্বস্তি দেবে প্রাণে। হারিয়ে সবই খড়কুটো দেহ বইছে সময় নীরে নতুন বছর নতুন বাতাস আনুক ফিরে তীরে।  ************* বিপ্লব নসিপুরী  গ্রাম পোস্ট শীতলগ্রাম জেলা বীরভূম  পিন-৭৩১২৩৭ 

ছোটগল্প || চন্দন চক্রবর্তী ||


|| জীবন থেকে পালিয়ে ||



সারাদিন খেটে এসে রঘু ঘরের দাওয়ায় বসে পড়ল । শোভা তাড়াতাড়ি জলের লোটাটা এগিয়ে দিল । ঢক ঢক করে গলায় ঢেলে রঘুর একটু  আরাম হল । মালতী দেখতে পায় নি ।  নইলে এসেই পাপা পাপা করে গলা জড়িয়ে ধরতো । 

মেয়েটার বয়স পনেরো হয়ে গেল ! এখনও খুবই সরল সোজা । তবু বিয়ে দেওয়া দরকার । তার মুলুকে এত বয়স পর্যন্ত মেয়ে কেউ ঘরে রাখে না । কিন্তু ছোট খাটো সংসারে দিতে গেলেও বিশ পঁচিশ হাজারের ধাক্কা । তারপর অন্য খরচ । 

বস্তির অন্য মেয়েদের সাথে দূরে উঠোনে মালতী খেলছে । মুখটা যেন সীতা মাইয়া  !  মাথায় তেল নেই,গায়ে সাবান নেই । তারপরেও এমন রূপ । এই রূপই ওর কাল !

দালাল এসে তিনদিন ঘুরে গেছে । চল্লিশ হাজার দেবে । কিন্তু ! মেয়ে বিক্রি ! না এসব আর ভাববে না । দেশের মুলুকে যখন ছিল তখন খুবই অভাব ছিল । কিন্তু এই লোভ !  ছিঃছিঃ ।

যাদব ওর দেশের মুলুকের আদমি । খৈনি ডলতে ডলতে তারও এক কথা ! দালালের কাছে দিয়ে দেওয়াই ভালো । নইলে কবে লুট হয়ে যায় । তাতে জীবন সংশয়,থানা পুলিশ,অপবাদ,অর্থদণ্ড,হয়রানি !

বস্তির দেখভাল করে জগদীশ । তিনদিন এসেছে । মালতীকে নিয়ে দিঘা যাবে । আগাম দুহাজার দেবে । রেটটা নাকি বেশি দিচ্ছে ! রাজি না হলে মালতীকে জোর করে তুলে নিয়ে যাবে ! মালতীর জন্য ওদের কম ভাড়ায় থাকতে দিয়েছে । নইলে এই ঘরের ভাড়া ষাট টাকা হয় !  

রঘু শহর মুলুকে এসে দু বছর কারখানায় কাজ করেছে । কারখানা বন্ধ হয়ে গেল । আয় বন্ধ,মাথার ছাদ হারিয়ে কারখানার বস্তি ছেড়ে,শেষে রিকশা চালিয়ে পেট চালাচ্ছিল । 

তখন মালিকের গ্যারেজের এক কোনে সংসার পেতে কাটিয়েছে । বিনিময়ে তাকে মালিকের গাড়ি সাফাই করতে হত,গ্যারেজ ধুতে হত । আর মালিকের রিক্সা দৈনিক ভাড়ায় চালাতো ।

টোটো আসায় রিকশার বাজার গেল । অগত্যা সে এখন মুটের কাজ করে  । বস্তিতে উঠে এসেছে কয়েক মাস হল ।

পরের দিন রঘু খুব সকালে অনিন্দিতা দিদিমনির বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা দিল । দিদিমনিকে দশ বছর রিকশায় স্কুলে পৌঁছে দিয়েছে । খুব রাগি,রাশভারী । রঘু দিদিমণিকে ভয় পায় । একটু নড়চড় হলেই ধমকায় । খুব সময় মেপে চলেন ।  কিন্তু বিপদে আপদে দিদিমনির সাহায্য সে পেয়েছে । ওই একজনকেই সে বিশ্বাস করে । 

দরজা খুলে দিদিমণি বেরিয়ে এলেন । এই ক বছরে অনেক বুড়ো হয়ে গেছেন ! অবসর নিয়েছেন ।  রঘুকে দেখে চিনলেন । এবার রঘুর আসার কারণ জেনে ওকে অভয় দিলেন । রঘু কেঁদে ফেলল । 

দিদিমণি ওকে রুটি জলখাবার খাইয়ে শান্ত করলেন ।  তিন অবিবাহিতা,ঠিক এমনটাই চাইছিলেন । মালতীর সব দায়িত্ব তিনি নেবেন । ওর মাসের মায়না দুহাজার রঘুকে পাঠিয়ে দেবেন । মালতী এখন পড়বে । সময় হলে মালতীর বিয়ের ব্যবস্থাও তিনি করবেন । 

রঘু ছোটবেলা শুনেছে তাদের গ্রামের পাশের অরণ্যে আগে শের ছিল । তাদের চেহারাটা আলাদা ।  তারা রাতের বেলা হানা দিত । এখন আর নেই ।  

কিন্তু শহরের এই জন অরণ্যে শের দিনের বেলা সর্বত্র বিচরণ করে । তাদের চেনা বড় দায় !

শেষ রাত । শহর নিদ্রায় মগ্ন । মালতীকে যথা স্থানে রেখে দুটি প্রাণী গুটিগুটি পায়ে ফিরে চলল নিজেদের জন্মভূমির টানে নিজেদের মুলুকে ।  

জন্মভূমি অন্তত তাদের সর্বস্ব কেড়ে নেবে না !

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল