Featured Post
গল্প ।। অরূপম মাইতি
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
শেষ থেকে শুরু
দীনেশ প্যাটেল উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক। সিদ্ধার্থের ইমিডিয়েট বস, অবিনাশ চতুর্বেদীর প্রাণের বন্ধু। দীনেশ অবসর নিচ্ছেন। হোটেল আকাশগঙ্গায় তারই পার্টি চলছে। রামদীনকে গাড়ি পার্ক করতে বলে, সিদ্ধার্থ একটু এগিয়ে অবিনাশ আর দীনেশকে এক টেবিলে পেয়ে গেল। হুইস্কির গ্লাস হাতে দুই অভিন্নহদয় বন্ধু মনের সুখে পুরানো স্মৃতির ভান্ডার তোলপাড় করে চলেছে। দীর্ঘ চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা তো বহরে কম নয়।
বড় বড় অধিকর্তাদের অবসরজনিত পার্টিতে এরকম ঢালাও মদ, নতুন কিছু নয়। দীনেশ-অবিনাশের সঙ্গে দেখা করে, সিদ্ধার্থ এগিয়ে গেল বার কাউন্টারের দিকে। বাটলারের থেকে এক পেগ হুইস্কি চেয়ে নিয়ে, এদিক-ওদিক তাকাতে চোখ পড়ল কোণের একটা টেবিলের দিকে। গোল টেবিলটা ঘিরে, হাতে ঠান্ডা পানীয়ের গ্লাস নিয়ে, বসে আছে স্বপ্না আর সমীর।
স্বপ্না সেই একই রকম প্রাণোচ্ছল। গ্লাসে মাঝে মধ্যে চুমুক দিতে দিতে সমীরের সাথে কথা বলছে। মুক্তোর মত হাসি কথায় কথায় গড়িয়ে পড়ছে আর ছড়িয়ে যাচ্ছে টেবিলময়। 'দ্য আর্ট মার্ক' এখন কলকাতার খুব বড় চিত্র প্রদর্শনী সংস্থা, স্বপ্নার হাতে তৈরি। বিয়ের কিছু দিন পরে সংস্থাটির যাত্রা শুরু। সংসার সমুদ্রে নাজেহাল স্বপ্না প্রথম দিকে খুব একটা সময় দিতে পারত না। তবে সেসব এখন ইতিহাস। কারণ ডিভোর্সের পরে তার হাতে সময়ই সময়।
চিত্র সমালোচনা নিয়ে ডিপ্লোমা করে দু-একটা সংস্থা ঘুরে সমীর এখন 'দ্য আর্ট মার্ক'-এর ম্যানেজার এবং স্বপ্নার অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। ওদের মেলামেশা দেখলে সেটাই মনে হয়। কল্পকের অস্তিত্ব খুব তাড়াতাড়ি ভুলে গেছে স্বপ্না। অবাক হয় সিদ্ধার্থ। উচ্চাভিলাষী স্বপ্না, চার দিনের ভাইরাল ফিভারে একমাত্র ছেলের মৃত্যুর ধাক্কা খুব তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠেছিল। একমাত্র ছেলে চলে যাওয়ার পরে এক বছর দুজনের খুব কষ্টে কেটেছে। ওদের দাম্পত্য সম্পর্ক অবশ্য অনেক আগে থেকে এতটাই নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছিল যে ছেলের মৃত্যুও দুজনকে কাছাকাছি আনতে পারেনি। কল্পকের মৃত্যুর পরে সিদ্ধার্থের মদ্যপান বেড়ে গিয়েছিল। নেশায় চুর হয়ে বাড়ি ফিরলে প্রথম দিকে স্বপ্না অভিযোগ করত। পরে পরে জ্ঞান দেওয়া শুরু করেছিল।
বিবাহ বিচ্ছেদের পরে মাস চারেক মাত্র কেটেছে। এই ক'দিনে অবশ্য স্বামীর সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ খুব একটা ছিল না। সিদ্ধার্থের মত বুদ্ধিমান এবং বাস্তববাদী ছেলে এসব যে বুঝত না, তা নয়। আসলে এক-একটা ঘটনার প্রতিক্রিয়া এক-একজন মানুষের মধ্যে এক-এক ধরনের হয়। কল্পকের অভাব সিদ্ধার্থ কাটিয়ে উঠতে পারেনি, কিন্তু স্বপ্না পেরেছে। সে তো বিবাহের বন্ধনও কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। বিচ্ছেদের প্রস্তাবটা তারই দিক থেকে প্রথম এসেছিল। অবিনাশ সম্পর্কে স্বপ্নার কাকা। স্বপ্না আর সিদ্ধার্থের বিয়ের ঘটকালিও তাঁর হাতে। বাড়িতে স্ত্রী আর অফিসে বস, দু-জনের থেকে একটাই পরামর্শ বারবার কানে আসত সিদ্ধার্থের। বাড়ি বেচে অন্যত্র চলে যাও। তাহলেই একমাত্র কল্পককে ভুলতে পারবে। সিদ্ধার্থ রাজি হয়নি। যে বাড়ি বেচে, কল্পককে ভুলতে চেয়েছিল স্বপ্না, সেই বাড়ি ধরে রেখে, কল্পকের স্মৃতিকে এখনও আঁকড়ে ধরে আছে সিদ্ধার্থ।
দু পেগ শেষ করে তৃতীয় পেগ হাতে সিদ্ধার্থ এগিয়ে গেল স্বপ্নাদের টেবিলের দিকে।
কেমন আছ তুমি?
মুখের হাসি মুহূর্তে শুকিয়ে যায়। সিদ্ধার্থকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। সমীরের অবস্থাও এক রকম। স্বপ্নার অফিসের ড্রয়ারে একটা ফোটো অ্যালবাম থাকে। মন খারাপ হলে, অ্যালবাম বার করে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। সে সময় সমীর তাকে বিরক্ত করে না। একদিন স্বপ্নার অনুপস্থিতিতে চেম্বারে ঢুকে অ্যালবামটা চোখে পড়েছিল। সিদ্ধার্থকে সে চেনে। প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক, খাতায়-কলমে শেষ হলেও, পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবনকে এত তাড়াতাড়ি যে ভোলা সম্ভব নয়, সেটা সে জানে। স্বপ্নার প্রতি সমীরের দুর্বলতা আছে। তবে সে অপেক্ষা করতে চায়। তার সাথে স্বপ্নার সম্পর্ক খুব সাবলীল। তবে সিদ্ধার্থের বিকল্প রূপে, সমীর এখনও তার কাছে অবশ্যম্ভাবী নয়। অন্তত স্বপ্না নিজে তা অনুভব করে না।
আছি মোটামুটি! তোমার খবর কি? কেমন আছ তুমি?
আমিও আছি কোন রকম। তোমার অভাব অনুভব করি। আর...
কোন সিন ক্রিয়েট কোর না সিদ্ধার্থ। আমার রিকোয়েস্ট...
গ্লাস অর্ধেক খালি করে ফেলেছে সিদ্ধার্থ। খালি গ্লাস টেবিলে রেখে, বাঁ হাতের তালুর মধ্যে ডান হাতের তালু রেখে, বেশ কিছুক্ষণ স্বপ্নাকে দেখল। তারপর বলল
হাততালি দেব ভেবেছিলাম। একটা নতুন সম্পর্ক জন্ম নিচ্ছে, ভাবছিলাম অভিনন্দন জানাব। অথচ তুমি কি না বাধা দিচ্ছ!
প্লিজ সিদ্ধার্থ। চারদিকে অনেক লোক। সিন ক্রিয়েট করে দীনেশ আঙ্কলের পার্টি নষ্ট করে দিও না।
ওহ তাই...ভয় পাচ্ছ?
ভুল করছ সিদ্ধার্থ...ভয় আমি পাইনি। নিজেকে নিয়ে আমি ভাবিনা। এখান থেকে এখনই চলে যেতে পারি। তবে পার্টি নষ্ট হোক, সেটা আমি চাই না।
মাই গড...তুমি তো বেশ দিলদার হয়ে উঠেছ? নিজের জন্য চিন্তা নেই...শুধু পার্টি নষ্ট হওয়ার চিন্তা। কল্পকের কথা মনে পড়ে না?
ভুলে যেয়ো না সিদ্ধার্য...তুমি যেমন কল্পকের বাবা, আমিও তেমন কল্পকের মা...দশ মাস দশ দিন পেটে ধরেছিলাম। তার জন্য আমারও খুব একটা কম দুঃখ নেই...তবে আমি তোমার মত সেটা আঁকড়ে বাঁচতে চাইনি...আর সেটা চাইনি বলেই চেয়েছিলাম আমাদের সম্পর্কটা শেষ করে দিতে। তোমাকে এসব বলে লাভ নেই... অনেক বলেছি...তুমি একরোখা...তোমাকে বোঝায় কার সাধ্য...আমার কথা তুমি মানবে না...
হ্যাঁ শুনব না। আমাকে জ্ঞান দেওয়ার তুমি কে? মা থেকে মাসি হয়েছে...ইউ ব্লাডি শেমলেস বিচ...
মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গোয়েজ সিদ্ধার্থ...এটা ভদ্রলোকের জায়গা...একদম অসভ্যতা কোর না
সমীর অনেকক্ষণ থেকে অস্বস্তিতে ভুগছিল। বুঝল, এবার উঠে পড়া দরকার। স্বপ্নাকে ইঙ্গিত করে চেয়ার থেকে উঠতে চাইতে, সিদ্ধার্থ তার দিকে তাকাল।
আরে, তুমি উঠছ কেন? বসে পড়, বসে পড়...ওঠার তো কথা আমার...স্বপ্না সেটা অনেকক্ষণ আগে থেকে বলছে আমাকে...তুমি বস...আমিই বরং উঠে যাচ্ছি...
সমীর ঠান্ডা মাথার মানুষ। সহানুভূতির চোখে বলে উঠল
আমাকে উঠতেই হত। একবার টয়লেটে যেতাম। আপনারা কথা বলুন...আমি ঘুরে আসি।
সো নাইস অফ ইউ! ভেরি ইন্টেলিজেন্ট...শুভেচ্ছা জানাই বন্ধু...আমি তো পারিনি। জীবনটা নাহয় তুমিই উপভোগ কর, এই স্বপ্না সুন্দরীর সাথে...উইশ ইউ আ ভেরি হ্যাপি লাইফ
স্টপ অল দিস ননসেন্স, সিদ্ধার্থ। সমীর, যাও ঘুরে এসো।
স্বপ্না বেশ ভাল রকম উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। তবে তাকে স্বস্তি দিতে এতক্ষণে টেবিলের ধারে চলে এসেছেন অবিনাশ। সিদ্ধার্থের দুই কাঁধে হাত রেখে, আদেশের গলায় বললেন
সিদ্ধার্থ! চল! আমরা অন্য দিকে যাই। চারপাশে আমাদের আরও বন্ধুরা আছেন। তাদের সাথেও তো কথা বলার দরকার। লেটস গো নাউ...
সিদ্ধার্থ আর কথা বাড়াল না।
ওকে বস! লেটস গো...
স্বপ্নার দু-চোখ কান্না উপচে উঠছে। টেবিল ছেড়ে চলে যেতে যেতে, সিদ্ধার্থ বলে যায়
ওকে ডিয়ার! এনজয় ইয়োরসেল্ফ! আর কোন ভয় নেই। আমি আর বিরক্ত করব না।
সিদ্ধার্থ চলে যাওয়ার পরে, তার ছেড়ে যাওয়া মদের গেলাসটা ছুঁতে ইচ্ছে করল স্বপ্নার। অনেক দিন হুইস্কি খায়নি। সিদ্ধা্র্থের জিদে মাঝে মধ্যে খেতো। এখন আর জিদ করারও কেউ নেই। গ্লাসটা তুলে ঠোঁটের সামনে নিয়ে আসতে চমকে উঠল স্বপ্না। একটু দূরের হাই পাওয়ার লেড বাল্বের আলো ঠিকরে পড়েছে গ্লাসের পানীয়তে। তার মধ্য থেকে একটা বাচ্চা ছেলে যেন খিলখিল করে হাসছে।
কি মজা! কি মজা! আমি লুকিয়ে পড়েছি, মা! আমাকে আর খুঁজে পাবে না...
চেয়ার থেকে ছিটকে লাফিয়ে উঠল স্বপ্না। গ্লাসের প্রায় সবটুকু চলকে পড়ল ঘাসের জমিতে। তার সাথে স্বপ্নার মনে হল, ছেলেটার হাসিটাও ভাঙা কাচের টুকরোর মত ছড়িয়ে গিয়ে হারিয়ে গেল মাটির তলায়।
II২II
দীনেশ প্যাটেল অবসর নিয়েছেন, প্রায় দু মাস হল। সেদিনের পার্টিতে আর কোন গোলমাল হয়নি। সমীর টয়লেট থেকে ফিরে আসার একটু পরে, ডিনার সেরে বাড়ি ফিরেছিল স্বপ্না। পার্টিতে সিদ্ধার্থকে আর দেখা যায়নি। তবে সেই ঘটনার রেশ, স্বপ্না এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আজ সকালেও স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙেছে।
আজ আর অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না। দশটার পরে সমীরকে ফোন করে বলতে হবে, সারা দিন যেন অফিসে থাকে। অনেক কষ্টে তৈরি 'দ্য আর্ট মার্ক'। ব্যক্তিগত জীবনের ছাপ সেখানে যাতে না পড়ে, সেটাও তো দেখা দরকার। বিছানা থেকে নেমে, টয়লেট সেরে এসে চা বসাল স্বপ্না। বাবা দিল্লিতে থাকতে মেয়ে-জামাইয়ের জন্য এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিলেন। সিদ্ধার্থের সঙ্গে সংসার করার পাট তো চুকে গেছে। এ ফ্ল্যাটে একা থাকাই এখন স্বপ্নার ভাগ্য।
চায়ে আস্তে আস্তে চুমুক দিতে দিতে জানলা দিয়ে পূবের আলো দেখছিল স্বপ্না। জানলার নীল কাচের মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো ফিলটার হয়ে ঘরে ঢুকছে। তার জীবনের একটা পর্ব শেষ।
আর কোন পর্ব তৈরি হবে কি না, সে নিয়ে নতুন কিছু ভাবতে সে রাজি নয়। পার্টিতে সিদ্ধার্থ সেদিন যতই ঠেস দিয়ে কথা বলুক না কেন, আসলে সমীরকে, স্বপ্না কখনও সে চোখে দেখেনি। নিছক সহকর্মী ছাড়া ওদের মধ্যে আর কোন সম্পর্ক নেই। স্বপ্নার আফশোস, সিদ্ধার্থ যদি একবার সে কথা বুঝত। অবশ্য তাতে লাভ কিছু হত না। ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগার কোন জায়গাই তো আর খোলা নেই। এসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে গভীর মননে ঢুকে পড়েছে, খেয়াল নেই। হুঁশ ভাঙল অবিনাশ আঙ্কলের ফোনে।
তুমি কোথায়?
কি হয়েছে আঙ্কল?
তুমি কি বাড়িতে আছ? একবার আসতে পারবে?
কোথায় যাব?
একটু আগে একটা বিপদ হয়েছে।
কি হয়েছে? কার বিপদ? সব কিছু খুলে বল। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
তোমাদের বাড়ির পাশে মন্ডলদের কথা মনে আছে?
হ্যাঁ, মনে পড়ছে। ওদের কিছু হয়েছে?
না, ওদের কিছু হয়নি। ওদের কিছু হলে, আমি কি আর ফোন করতাম!
তাহলে?
বলছি সব, ধৈর্য ধরে শোন।
দাশরথি মন্ডলের একমাত্র নাতিকে পরশু থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ভদ্রলোক একটু প্রভাবশালী। পুলিশ, প্রশাসন কাউকে জানাতে বাকি রাখেননি। এক দিন নিখোঁজ থাকার পরে আজ ভোরে তোমাদের বাগানে পাঁচিলের ধার ঘেঁষে, তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে।
ওহ মাই গড! ছেলেটা ওখানে কি করছিল?
সেটা তো আমারও প্রশ্ন।
হুমম! তারপর? ছেলেটা বাঁচবে তো?
না, না, সেরকম কিছু হয়নি। ডাক্তার বলেছে, ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
তুমি যে বিপদের কথা বললে, সেটা তাহলে কি?
তুমি চলে যাওয়ার পরে, সিদ্ধার্থ তো একাই বাড়িতে থাকে। পাড়াপড়শিদের বক্তব্য, মাস কয়েক হল, ছেলেটার সঙ্গে সিদ্ধার্থর নাকি বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়েছিল। ছেলেটা তোমাদের বাড়িতে যখন-তখন আসত, সিদ্ধার্থর সঙ্গে খেলত। সিদ্ধার্থ এমন কি, ছেলেটার জন্য পুতুল, খাবার, এসব কিনে আনত।
এ তো ভাল কথা! ও হয়ত এসব করে কল্পককে ভোলার চেষ্টা করছে।
আমারও তাই ধারণা।
তাহলে বিপদের কি হল?
আচ্ছা, তুমি কি জান, তোমাদের বাড়ির দিকে সম্প্রতি প্রোমোটারের নজর পড়েছিল।
বারবার 'তোমাদের' বলছ কেন? ও বাড়ির সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
জানি, সিদ্ধার্থ তোমাকে এসব বলবে না। তোমাদের মধ্যে কথাবার্তা থাকলে হয়ত বলত। সেটাও তো বন্ধ।
আঙ্কল! এখানে প্রোমোটারের কি ভূমিকা, সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
বলছি, বলছি।
সম্ভবত প্রোমোটারের লোকজন স্থানীয় ক্লাব আর কিছু পড়শিকে খেপিয়েছে সিদ্ধার্থর বিরুদ্ধে। ছেলেটাকে অচৈতন্য অবস্থায় খুঁজে পাওয়ার কিছুক্ষণ পরে ওরা সিদ্ধার্থর ওপরে চড়াও হয়। আত্মরক্ষার জন্য সিদ্ধার্থও কিছুটা হাত চালিয়েছিল। তাতে জনতা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ভীষণ মারধর করেছে। সিদ্ধার্থ মারাত্মক জখম। শেষ পর্যন্ত, দাশরথি মন্ডলের ফোনে কাজ হয়। থানা থেকে পুলিস এসে সিদ্ধার্থকে উদ্ধার করে। ততক্ষণে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে।
কি বলছ আঙ্কল? সিদ্ধার্থ এখন কোথায়?
পুলিস সিদ্ধার্থকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। চিকিৎসা চলছে। সাঙ্ঘাতিক জখম হয়েছে।
সারতে অনেক সময় লাগবে। আমি তোমাকে আসতে বলছি না। মনে হল, তাই জানালাম।
আঙ্কল, আমি হাসপাতালে যাব। আমি ফোন রাখছি। তুমি এসো। ওখানে দেখা হবে।
শোন, স্বপ্না। এসব কি তুমি ভেবে বলছ?
এখন অত ভাববার কিছু নেই আঙ্কল। আমার যা মনে হয়েছে, তাই বললাম। আসছি আমি। তুমি ঠিকানাটা মেসেজ কর।
II৩II
দিন দশেক যমে-মানুষে টানাটানির পরে সিদ্ধার্থ এখন অনেকটা সুস্থ। আজ হয়ত হাসপাতাল থেকে ছুটি দেবে। অবিনাশ চতুর্বেদী সকাল সকাল চলে এসেছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ ইত্যাদি কাউকে না কাউকে তো বুঝে নিতে হবে।
ভিজিটর্স রুমের বড় কাচের জানলার বাইরে দেখা যাচ্ছে, স্বচ্ছ পরিস্কার আকাশ। সেখানে একটুও মেঘ নেই। অসুস্থ সিদ্ধার্থকে কে দেখাশোনা করবে, তাই নিয়ে অবিনাশ গভীর চিন্তায় আছেন। সম্পূর্ণ সারতে আরও কিছু দিন লাগবে। সিদ্ধার্থ মোটামুটি কথা বলতে পারছে। গত সন্ধ্যাতেই বলেছিলেন
তুমি আমার বাড়ি চল। সম্পূর্ণ সুস্থ হলে তারপর নাহয় নিজের বাড়িতে ফিরবে।
জানতেন, সিদ্ধার্থ একরোখা ছেলে। কোন ভাবেই রাজি হবে না। যা ভেবেছিলেন, বাস্তবে ঠিক তাই হল। তার এক কথায় উত্তর
আমি ঠিক আছি।
সিস্টার এসে বলে গেল
মিস্টার চতুর্বেদী! কাগজপত্র মোটামুটি তৈরি হয়ে আছে। ডক্টর দেখে গেলে, আপনি পেশেন্টকে নিয়ে যেতে পারবেন। আমি সব বুঝিয়ে দেবো। ডক্টর এলে আমি খবর দেবো।
ওকে সিস্টার।
আর একটা কথা। ওনার কিন্তু চব্বিশ ঘন্টা অ্যাটেনডেন্ট দরকার। আপনি চাইলে আমরা হাসপাতাল থেকে নার্স পাঠাতে পারি।
দেখছি। সব দিক দেখে নিয়ে আমি জানাব।
আরও আধ ঘন্টা পরে ডাক পড়ল অবিনাশের। রিসেপশন ডেস্কে সিস্টারের থেকে, অবিনাশ সবে মাত্র কাগজপত্র বুঝে নিচ্ছেন, পাশ থেকে কেউ বলে উঠল
আমাকে বলুন।
অবিনাশ অবাক হয়ে দেখলেন, স্বপ্না দাঁড়িয়ে তার পাশে। একবার স্মিত হেসে অবিনাশকে আশ্বস্ত করে, বলে উঠল
চিন্তার কিছু নেই, আঙ্কল। সিদ্ধার্থর দায়িত্ব এখন থেকে আমার।
অবাক বিষ্ময় নিয়ে অবিনাশ কৌশলে শুধু জানতে চাইলেন
তুমি কি ও বাড়িতেই থাকবে?
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, মাথা নেড়ে নেড়ে কেবিনের দিকে যেতে যেতে স্বপ্না বলল
আপনি বসুন। আমি ওকে নিয়ে আসছি। যেতে যেতে কথা হবে।
ছাপান্ন বছরের অকৃতদার বৃদ্ধ দুর থেকে তাকিয়ে দেখলেন তাঁর জীবনের সব থেকে দুটি প্রিয় মানুষ, তাদের জীবনের সম্ভাব্য নতুন একটি আরম্ভ করতে চলেছে।
====================
১৫ নন্দীপাড়া লেন, রামরাজাতলা, হাওড়া – ৭১১১০৪
চলভাষঃ +৯১-৯৪৩৩০২৬৩৩৮ এবং +৯১-৯৮৩০০৬৫২৬৪ (W)
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন