Featured Post

প্রচ্ছদ সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

ছবি
সম্পাদকীয়  সূচিপত্র

ছোটগল্প ।। গিরগিটি ।। উত্তম চক্রবর্তী

গিরগিটি

উত্তম চক্রবর্তী

লোকটাকে দেখে খুব চেনা চেনা লাগছিল আমার কোথায় দেখেছি কোথায় দেখেছি ভাবতে ভাবতেই সে আমার পাশ কাটিয়ে চলে যায় বড় রাস্তার দিকে আমি গলির ভিতরে যেতে যেতে চিন্তা করছিলাম কে এই লোকটা, ওকে আগে আমি কোথায় যেন দেখেছি সন্তু ওর বাড়ির দরজাতেই দাঁড়িয়েছিল আমি এখন ওর বাড়িতেই যাচ্ছি নোট আনতে সন্তুকে দেখে আমি ওকেই জিজ্ঞাসা করলাম,   'হ্যাঁরে সন্তু, এইমাত্র যে লোকটা এই গলি দিয়ে বের হল, ওই যে ওই যে পিছনটা দেখা যাচ্ছে রে, ওই লোকটা কে রে, চিনিস ? কোথায় যেন দেখেছি দেখেছি মনে হচ্ছে, কিন্তু মনে পড়ছে না'

সন্তু ঘাড় উঁচু করে দেখে বলল, 'আরে ও তো আমার ছোটো মামা জগাই মণ্ডল। কাল রাতে এসেছে তোদের কৃষ্ণ নগরের লোক ওখানেই থাকে নীল দলের খুব বড় একজন লিডার মানুষ তুই হয়ত মামাকে কোন মিটিং মিছিলে দেখে থাকবি'  আমি চুপ করে ভাবতে থাকলাম, হবে হয়ত আমার বাড়ি কৃষ্ণ নগরে দর্জি পাড়া অঞ্চলে। কিন্তু আমি কলকাতায় মেস বাড়িতে থেকে এখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এস সি করছি। মাসে একবার কৃষ্ণ নগরে বাড়িতে যাই। হয়ত ওনাকে দেখেছি কোথাও।

সন্তুর বাড়িতে ছিলাম প্রায় ঘণ্টা খানেক। আগামী সপ্তাহে পরীক্ষা। নোট গুলি টুকে নিয়ে বের হবার সময় আবার সেই লোকটার সাথে দেখা। আমি রাস্তায় নামার পর গলির মুখেই  আমাকে একবার দেখে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন সন্তুর মামা ওদের বাড়িতেএবার ভাল করে দেখেই আমার পরিষ্কার মনে পড়ে গেল, লোকটাকে আমি অনেকবার লাল পার্টির মিটিঙে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতে দেখেছিকৃষ্ণ নগরের একজন নামকরা বামপন্থী নেতা ছিলেন উনি, সবাই এঁকে চেনে। কিন্তু সন্তু বলল উনি নাকি নীল পার্টির নেতা। তাহলে কি সন্তু সঠিক জানেনা যে উনি কোন পার্টি করেন, নাকি লোকটা ওদের মিথ্যা কথা বলেছে ? কিন্তু মিথ্যাই বা বলবে কেন ?

পরদিন  ইউনিভার্সিটিতে সন্তুকে জিজ্ঞাসা করলাম কথাটা। সন্তু বেশ জোরের সাথে বলল, 'তুই নিশ্চয়ই ভুল বলছিস রাজামামা নীল পার্টি করেন সবাই জানে। লাল পার্টির মিটিঙে ওঁকে দেখবি কী করে ? মামার সাথে দেখা করতে কত নীল পার্টির লোক আমাদের বাড়িতে আসে জানিস। আমাদের বড় রাস্তার মোড়ে মামা অনেকবার নীল পার্টির হয়ে বক্তৃতা দিয়েছে আমি নিজে দেখেছি। এই এলাকার লোকেরাও ওঁকে চেনে নদীয়ার নীল পার্টির একজন বড় নেতা বলে।'

পরীক্ষার পড় বাড়ি গেলাম মনে অনেক আনন্দ নিয়ে। কিন্তু বাড়িতে গিয়েই শুনলাম কাল নাকি কৃষ্ণ নগরে একজন লাল পার্টির নেতা খুন হয়েছে, পরিস্থিতি খুব থমথমে। আমি পথঘাট শান্ত, বেশিরভাগ দোকান পাট বন্ধ দেখে কিছু একটা সন্দেহ করেছিলাম। মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'লোকটার নাম কি গো ? আমি কি চিনি তাকে ?'

মা জবাব দিলেন, 'বোধ হয় চিনিস। আরে ওই জগাই মণ্ডলরে। ও নাকি কলকাতায় গিয়ে নীল পার্টির হয়ে কাজ করে আর এখানে লাল পার্টির নেতা সেজে ঘুরে বেড়ায়। একনম্বরের সুবিধাবাদী লোক। ওঁর এই দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার কথা বোধহয় জানা জানি হয়ে গেছে। ব্যাস, ওদের মধ্যেই কোন এক পার্টি থেকে চিরতরে সরিয়ে দিয়েছে লোকটাকে। এরকম লোকদের এই পরিনতিই হয়। ভাল হয়েছে। এতো বড় একটা ঘটনায় কেউ কিন্তু কোন সমবেদনা জানাচ্ছে না। পুলিশ এসে বাজারের মোড় থেকে লাশ তুলে নিয়ে চলে গেছে'

আমি মুখের ভাষা হাঁড়িয়ে ফেললাম আর ফিস  ফিস করে বললাম, 'ভগবান সন্তুর গিরগিটি মামার আত্মার শান্তি দিন।'

             ---------শেষ--------- 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল