বই চুরি
( কিশোরী পায়েলের অ্যাডভেঞ্চর)
পায়েল
ইজিচেয়ারে আধ শোয়া হয়ে গভীর মনোযোগ নিয়ে বই পড়ছে । একটু দুরে মেঝেতে
শতরঞ্জি পেতে স্কুলের ওয়ার্ক এডুকেশনের ফাইল নিয়ে বসেছে অনামিকা । তিন
মাসের ব্যবধানে এই জেঠতুতো খুরতুতো বোন দুটি বর্ধমানের মৃণালিনী বালিকা
বিদ্যালয় থেকে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে । স্কুল বন্ধ, গরমের দুপুর
গুলো আর কাটতে চায় না।
পায়েল তুই এক গল্পের বই কতবার পড়িস রে?
কি আর করা যাবে , যতক্ষণ নতুন কোনো বই সংগ্রহ করতে পারছি।
একটা
আইডিয়া মাথায় এসেছে, সুবোধ জেঠুর আলমারি ভর্তি বই থেকে এক, দুটো সরিয়ে
নিয়ে আসলে বড় ঠাকুমা টের পাবে না, পড়া হলে গেলে আবার যথাস্থানে রেখে আসবো।
পায়েলদের একান্নবর্তি পরিবার ।
পাশাপাশি দুই ভায়ের দুটো বাড়ি ।
একটি
পায়েল ঠাকুর্দার, বর্তমানে এই বাড়িতে ঠাকুমা, পায়েলের বাবা, মা, কাকা,
কাকিমা, পায়েল, অনামিকা আর অনামিকার ছোট ভাই গোবলু থাকে। ঠাকুর্দা গত
হয়েছেন তাও প্রায় দশ বছর হলো।
অন্য বাড়িটি হলো পায়েলের ঠাকুর্দার দাদার । ওই বাড়িতে থাকেন সুবোধ জেঠু ও বড় ঠাকুমা আর কাজের মেয়ে বাতাসি।
দুই বাড়ির মাঝখানে ঠাকুর দালান। রাধা গোবিন্দের মন্দিরে নিত্য পূজা হয়।। বড় ঠাকুমা সেসব ব্যাবস্থা করেন।
সুবোধ
জেঠু নিঃসন্তান, বিপত্নীক, রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার । দোতলার ঘরে জেঠুর
বিরাট লাইব্রেরি,আলমারি ভর্তি ঠাসা বই। জেঠুর লাইব্রেরিতে ওদের ভাইবোন দের
অবাধ যাতায়াত, কিন্তু মাস খানেক হলো জেঠু বিশেষ কাজে চণ্ডীগড় গেছেন। জেঠুর
অবর্তমানে জেঠুর স্টাডি রুম, লাইব্রেরিতে বড় ঠাকুমা কাওকে ঢুকতে দেন না।
কোথায় প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র এদিক , ওদিক হয়ে যাবে।
পায়েলের ঠাকুমা রোজই পায়েলদের হাতে বড় ঠাকুমার জন্য ফুল, ফল পূজোর সরঞ্জাম , এটা , সেটা পাঠান, খোঁজ খবর নেন।
বড়
ঠাকুমা সারাদিন পূজো পাঠ করেন, ওনার সারা বছর নানান রকম ব্রত, উপোবাস,
উজ্জাপণ লেগেই থাকে। সুবোধ জেঠুর অকালে পত্নী বিয়োগের পর জেঠু যখন দ্বিতীয়
বার বিবাহে কিছুতেই রাজি হলেন না, বড় ঠাকুমা বেশি করে ঠাকুর ঘরে মনোনিবেশ
করলেন । এই বার গুরুদেবের আশ্রমে গুরুসেবা করতে গিয়ে বড় ঠাকুমা সাথে করে
তার গুরুদেবের এক শাকরেদ লম্বা চুল দাড়িওয়ালা হরিহর বাবা কে নিয়ে এসেছেন।
হরিহর বাবা নাকি বারো বছর হিমালয়ে তপস্যা করেছে , খুব বড় মাপের জ্যোতিষী।
লোকের
পা দেখেই তার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত গড়গড় করে বলে দিতে পারে। ঝাড়, ফুক ,
তেল পরা, জল পরা , কি সব মন্ত্র, তন্ত্র জানে। ঠাকুর দালানের নাট মন্দির
সংলগ্ন ঘরটিতে ওর আস্তানা জুটেছে।
সুবোধ জেঠুর বাড়ি
থেকে কখন বা পায়েল দের বাড়ি থেকে ওর সিধে যায়। সকাল ,সন্ধ্যা তে আশে পাশের
গ্রামের লোক ওর কাছে ভিড় জমায় । কেউ ঝাড়াতে আসে, কেউ জল পরা নিয়ে যায় , কেউ
বা ভবিষ্যত গণনার কাজে আসে। হরিহর বাবাকে খেতের চাল, ডাল, কলাটা, মুলোটা,
কখনো বা নগৎ টাকা দক্ষিণ দিয়ে যায় । মাঝে, মাঝে আবার বড় ঠাকুমার কথা মতো
বিশেষ বিশেষ তিথিতে হোম, যজ্ঞ করে। সেই সময় ভিড় দেখার মতো।
অনামিকা
পরীক্ষার আগে কোয়েশ্চন পেপার কেমন হবে জানতে ওর কাছে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ
করাতে পায়েল এমন হেসেছে যে বেচারা ভীষণ লজ্জায় পরে যায় ।
হরিহর বাবাকে পায়েলের একেবারেই পছন্দ নয়, ও অনেক দিন দেখেছে শুনশান দুপুরে
ফাঁকা
দালানে বসে হরিহর বাবা গাঁজা টানে। সব সময় ঘরের দরজা, জানালা বন্ধ করে ঘর
আগলে রাখে। পায়েল অনেক উঁকি, ঝুঁকি মেরে অনেক চেষ্টা করে ঘরের ভিতরটা দেখতে
পায়নি।
পরদিন দুপুরে দুই
বান্ধবী কাম বোন মিলে ঠাকুমার পাঠানো গাছের পাকা কলা নিয়ে বড় ঠাকুমার ঘরে
হাজির হয়েছে। বড় ঠাকুমা বিছানায় বসে রামায়ণ পড়ছেন, পায়ের কাছে হাত জোড় করে
বসে মন দিয়ে শুনছে বড় ঠাকুমার বারোমাসের কাজের মেয়ে বাতাসি। অনামিকা বড়
ঠাকুমার পাশে গিয়ে কোল ঘেষে চুপটি করে বসে, সেই ফাঁকে পায়েল সুবোধ জেঠুর
লাইব্রেরিতে তালা খুলে ঢুকে পরে। আলমারি তে ঠাসা বই, কিন্তু বাংলা গল্পের
বই গুলো সব কোথায় গেল ? কে আবার সরালো ? এই তো সেদিনও পায়েল দেখেছে থরে থরে
সাজানো ছিল রবীন্দ্র রচনাবলী, বঙ্কিম রচনাবলী, কাকাবাবু সমগ্র .....
তার জায়গায় রয়েছে আইনের বই, জ্যোতিষ শাস্ত্র, আরো কি সব হাবিজাবি বই।
পায়েল
কাঠের সিঁড়ি টা টেনে উপরে ওঠে। খুঁজতে খুঁজতে বই সরিয়ে সরিয়ে আলমারির
একেবারে উপরের তাকের পিছন থেকে পেয়ে যায় শরৎ রচনাবলীর প্রথম খন্ড। একি
শরৎচন্দ্রের স্হান একেবারে পিছনের সারিতে লুকোনো স্হানে ??
বইটা তাড়াতাড়ি ব্যাগে পুরে সব কিছু আগের মতো ঠিকঠাক জায়গায় রেখে বেরিয়ে আসে পায়েল ।
তারপর
এক ছুটে বাড়ি। মনটা কেমন যেন খচখচ করছে, কাজটা কি ঠিক করল? নাহ্ , আর
লুকোচুরি নয়, সুবোধ জেঠু বাড়ি ফিরলে জেঠুর হাতে পায়েল বই ফেরত দেবে।
একটা ঘরে পাশাপাশি দুটো বেড, একটা পায়েলের আর একটা অনামিকার। সমান, মাপ, সমান সাইজের, দুটোর ই দুপাশে জানালা।
সন্ধ্যাবেলায়
পরার টেবিলে বসে শরৎচন্দ্র খুলে বসতেই চোখ কপালে উঠেছে পায়েলের। একি
দেখছে? মোটা বই টার মাঝখান টা খুবলে মানচিত্রের আকারে কাটা। সেখানে রাখা
রয়েছে গোল করে পেঁচিয়ে কুন্ডুর পাকানো একটা সোনার চেন। বাইরে থেকে দেখে
কিচ্ছু বোঝার উপায় নেই । অনামিকা ছুটে এসে দেখে চেঁচামেচি জুড়ে দেয়। পায়েল
তাড়াতাড়ি ওর মুখ চেপে ধরে। চুপ, চুপ এখনি সবাই কে জানিয়ে লোকজন জড়ো করার
দরকার নেই । যা আগে দরজাটা বন্ধ কর ভিতর থেকে।
পায়েল
ধীরে ধীরে সোনার চেন টাকে বই এর ভিতর থেকে টেনে বের করে। বেশ মোটা ভারী ,
প্রায় হাঁটু পর্যন্ত লম্বা ।এত লম্বা চেন কোনো মানুষের কি করে হয়?
নানা
প্রশ্ন পায়েলের মনে দানা বাঁধতে থাকে, ব্যাঙ্কের লকার, আলমারি থাকতে সুবোধ
জেঠু বই এর মধ্যে এইভাবে সোনার চেন রাখবেন কেন? উনি উচ্চ শিক্ষিত, পুস্তক
প্রেমিক । কোনো পুস্তক প্রেমিকের পক্ষে বই এর পৃষ্ঠা এই ভাবে কেটে ফেলা
সম্ভব নয় ।
রাত প্রায়
দুটো, লাইট নিভিয়ে চুপচাপ ঘুমের ভান করে অপেক্ষা করছে দুই বান্ধবী । মা,
কাকিমা পালা করে রাতে মেয়েদের ঘরে ঘুরে যান। কখনো বা বই এর টেবিল গুছিয়ে ,
ভালো করে মশারি গুঁজে দিয়ে যান। মায়ের রাউন্ড কমপ্লিট হতেই উঠে পরেছে
দুজনে। পাশবালিশটা বিছানার মাঝামাঝি রেখে ভালো করে চাদর টেনে ঢেকে দেয় । এক
ঝলক দেখলে মনে হবে কেউ ঘুমোচ্ছে । তারপর চুপি চুপি পা টিপে টিপে ঘরের
বাইরে এসে মেইন গেটের তালা খুলে বেড়িয়ে আসে। রাতে খারার পর সবার অলক্ষ্যে
বাবার ঘর থেকে বাইরের গেটের চাবি সরিয়ে রেখেছিল পায়েল ।
এক ছুটে বড় ঠাকুমাদের বাড়ি যেতে গিয়ে ঠাকুর দালানের দিকে চোখ পরতে অবাক হয়।
এতরাতে হরিহর বাবার ঘরে আলো জ্বলছে কেন? ফিসফিস কথার আওয়াজ । ওরা দুজন দেওয়ালের পাশে লুকিয়ে পরে। টুকরো টুকরো কথা কানে আসছে।
কেউ হরিহর বাবা কে শাসাচ্ছে,
গুরু ,
তুমি বেশ এখানে গা ঢাকা দিয়েছে , কামাই তো ভালোই হচ্ছে ।
ওদিকে আমাদের পুলিশ তিষ্ঠাতে দিচ্ছে না। পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
লুকোনো মালকড়ি সব কোথায়?
কাল আবার আসবো। গুপিন বলেছে ও আমার সাথে কাল আসবে। সবার সমান সমান হিসসা চাই, সেই রকমই কথা ছিল, বিশ্বাস ঘাতকের ফল তুমি জানো......
লোকটা হনহন করে আপাদমস্তক চাদর মুড়ি দিয়ে বেড়িয়ে গেল।
হরিহরের ঘরের আলো নিভে গেল।
সুবোধ
কাকু দীর্ঘদিন হলো বাড়ির বাইরে, বাবার হুকুমে পায়েলদের পুরোনো কাজের লোক
গোকুল রোজ রাতে সুবোধ জেঠুর বাড়ির বারান্দায় শুয়ে বাড়ি পাহারা দেয়।
গ্রিলের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে গোকুলদা বারান্দায় বিছানা পেতে অঘোরে ঘুমোচ্ছে, পাশেই পেরেকে ঝোলানো চাবির গোছা।
ওরা খুব সাবধানে বড় ঠাকুমার ফুল পারার আঁকশি টা দিয়ে চাবির গোছাটা কে পেরে নিয়ে চাবি দিয়ে তালা খুলে ফেলে।
গোকুলদা
কে টপকে বাড়ি তে ঢুকে পরে পায়ে পায়ে দোতলার সিঁড়ি র দিকে এগোয় । অনামিকা
কে সিঁড়ি তে পাহাড়ায় বসিয়ে রেখে পায়েল দোতলায় উঠে লাইব্রেরিতে যায় । পাশের
ঘরে খাটে বড় ঠাকুমা ঘুমোচ্ছেন, নীচে বিছানা পেতে বাতাশি।
পায়েল
সাথে করে বাবার পেনসিল টর্চটা নিয়ে এসেছে । এক এক করে আলমারির পিছনের
সারির মোটা মোটা বই গুলো নামায়। ওর সন্দেহ সঠিক । এনসাইক্লোপিডিয়ার ভিতরের
পৃষ্ঠা খুবলে কেটে তার মধ্যে বসানো রয়েছে ইয়া মোটা মোটা দুটো বালা। আরো চার
পাঁচ টা বই এর ভিতরে পাওয়া গেল সোনার সীতা হার, বালা, টিকলি,
মুকুট....উত্তেজনায় সারা শরীর কাঁপছে, গলা শুকিয়ে কাঠ ।
সব
সোনার গয়না ওর স্কুল ব্যাগে ভরে বই গুলো সুন্দর করে যেমন ছিল সেই ভাবে
রেখে নিচে এসে দেখে সিঁড়ি তে বসে বসেই অনামিকা ঘুমিয়ে কাদা। ঘড়িতে তখন
চারটে বাজছে।
ওকে ঘুম থেকে তুলে গোকুলদার পাশে চাবির গোছা রেখে গ্রিল টেনে দিয়ে ওরা বাড়ির দিকে ছুট লাগায়।
পরদিন
সকালে বাড়িতে শোরগোল পরে গেল। পায়েলের ঠাকুমার বেজায় শরীর খারাপ । উনি
বিছানা ছেড়ে নামতে পারছেন না। পা দুটো একেবারে অসাড়, পাথরের মতো হয়ে আছে ,
নট নরনচরন । ঠাকুমা গোকুল কে হুকুম দিলেন যা , ওই বাড়ির বড় ঠাকুমা কে খবর
দে। হরিহর বাবা কে ডাক । উনি এসে ঝাড়, ফুক, মালিশ করলে যদি কিছু বিহিত হয়।
বাবা
রে রে করে উঠলেন, এসব কি কথা, এখনি ডাক্তার ডাকতে হবে। কিন্তু ঠাকুমা
নাছোড়বান্দা, ডাক্তার, বৈদ্যি নয়, পারলে হরিহর বাবাই পারবেন।
বড় ঠাকুমা খবর পেয়ে তৎক্ষনাৎ হন্তদন্ত হয়ে হরিহর বাবাকে সাথে নিয়ে ছুটে এলেন।
এদিকে
গোকুল সকাল থেকে ভয়ে কাঁটা হয়েছিল । সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে বড় ঠাকুমার
বাড়ির দরজায় তালা নেই, চাবি গোছা ওর পাশে রাখা । বেচারা ভাবে ও নিশ্চয়ই
আগের দিন রাতে ভুলে গেছে তালা দিতে। বড় ঠাকুমা বা বাতাসির নজরে পরলে আর
রক্ষা থাকবে না।
ঠাকুমার অসুস্থতায় গোকুল বোধহয় এ
যাত্রায় বেঁচে গেল। ও প্রবল আগ্রহে হরিহর বাবার হুকুম তামিল করে চলেছে ।
ঘরে হোম, যজ্ঞ হবে, কুল কাঠ জোগাড় হচ্ছে । এত্তো বড় শিশিরে ঘি, আনুষাঙ্গিক
জিনিসপত্র , ফল, মিষ্টি, দই, মধু.....
বড়
ঠাকুমা একপাশে বসে সব জোগাড় যন্ত্র করছেন । ওদিকে বিছানায় শুয়ে ঠাকুমা
কাতরাচ্ছেন। ঠাকুমা বরাবরই মুক্ত মনের, আধুনিক মনস্ক, ওনার এরকম আচরণে মা,
কাকিমা হতভম্ব , তবে কি বয়স কালে মতিভ্রম ঘটলো নাকি হরিহর বাবা যাদু
জানে....
কাকা রেগে আগুন, কিন্তু কিছু বলতে পারছেন
না। প্রতিবেশী ও অন্যান্য দের কাছে হরিহর বাবার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে । ঘরে
দক্ষযজ্ঞ শুরু হয়েছে । উৎসুক প্রতিবেশী রা এসে ভিড় জমিয়েছে । হরিহর বাবা
উচ্চস্বরে মন্ত্র উচ্চারণ করে চলেছে । যজ্ঞের ধোঁয়াতে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে
না।
বেলা প্রায় তিনটে, হঠাৎ মিরাকেল ঘটে গেল, সবাই কে
অবাক করে দিয়ে ঠাকুমা মাটিতে পা ফেললেন। তারপর সাবধানে পা ফেলে ফেলে ধীরে
ধীরে হাঁটতে শুরু করলেন।
হৈ হৈ রব পরে গেল। কেউ কেউ হরিহর বাবার জয়ধ্বনি দিল। বড় ঠাকুমার চোখে জল , মুখে বিজয়িনীর হাসি।
ঠাকুমা
হাঁটতে পারছেন, এর চেয়ে বড় আর কি হতে পারে। উনি ঠাকুমা কে অত্যধিক
ভালোবাসেন। সবটাই হরিহর বাবার জন্য সম্ভব হলো। উনি কৃতজ্ঞতায় জোড় হাত করে
হরিহর বাবা কে প্রণাম করলেন ।
এতো বেলা অবধি বাড়ির কারোর খাওয়া হয় নি।
আরে, মেয়ে দুটো গেল কোথায়? সকাল থেকে ওদের পাত্তা নেই, এতো হট্টগোলের মধ্যে কেউ খেয়াল করেনি ।
বাবা চিন্তিত হয়ে রাস্তায় গিয়ে দেখেন,
সাইকেলের পিছনে অনামিকাকে বসিয়ে
ঝড়ের গতিতে কোথা থেকে ছুটে আসছে পায়েল ।
রাত্রি
বারোটা, রুদ্ধশ্বাসে নিজেদের ঘরে অপেক্ষা করছে পায়েল আর অনামিকা । হঠাৎ
পুলিশের সাইরেন, দুম , দুম গুলির আওয়াজ । ওরা হুড়মুড় করে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে
পরে। সবাই খুব ভয় পেয়ে গেছে, এতো রাতে পুলিশ, আশেপাশের বাড়ির লোকজন গুলির
আওয়াজে বেড়িয়ে এসেছে ।
পুলিশ হরিহর সহ আরো দুজন লোক কে হাতকড়া পরিয়ে জিপে তুলছে।
বড়বাবু এগিয়ে আসেন, ওয়ারেন্ট আছে, সুবোধ জেঠুর লাইব্রেরি সহ গোটা বাড়ি তল্লাশি হবে। সবাই চমকে ওঠে....
এসব কেন? হরিহর বাবার অপরাধ? ওই লোক দুটো ই বা কে?
পুলিশ অফিসার সমবেত জনতার দিকে তাকিয়ে পায়েল দেখিয়ে বলেন,
চোর ধরার সব কৃতিত্ব এই ছোট মেয়েটির ।
আসল
ঘটনা হলো, শিমুরালির কাছে একটি বিখ্যাত পুরোনো মন্দিরের বিগ্রহের প্রচুর
গহনা চুরি করে হরিহর ও তার সাকরেদরা পালায়। পুলিশ ওদের অনেক দিন ধরে
খুঁজছিল ।
হরিহর প্রথমে গুরুদেবের আশ্রমে লুকিয়ে ছিল।
পরে সুযোগ বুঝে বড় ঠাকুমার সরলতার সুযোগে ওনাকে কে বোকা বানিয়ে ওনাদের
বাড়ির ঠাকুর দালানে আশ্রয় নেয় । এদিকে ওর সাকরেদরা ওর আস্তানার হদিস পেয়ে
চোরাই গহনার ভাগ চাইতে আসতো।
ও তখন সুবোধ জেঠুর অনুপস্থিতিতে লাইব্রেরিতে ওনার বই গুলোর ভিতর গহনা লুকিয়ে রাখে।
"বই চুরি" করতে গিয়ে গহনা পায়েলের হাতে পড়ে।
পায়েল
ওর ঠাকুমার সাথে চুপিচুপি পরামর্শ করে, পায়েলের কথা মতো ঠাকুরমা অসুস্থতার
অভিনয় করে হরিহর বাবা সহ বাড়ির সবাই কে ব্যস্ত রাখেন। সেই সময়ে পায়েল
হরিহর বাবার ঘরে তল্লাশি চালায় । ওর ঘরে বিছানার নীচে খুঁজে পায়
এনসাইক্লোপিডিয়ার অনেক গুলো ছেঁড়া পাতা । ওই কাগজ গুলো দিয়ে ও গাঁজা মুড়ে
রেখেছিল। পরচুলা, দাড়ি গোঁফ , ইয়া বড় একটা ধারালো ছোরা , পুরোনো ফটো, কিছু
কাগজপত্র ওর বাক্স থেকে নিয়ে পায়েল সোজা থানায় ছোটে। থানায় গিয়ে সব গহনা
জমা করে পুলিশ কে বিস্তারিত বিবরণ দেয়। পুরোনো ফটো দেখে প্রমাণ হয় হরিহর
দাগী আসামী । তখুনি পুলিশ হরিহর কে নজর বন্দী করে ফেলে। পায়েলের তথ্য
অনুযায়ী বাকি দুজন সাকরেদের রাতে আসার কথা।
পুলিশ বিকেল থেকেই ওদের বাড়ির আশেপাশে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে নজর রাখছিল। । রাতে দুই সাকরেদ আসতেই একসাথে তিন জন কে অ্যারেস্ট করে।
এরপরেও আছে ঠাকুমার অসাধারণ অভিনয় । উনি হরিহর সহ সবাই কে ব্যস্ত রেখে পায়েল কে তদন্তের অনেকটা সময় করে দিয়েছেন।
ঠাকুমা এক গাল হেসে দু হাত বাড়িয়ে পায়েল আর অনামিকা কে জড়িয়ে ধরলেন ।
ক্লাস এইটের গবলু একটা খাতা রোল করে মাইকের মতো করে মুখের সামনে ধরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো .....
আজ থেকে দিদিভায়ের নতুন পরিচয় হলো
"" প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর পায়েল সেন।"
====সমাপ্ত====
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন