আমার মেয়ে
আমার মেয়ে সরস্বতী
আধপেটে সে কাটিয়ে রাতি
রোজ সে ভোরে ওঠে,
মেলা খেলা পুজো পার্বণ
উৎসব কিম্বা সেলিব্রেশন
তার কাছে নয়তো নতুন মোটে।
আমার মেয়ে সরস্বতী
সকালে না উঠলে ক্ষতি
গাছের ফুল হবে সবই সাবাড়,
সবার আগে ফুল তুলে
বাজারে না পৌঁছালে
সারাদিনেও জুটবে না তার খাবার।
আমার মেয়ে সরস্বতী
বয়স যদিও নয় কমতি
শুকিয়ে গেছে যৌবনেরই ফুল,
সবাই দেয় পুষ্পাঞ্জলি
মেয়ের মাথায় ফুলের ডালি
হাঁক পাড়ে সে "ফুল নেবে গো ফুল?"
আমার মেয়ে সরস্বতী
ছিল যখন সে একরত্তি
বাপ মরেছে কঠিন অসুখে,
পড়ার পাঠ চুকিয়ে দিয়ে
মায়ের দায় কাঁধে নিয়ে
দিন কাটে তার চরম দুঃখ-শোকে।
আমার মেয়ে সরস্বতী
নিভে গেছে তার যৌবন-বাতি
বয়সটা তার যদিও পঁচিশ পার,
সবাই যখন প্রেম-দিবসে
খুশির ভেলায় ভাসে
সরস্বতী তখন যন্ত্রণায় ছারখার !
-------------------------------------------------------
নারী
পুরুষের সাম্রাজ্যে নারী রূপে আমি জীবন্ত কঙ্কাল,
তারই ঔরসে জারিত মৃত্যুপুরীর স্তূপীকৃত জঞ্জাল !
কখনো স্নেহের নামে পিতৃতন্ত্রে কন্যারূপিনী চির অবরুদ্ধা,
সুখহীন দুঃখের স্রোতে ভেসে আসা এ যুগের অভিশপ্তা !
পতিদেবতার শয়নকক্ষে হৃদয় আমার সতত সমর্পিতা,
ভাগ্যের পরিহাসে জীবনের প্রতিপদে আমি চরম লাঞ্ছিতা !
স্নিগ্ধ বাতাসের মতো করেছি শীতল পুরুষের তাপিত মন,
প্রেম সিঞ্চনে থামিয়েছি বিকৃত কামনার কত ঝড়ো যৌবন !
জননী রূপে জন্ম দিয়েছি আছে যত জগতের সন্তান,
মনে রাখেনি স্বার্থপর সমাজ পেয়েছি শুধুই অসম্মান !
নারীত্ব ও সতীত্বের দ্বন্দ্বে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে এই প্রাণ,
পোড়া কপালে জুটেছে শুধুই লাঞ্ছনা-গঞ্জনা-অপমান !
জ্ঞান মশালে জ্বালবো এবার নিজেদের জীবন-বাতি,
সাজবো রণ রঙ্গিনী রূপে অবাক হয়ে দেখবে পুরুষ জাতি।
----------------------------------------------------
তপন কুমার মাজি, কোর্টমোড়, আসানসোল।
-------------------------------------------------------