বিবাগী বাউল : মাটির টানে, মাটির গানে
ওরে বিবাগী বাউল, আজ ঘর ছাড়া তুই মাটির টানে, শষ্য, শ্যামলা, সবুজের গানে, ওই ধুলো কোনা মাখা উলঙ্গ শিশুটি উদাস নয়নে বাউল গানের মানে খোঁজে, ওরে ঘর ছাড়া বিবাগী বাউল এই সমাজ কি তোর গেরুয়া
রঙের মাহাত্ম্য কেউ কি আজ বোঝে? বাংলা তথা ভারতের অন্যতম গর্ব
এর বিষয় হলো প্রাচীন সভ্যতা, সংস্কৃতি নিদর্শন। প্রাচীন
নিদর্শন, সভ্যতা বহন করে যুগের পর যুগ কালের ইতিহাস. যুগ
যুগ ধরে যারা দেশের প্রাচীন সভ্যতা কে নিজে দের কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, নিজেদের জীবনের শেষ টুকু ও উজার করে দিয়ে বিলীন
হয় প্রদীপের সলতের মত এই দেশ জন জাতি সমাজের জন্যে বলতে পারেন তারা এর প্রতিদান
হিসাবে কি পেয়েছে? উত্তর জানা আছে কি কারো? মনে হয় নেই।
বাউল শব্দটি উন্মাদ বা পাগল অর্থে
ব্যবহার লক্ষ করা যায় মধ্য যুগের বাংলা কাব্যতে। যতদূর জানা যায় সুলতান গিয়াস
উদ্দিন আজম শাহের রাজত্ব কালে (1393_1409 খ্রিস্টাব্দ), শাহ সগীর ইউসুফ জোলেখা কাব্য রচনা করেন, এই কাব্যে তিনি প্রথম বাউর, বাউল, আউল শব্দ ব্যবহার করেন।
যেমন " বিরহে তাপিত কমপিত হৃদয় উতর লোর এ কেশ / এলিন বয়ান কাতর
নয়ান আউ ল বাউল বেশ"। শাহ মুহাম্মদ সগীরের সময় বাউলদের কে অস্বাভাবিক, জাত কুল হীন নিচু স্তরের মানুষ হিসেবে বিবেচনা
করা হতো। সমাজের চোখে বাউল দের হীন এবং স্বভাবে উন্মাদ ব্যক্তিকে বাউল নামে
অভিহিত করা হতো। তার আরো ও পরে মালাধর বসু তার শ্রী কৃষ্ণ বিজয় কাব্যে (রচনা কাল
1473 _1480 খ্রিস্টাব্দ) বাউল শব্দটি উলঙ্গ যুক্ত বা
পাগলা অর্থে ব্যবহার করেছেন। যেমন "মুকুল মাথার চুল, নংটা যেনো বাউল" সত্যই তো উন্মাদ না হলে কি
সিদ্ধি লাভ করা যায়, তাই বাউলরা ছিলেন মাটির টানে, মাটির গানে উন্মাদ. যেমন উন্মাদ ছিলেন কৃষ্ণ
প্রেমে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু/যেমন পাগল ছিলেন মা কালীর একমাত্র সন্তান, এ নামের সার্থকতা কতোটা গভীর তা উপলব্ধি করার
মতো যথেষ্ট প্রমাণ জনমানসে সম্মুখে তা বলবার আক্ষেপ রাখে না।
বাউল শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন
মতামত রয়েছে জন মহলে. কেউ বলেন বাতুল থেকে বাউল এর উৎপত্তি। করো মতে
"বজরী" থেকে কিংবা বজ্রকুল থেকে বাউল শব্দটি এসেছে।
আবার কারো মতে "আউল শব্দ টি
থেকে বাউল শব্দ টি এসেছে, তবে ইতিহাস বিদদের মতে
সতেরো শতকে বাংলা দেশে বাউল দের উদ্ভব হয়। এই মত বাদের প্রবক্তা হলেন আউল চাঁদ ও
মাধব বিবি. বীরভদ্র নামক জনৈক এটিকে জনপ্রিয়তায় রূপ দেন। এই সম্প্রদায়, আল্লাহ, ইশ্বর আল্লা কিংবা সৃষ্টি কর্তাকে নিরাকার মানতে নারাজ. ইশ্বর নামক সত্তা কে
তারা পূর্ণ রূপ দান করেন। শাহ আব্দুল করিম বলেছেন "আমি কখনোই আসমানী খোদা কে
মান্য করি না, মানুষের মধ্যে যে খোদা বিরাজমান, আমি তার চরণ এ পূজা দেই।" তারা মনে প্রাণে
বিশ্বাস করে, মানবের মাঝে সৃষ্টি কর্তা বিরাজমান। মানব সেবা
হোল ঈশ্বরসেবা। ড:আহমেদ শরীফ তার বাউল তত্ব গ্রন্থে লিখেছেন বিভিন্ন মতবাদের
মিশ্রণ এ গড়ে উঠেছে বাউল মতবাদ. তাই সর্ব ধর্ম মিলনে গড়ে উঠেছে বাউল সম্প্রদায়।
পরম সহিষ্ণুতা অসাম্প্রদায়িক গ্রহণশীলতা বোধের বিচিত্রতা মনে ব্যাপকতা ও উদার
সদাশয়ের বৈশিষ্ট্য।
প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বাউল মতবাদটি মানস পুরান। দেহের আধারে যে চেতনা
বিরাজ করছে, সেই আত্মা। বাউলরা ভাববাদী না বস্তুবাদী এর
অনেক সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ শক্তি নাথ এর বস্তুবাদী বাউল বইটির মধ্যে আলোকপাত করা হয়েছে. সাধারণ সমাজে এর ধারণা
এখনো প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে যে বাউল মানেই ভাব বাদী এক দন্ডlয়মান ব্যক্তি। পূর্বে থেকে এই ধারণা আজও
প্রান্তিক সমাজে কল্পিত হয়ে আসছে। কিন্তু ফকির লালন, কবির গোসাঁই, লাল শশী, দুদ্দুশাহ, জালাল উদ্দিন খাঁ, কিংবা আব্দুল করিম এর গানে বস্তুবাদী ভাবনা ফিরে এসেছে। তবে যাই হোক না কেনো, বাউলরা সাম্প্রদায়িক বিভাজন এ বিশ্বাসী নন। তাই
পরমত, সহিষ্ণুতা, অসাম্প্রদায়িক, গ্রহণ শীল , বোধের বিচিত্রতা,
মনে উদার সদাশয়তা, এদের বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে মুসলিম বাউল দের
হিন্দু গুরু বা হিন্দু বাউল দের মুসলিম গুরু এমনে প্রায় দেখা যায়। বাউল তত্ব তে
রয়েছে কয়েক ধাপ আদর্শ, গুরুবাদ, শাস্ত্রহীন, সাধনা, দেহতত্ব, মনের মানুষ, রূপ স্বরূপ তত্ব হচ্ছে, বাউল তত্বর আদর্শ সমুহ।
বাউল সম্বন্ধে ধারণা করা হয় যে সহ
জিয়া বৌদ্ধ মতাদর্শ ও শৈব তান্ত্রিক ভাবনার সংমিশ্রণ এ বাউল ধর্মের বিকাশ ঘটেছিল.
গোড়ার দিকে এই ধর্ম ছিল পরমাত্মা ও জীবlত্মlর বিশ্বাস। ধ্যান এর ভিতর দিয়ে পরমাত্মার সাথে
মিলিত হাওয়া যোগচারের সাথে যুক্ত হয়েছিল বামাচারী সাধনা। 1200 খ্রিস্টাব্দের পরে
বঙ্গ দেশে মুসলমান সুফি সাধকের সংস্পর্শে আসেন বাউলরা, এই সুফিবাদী দের দ্বারাই বাংলায় বাউলরা
প্রভাবিত হয়েছিল।
গ্রাম বাংলার মাটিতে আত্মিক, একাত্মতায় মিলে মিশে থাকার নাম হল বাউল। এটি
একটি বিশেষ লোকাচার ও ধর্মমত। বাউল একটি সম্প্রদায় গোষ্ঠী. সম্প্রদায় ভেদে
ধর্মীয় উপাসনার একটি অংশ বিশেষ. অতি প্রাচীন কাল থেকে বাউল শব্দটির প্রচলন লক্ষ
করা যায়. আনুমানিক সপ্তদশ শতক হতে বাউল শব্দটির ব্যবহার
ছিল বলে জানা যায়। চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থের আদি লীলা অংশে এর ব্যবহার সর্ব প্রথম
লক্ষ করা যায়। এই গ্রন্থে চৈতন্য মহাপ্রভু, রামানন্দ ও সনাতন গোস্বামীর নিকট কৃষ্ণ বিরহ বিধূর নিজেকে মহা বাউল হিসাবে
আখ্যায়িত করেছেন। সেই থেকে বাউল শব্দের উৎপত্তির কথা জানা যায়. সাম্প্রদায়িক শাখা
প্রশাখায় বিভক্ত তাদের কাজ হল গানের মধ্যে দিয়ে প্রেম নিবেদন করা। তাদের গানের
মুখ্য চরিত্র হল বাস্তব বোধ. গ্রাম বাংলার চাল চিত্র, সংস্কৃতি, সাধারণ খেতে খাওয়া শ্রমিক, ভিক্ষারি, জেলে, মুটে মজদুর নিম্ন বর্ণের মানব সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব চিত্র
গুলোকে গানের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন. দৈনন্দিন জীবনের বিবর্তন এর ধারা
কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বাউল গান. তারা বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে সাদামাটা কৃচ্ছ সাধনার জীবনে একতারা
বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে ঘুরে
বেড়ানোই তাদের অভ্যাস। এই ভাবে এই ভাবে যুগের পর যুগ মাটির টানে, জীবনের গান গেয়ে প্রাচীন সংস্কৃতি কে বাঁচিয়ে
রেখেছেন নিজেদের জীবনের বিনিময়ে।
বাউল এর ভাষায় আত্মl কে উপলব্ধি করার নাম হল জীবন দর্শন। এই মানব দেহ
হোল পবিত্র তাই দেহ কে পবিত্র জ্ঞান মনে করা হয়। এরা হলেন অসাম্প্রদায়িক ধর্ম সাধক, সর্বদা ধর্মীয়, মানব প্রীতি, মানবতার বাণী প্রচার করেন। এরা মনে করেন আত্ম এক
এবং পরমেশ্বর। আত্মlর উপলদ্ধি হল পরম শুচিতা বা জ্ঞান। এই
সম্প্রদায় পুঁথিগত বিদ্যায় শিক্ষিত না হলে ও গভীর জ্ঞানের আত্ম উপলব্ধির কথা
প্রচার করেন। শুধু মাত্র পুঁথি গত বিদ্যা যে মানুষ কে প্রকৃত জ্ঞানী করে তোলে এই
ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পারিপার্শ্বিক জগত কে যারা সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে না আত্মা
দিয়ে, তারা খাতা কলমে শিক্ষিত হয়ে ও মহামূর্খতার
অন্যতম বাস্তব রূপ।
2005 সালে UNESKO বিশ্বের মৌখিক দৃশ্যমান ঐতিহ্য সমূহের মাঝে বাউল গানকে
অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসাবে ঘোষণা
করেন। লালন ফকি র সাঁইয়ের গানের মধ্যে দিয়ে এই বাউল সম্প্রদায় বাউল হিসাবে
পরিচিতি লাভ করেন। বাংলাদেশের কুষ্টিয়া,পাবনা, এলাকা থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ এর বীরভূম, বোলপুর জয় দেবের কেন্দলী পর্যন্ত বাউল দের
বিস্তৃতি লক্ষ করা যায়। এই সম্প্রদায় দুই টি শ্রেণী তে বিভক্ত যথা.... গৃহী ও
সন্ন্যাসী। তারা প্রাচীন পন্থী ধারায় বিশ্বাসী, তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে প্রাচীন ধারা সভ্যতার হোল একমাত্র সমাজ
চিত্রর মূল রেখাপট তা উপেক্ষা করে
সমাজের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গঠন হতে পারে না। তাই এই প্রাচীন সংস্কৃতির অন্যতম বাহক
সমাজে তাদের প্রভাব বিস্তার করেছেন প্রেম বিলিয়ে। কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায়
হারিয়ে যেতে বসেছে এমনে বহু সভ্যতা সংস্কৃতি নিজেদের জীবন ও পরিবার কে বাঁচানোর
তাগিদে. সরকারি সাহায্য মেলেনি মোদ্দা কথা দেশের অর্থ সম্পদ আকছার চুরি, নষ্ট হলে ও ভাবেনি সভ্যতা, সংস্কৃতির কথা, ভাবেনি সেই সব মানুষগুলোর কথা যারা শুধু দুই বেলা দুই মুঠো অন্নর জন্যে এই
সভ্যতা সংস্কৃতিগুলি কে বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সমাজের
বুকে। এই ভেবে কষ্ট পায় যে এই প্রাচীন ঐতিহ্য গুলি হারিয়ে গেলে সমাজ, দেশের চরিত্র নষ্ট হয়ে যাবে অথচ যারা দেশের
রক্ষা কর্তা তারা নিজেরাই আজ ভক্ষক হয়ে উঠেছে, মেতে উঠেছে নোংরা রাজনীতি নিয়ে শকুনি মামার পাষা খেলায়, প্রতি নিয়ত তাদের হাত পাকিয়ে নিচ্ছে নোংরা কাদা
পার্কে। এর ফল স্বরূপ হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম
বাংলার প্রাণের সাথে জড়িয়ে থাকা ঝুমুর, টপ্পা, বাউল, লোকসঙ্গীত,ভাদু,টুসু,ভাটিয়ালী মত জনপ্রিয় প্রাচীন গানগুলি।
বাউল বিভিন্ন ধরণের হয় যেমন, লোক সঙ্গীত, বাংলা ব্যান্ড, রক, হিপপ, বাউল, ভাটিয়ালী, ভাগুয়াইয়া, বোলান গান, ধামাইল, গম্ভীরা, চটকা গান, কবি গানের সমষ্টি গত রূপ এছাড়া শ্রী কৃষ্ণ কীর্তন, শ্যামা সঙ্গীত, ইত্যাদি গান।
প্রাচীন পন্থী ধারায় বিশ্বাসী এই
সম্প্রদায় গুরুর আখড়ায় তারা গান সাধনা করেন। প্রাচীন ইতিহাস হতে আমরা জানতে পারি
বৈদিক সমাজে ও ক্ষত্রিয়রা এই ভাবে গুরুর আলয়ে শিক্ষা লাভ করতেন. তবে বাউল
সম্প্রদায় কে বাঁচিয়ে রাখতে দীর্ঘদিন যাবৎ বীরভূমে বিশ্ব বিখ্যাত জয়দেব বাউল মেলা
চালু করা হয়,দূর দূরত্ব থেকে আউল বাউল সম্প্রদায় আসেন এবং নিজেদের কে উজাড় করে
মেলার সর্বlঙ্গীন সাফল্যর প্রয়াস করেন। এই প্রয়াস সত্যই এই
সম্প্রদায়ের উজ্জীবিত করার দীর্ঘ প্রয়াস, এই মেলার মধ্যে দিয়ে প্রাচীন ধারাকে চিরতরে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস সর্বlঙ্গিন প্রশংসার দাবী রাখে। আরো সচেতন হতে হবে
উদ্যোক্তা ও সরকারের।
একটি কথা খুব পরিষ্কার করে বলা
ভালো যে এই সম্প্রদায় গান গেয়ে ভিক্ষা করে নিজেদের ও পরিবারের মুখে অন্ন তুলে
দেবার চেষ্টা করেন তেমনি এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার এক মাত্র অবলম্বন, শুধু ভালোবেসে মাটির টানে জীবনের গানকে আপন করে
নেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। কোথায় বলে পেটের ক্ষুধা বাগ মানে না, তাই পেটের ক্ষুধা মেটাতে সাধনা কে বিসর্জন দিয়ে
কর্মের সন্ধানে বেরিয়ে যেতে হয় দূর দূরlন্তরে. সঙ্গীত হোল
সাধনার ফল, একে প্রতি নিয়ত চর্চা করতে হয়। কিন্তু পরিবারের
কথা ভেবে অনেক জনপ্রিয় শিল্পী, বহু প্রতিভাবানেরা আজ পথ
ভোলা পথিক হয়ে ঘুরে বেড়ায় অন্ধগলির চোরl বাঁকে, কেউ বা হlতে নিয়েছে বন্ধুক, যে হাতের আঙুল দিয়ে একতারায় সুর তুলতেl সেই হাত দিয়ে জীবন কেড়ে নিয়েছে। এই ভাবে
সহযোগিতার হাত না পেয়ে ভারতে বহু প্রতিভা নষ্ট হয়ে যায়। চোখের তারার স্বপ্নগুলো
পদদলিত হতে থাকে জীবন বাঁচানোর লড়াইয়ের তাগিদে, জীবনের কষ্টlর্জিত স্বপ্ন গুলোকে পায়ের তলায় পিষে ফেলে। তাই
যত দ্রুত সম্ভব এই সভ্যতা সংস্কৃতি গুলিকে সংরক্ষণ করার উপায় খুঁজে বার করে সম্ভlব্য ব্যবস্থা গ্রহন করা।
==================
বটু কৃষ্ণ হালদার
327/3 M. G road Rosy apperment
KABARDANGA KOLKATA 700104
PH 9830420904 8617255958