Featured Post

বাঙালি জাতিসত্তার বার্তাবাহক নববর্ষ ।। পাভেল আমান

আমরা জানি, একটি জাতির পরিচয় নির্ভর করে অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের ওপর। একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ভাষা, পেশা, পোষাক- পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, দেহের গড়ন, গড়-গড়তা গায়ের রং, সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি- নৈতিকতা এবং ঐ নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও জলবায়ু-সবকিছু মিলিয়ে ঐক্যসূত্র প্রোথিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে যে ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হয়- তা ই জাতির উন্মেষ ঘটাতে মূল ভূমিকা পালন করে। কখনো কখনো ভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ বংশ-পরম্পরায় যদি স্থানান্তরিত এলাকায় বসবাস করে নতুন পরিস্থিতির সাথে নিজেকে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়- দেখা যায় তার পরবর্তী প্রজন্ম নতুন জাতিসত্তার সাথে লীন হয়ে যায়।বাঙালি জাতিসত্তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের যে সব সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ হলো পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। এখন দেখা যাক এ বাংলা নববর্ষের সূচনা হলো কীভাবে। ভারত-বর্ষের মোঘল সম্রাট আকবর কৃষক এবং প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে একটি নতুন সন উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেন। আকবরের নির্দেশে তার প্রধান জ্যোতির্বিদ আমীর ফতেহ্ উল্লাহ সিরাজী ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ একটি সৌরব...

...এবং অস্পৃশ্য হাত।। বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় ।। আলোচকঃ তনুশ্রী পাল

...এবং অস্পৃশ্য হাত: অপূর্ব পাঠ

তনুশ্রী পাল


সার্থক অণুগল্প রচনা কঠিন সাধনালব্ধ বিষয়ই বটে। আকারে ক্ষুদ্র বলেই তার
দায় বেশি।অর্থাৎ ছড়িয়ে ছিটিয়ে শাখা-প্রশাখায় কাহিনী বিন্যাস করে
রসগ্রাহী পাঠককে তুষ্ট করার সুযোগ অণুগল্পের আদৌ নেই। পরিসর তার স্বল্প
,বহু চরিত্র বা বিশাল প্রেক্ষাপটে গল্প তো লেখা যাবেনা। প্রতিটি শব্দ
,চরিত্র সুনির্দিষ্ট ও সুপ্রযুক্ত হওয়া চাই । অণুগল্পের আকৃতি ছোটোই
হবে কিন্তু এই স্বল্প আয়োজনটুকু সার্থক করে তুলতে হবে গল্পকারকে। সুতরাং
প্রতিপদেই তার পরীক্ষা ।খুব দক্ষ শিল্পী ছাড়া কাজটি নেহাতই কঠিন ।
বড়গল্পকে চেপেচুপে ছোট আকার দিলেই সে অণুগল্প হবে না।বিদগ্ধ পাঠকের চোখে
তা ধরা পড়ে যাবে। বেশি ভার অণুগল্প নিতে পারেনা ,অতিকথনে উদ্দেশ্য তার
ব্যর্থ হয়ে পড়ে। অণুগলপে গল্পটি থাকতেই হবে ,খুব কম শব্দে বিশেষ কথাটি
বলতেই হবে। উপমা দেওয়া যেতে পারে এ ভাবে, ক্ষুদ্র জলাধারে বৃহৎ আকাশের
রূপটুকু প্রতিবিম্বিত হওয়াই চাই।
আজ্কাল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অজস্র অণুগল্প ছাপা হচ্ছে। এখন ভাবার বিষয়
সেগুলি সবই কি সার্থক অণুগল্প হয়ে উঠছে?পাঠক বিচার করবেন। হ্যাঁ মোট
সাইত্রিশটি গল্পে সাজানো একটি অণুগল্প গ্রন্থের পাঠ অনুভবটুকু প্রকাশ
করতে গিয়ে এই কথকটি বলতেই হ'ল। লেখক বিপ্লব গঙ্গগোপাধ্যায় নামটি বাংলা
সাহিত্য জগতে একটি বিশিষ্ট ও পরিচিত নাম। তাঁর "" ...এবং অস্পৃশ্য
হাত''এই অণুগল্প সংকলনটির পাঠ অনুভব জানাতে গিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলতে
হ'ল।অণুগল্প লেখা যে বিশেষ ধারার সাহিত্যকর্ম সেটি যথাযথ উপলব্ধি করে
গ্রন্থেটির মুখবন্ধে লেখক স্বয়ং একটি কঠিন সত্য উচ্চারন করেছেন
-""...শব্দ এবং ভাবনার যথাযথ ব্যবহার ছাড়া যা লেখা সম্ভব নয়।এখানে চরিত্র
আঁকার কোন সুযোগ নেই। আছে শুধু গল্পের নির্যাস ,যার ফ্লেভার দীর্ঘস্থায়ী
।'' পাঠক হিসেবে এ গ্রন্থের প্রায় প্রতিটি গল্পই সার্থক অণুগল্প হয়ে
উঠেছে এটুকু বলতে কোনও দ্বিধা নেই আমার।
স্বল্প পরিসরে এক অসাধারণ প্রতিবাদের গল্প " দধীচি '
-রাষ্ট্রযন্ত্রের অবিচারে পুলিশের গুলিতে নিহত সুখদেব মান্ডির ভীত
সন্ত্রস্ত গ্রাম জেগে উঠছে। মাত্র দুটি অমোঘ বাক্যে লেখক সে প্রতিবাদ
জীবন্ত করেছেন ,"...সাত গাঁয়ের জনতা দেখে সুখদেব মান্ডির হাড় থেকে বেরিয়ে
আসছে একটা তীরের ফলা।ইস্পাতের চেয়েও কঠিন তাদের মুখ।' হতদরিদ্র মানুষের
ভয়ংকর খিদের গল্প "উড়ন্ত স্বপ্নের লিরিক ' -"খিদে মোচড় দিচ্ছে
পেটে।নিরন্ন স্লেটের মধ্যে বিক্ষুব্ধ অক্ষর ।' খিদের এমন নিরীহ কাব্যিক
কিন্তু কঠিন উপমা কমই পড়েছি! "বেঁচে থাকা' গল্পে মেরুদন্ডের ঋজুতা হারিয়ে
,মালা আর মানপত্রের ভিড়ে হারিয়ে যেতে না চাওয়া আপোষ হীন এক কবির কথা
;মুগ্ধ করে রাখে। বাবা ,সমীরণ বাবুর ছাত্র ,মোবাইল রাজু ,কণ্ঠস্বর
,পথবাতি অপূর্ব সব সংবেদনশীল পরিপূর্ণ নিটোল গল্প।অবশ্যই সার্থক
অণুগল্পের বৈশিষ্ট শরীরে ধারণ করে।এই অণুগল্প সংকলনের প্রতিটি গল্পই
অসাধারণ মনে হয়েছে আমার । আজকের অজস্র অণুগল্পের (!) ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার
মতো আদৌ নয়। নিঃসন্দেহে বলতে পারি এই ক্ষুদ্রকায় গ্রন্থটি পাঠককে অবশ্যই
তৃপ্ত করবে।সার্থক সুরচিত গল্পগুলোই বলে দেবে অণুগল্প প্রকৃতই কেমন হ'তে
হবে।শুরুতে "অণুগল্প আজও আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ '-এই বক্যে
মুখবন্ধ লিখেছেন বিপ্লব গঙ্গগোপাধ্যায় ।বলতে চাই হ্যাঁ এ চ্যালেঞ্জ আপনি
জিতেছেন।ছাপা ,মেঘ অদিতির আঁকা প্রচ্ছদ সব মিলিয়ে চমৎকার বইটি পাঠকপ্রিয়
হবে বলেই আমার বিশ্বাস ।


#...এবং অস্পৃশ্য হাত।। বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় ।।


তনুশ্রী পাল । বাবু পাড়া ।রাউত লেন।জলপাইগুড়ি।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল