google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re তপন মুখোপাধ্যায়ের কাব্যগ্রন্থ – ১)কবিতার কাছাকাছি ২)হৃদয় পুরের পদ্যকথা ।। আলোচনাঃ অসীম মালিক - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৬ জুন, ২০১৮

তপন মুখোপাধ্যায়ের কাব্যগ্রন্থ – ১)কবিতার কাছাকাছি ২)হৃদয় পুরের পদ্যকথা ।। আলোচনাঃ অসীম মালিক





কবি তপন মুখোপাধ্যায়ের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ –
১)কবিতার কাছাকাছি
২)হৃদয় পুরের পদ্যকথা
# প্রকাশনায় সোনালী রোদ
# গ্রন্থ দুটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন হরিপ্রসাদ মেদ্দা।











পাশাপাশি হাঁটার আলাদা উষ্ণতা


অসীম মালিক

------------------------------------------------------------------------------

কবিতা কি আদেও হয়ে উঠেছে? এ প্রশ্ন শাশ্বত, প্রত্যেক কবির। দেখার চোখ বা
কবিদৃষ্টি হয়ত বা কবিতার গুনগত মানের তারতম্য ঘটায়। তবুও কোনও কবিই তৃপ্ত
নন। এর একটাই কারণ, সৌন্দর্যের কোনও প্রান্ত সীমা নেই। সম্প্রতি সোনালী
রোদ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি তপন মুখোপাধ্যায়ের 'কবিতার
কাছাকাছি' এবং 'হৃদয় পুরের পদ্যকথা' নামক দুটি কাব্যগ্রন্থ।

প্রথমেই আসি কবিতার কাছাকাছি 'বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে । কবি ভূমিকায়
লিখেছেন 'এই বইয়ের মলাটবদ্ধ অক্ষরের সারি কবিতার পর্যায়ভুক্ত হয়েছে কিনা
জানি না , তবে 'কবিতা' আর 'না কবিতার' কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছে বলেই আমার
বিশ্বাস । 'কবি কতটা কবিতার কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছেন, তা সময়ই পাঠককে
দিয়ে বলিয়ে নেবে। যে কোনওকবিতাই তার কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি এমনভাবে
সাজান যে সমগ্রটির মধ্যে একটা সুরধরা পড়ে। ছড়িয়ে থাকে একটা বোধ। কবি তাঁর
কাব্যগ্রন্থে সমাজচেতনা , ইতিহাস চেতনা, জীবনবোধ , প্রেম ও অপ্রেমকে
উপজীব্য করে সেভাবেই কবিতাগুলি সাজিয়েছেন । তিনি আটপৌরে ভাবেই নিজের মত
করে কবিতাগুলি উপস্থাপন করেছেন। তিনি জীবনকে দেখেছেন অন্তর্দৃষ্টিতে আর
প্রকাশ করেছেন মরমী ভাষায় । কবি ভিন্নমাত্রার পর্যবেক্ষন সম্বন্ধে দ্বিমত
থাকেন না। যখন তিনি লেখেন, 'দাঁতে দাঁত চাপা বিশ্বাস পাখি হয়ে ফুটে ওঠে
।' (বিশ্বাসের ভোর ), কিংবা 'ইতিহাস চেতনার যখন ছিলনা প্রয়োজন / তখন
কাহিনীর ভিতর অন্য এক কাহিনী । '(অপ্রয়োজনীয় ), কবি যখন অক্লেশে বলেন,
'মানুষের রক্তে রক্তে এখন রোজই দোল।' ( দোল ), অথবা প্রমীলার সিঁথিতে
শুধুই দগদগে ঘা । '(স্বীকারোক্তি ), কিংবা 'ভরদুপুরে সন্ধ্যা নামে চোখের
তারায় ।' ( সমাধিস্থ আশা ), এক তীব্র সমাজবোধ পাঠকের হৃদয়ে দোলা দেয়।
আবার 'রুটির জন্য' কবিতায় কবি যখন লেখেন, 'আমি কবরে খুঁজেছি সূর্যমুখী ।'
তখন এক তীব্র জীবনবোধ জাগ্রত হয় বইকি । প্রেম সম্পর্কে কবির অমোঘ
উচ্চারন, 'পাশাপাশি হাঁটার আলাদা উষ্ণতা ।' কাব্যগ্রন্থটির পাতায় পাতায়
ছড়িয়ে আছে এরকম সব অসামান্য লাইন। যা পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করবে বলেই মনে
হয় ।
এবার আসি 'হৃদয় পুরের পদ্যকথা'য়। সমাজে অহরহ ঘটে যাওয়া ঘটনা যা হতে পারে
আশা ও নিরাশার, মান অভিমানের বা রাগ-অনুরাগের, কবির হৃদয়ে নিবিড়ভাবে দাগ
কেটেছে । তারই প্রতিফলন দেখি এই পদ্যকথায়। সমাজ অবক্ষয়ের চিত্র পরিস্ফুট
হয়েছে। নিরাশার কেন্দ্রবিন্দু থেকে ছড়িয়ে পড়েছে আশার আলো। ক্ষোভ কবি
হৃদয়ে প্রশমিত হয়ে পাঠককে দিশা দেখিয়েছে বলাই যায় । কবির স্বগতোক্তি,
'ভুল সব ভেঙে যায় / যখন দেখি / ছুরি হাতে মুখোমুখি /মানুষ মেকি।' (মেকি
মানুষ ), অথবা মেকি গনতন্ত্রের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কবির স্পষ্ট
উচ্চারন, 'ভোট ফুরুলে নটে গাছের / কী হবে সব জানে / লেখা আছে
গ্যাঁড়াতন্ত্রের / মুখ্য সংবিধানে ।' ( ভোটের প্রতিশ্রুতি ),আবার কবির
পদ্য কথায় ভোটের থিম এসেছে এইভাবে, 'নেতামন্ত্রী কাটছে ফিতে / বলবে দারুন
ভালো / গ্রামগঞ্জের অবস্থা কি / বদলাবে একচুলও?' (পুজোর থিম ),
গ্রামগঞ্জের অবস্থা বদলাবে কিনা সময় বলবে। কিন্তু পাঠক হিসাবে এটুকু বলতে
পারি, কবি তপন মুখোপাধ্যায় তাঁর আত্মবিশ্বাসকে কবিতার কাছাকাছি পৌঁছে
দিয়েছেন। সোনালী রোদ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ দুটির প্রচ্ছদ
এঁকেছেন হরিপ্রসাদ মেদ্দা। প্রচ্ছদ, ছাপা, এককথায় অনবদ্য। আশা করা যেতে
পারে সামগ্রিকভাবে বই দুটি পাঠকের মনে ধরবে ।

কবি তপন মুখোপাধ্যায়ের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ –
১)কবিতার কাছাকাছি
২)হৃদয় পুরের পদ্যকথা
প্রকাশনায় সোনালী রোদ
গ্রন্থ দুটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন হরিপ্রসাদ মেদ্দা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন