প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

অ ণু গ ল্প
ছোট বয়সে রাজগৃহ বা রাজগীড় ভ্রমণও কত রাজকীয় ছিল তা
ভাবতে বসলে এক অপার্থিব বিস্ময় কাজ করে। অন্য শিউলি ফোটা ভোরের মাঝে এক বিশেষ দিন
হয়ে ধরা দিল ক্লাস টেনের সব সহপাঠীর সঙ্গে এক বাসে সেই প্রথম একলা শহর ছাড়িয়ে
দূরের পথে যাওয়া। জানলা দিয়ে রোজের স্কুল বাসের পার হওয়া দৃশ্যের বদলে এক অনামী
পথে অপ্রত্যাশিত আনন্দের মুখোমুখি হওয়া। পিঠে কোন স্কুল ব্যাগ নেই, দিদিমণিরা
সঙ্গে আছেন তবু কোন পড়া ধরা নেই। ইচ্ছে মতো খিলখিলিয়ে হাসলেও থামিয়ে দেওয়া নেই।
অচেনা পথে এক অনাবিল কৈশোর উদযাপন। জনপদের পরিবর্তে পাহাড়ের আষ্টেপৃষ্ঠের বাঁধনে
এক ভূমি। প্রথম পাহাড়ি পথে রোপওয়ে চাপার রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা। পাশাপাশি নালন্দাকেও
ছুঁয়ে দেখা। এক সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অকালমৃত্যু দেখে মনটা খুব খারাপ
হয়ে গেল। বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষ ও প্যাগোডা দর্শন। পাবাপুরীর জৈন মন্দিরের জলে
শতদলের উজ্জ্বল হাস্যমুখ মুগ্ধ করেছিল। এবার হোটেলে ফিরে বিশ্রাম ও রাতের আহার।
খিদেটা উসকে উঠতেই মেনুর খোঁজ করলাম। দুপুরের খাবারে ছিল ডিমের ডালনা ও আলু-পটলের
তরকারি। রাতের খাবারে শুনলাম পাঁঠা হয়েছে, আহা রসনার উলম্ফন শুরু হল। তবে হ্যাংলামি তো করা যাবে না, অতএব ধৈর্য্যের পরীক্ষা দাও। অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ,
কলাপাতায় শুরু হল পরিবেশন। বাড়ির বাইরে এমন বাঙালি রান্না, মনটা ভরিয়ে তুলল।
ঝুরঝুরে ভাত, লেবু সহযোগে মুগডাল, আলুভাজা পাতে পড়তেই অপেক্ষা করে রইলাম সেই
বিশেষ পদের জন্য। অবশেষে লালচে ঝোল পরিবৃত হয়ে সে গামলা এল। কিন্তু একি! পাতে পড়ল
এঁচোড়।
এরই জন্য এত সাধ্য সাধনা, এত প্রস্তুতি। আমার হতাশ ভাব দেখে রান্নার ঠাকুর বলল,-"মু তো কইছিলাম গাছো পাঁঠা।"
বেড়ানোর শেষে বাড়ি ফিরেই বাবাকে বলেছিলাম, "আজ মাংস এনো, খাব।"
"কেন? এ ক'দিন জোটেনি?"
আমি আমার হাসি লুকিয়ে বললাম- "জুটেছিল, গাছো পাঁঠা।"
![]() |
মুদ্রিত সংখ্যার প্রচ্ছদ |
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন